TadantaChitra.Com | logo

১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ফায়ার সার্ভিসের রুদ্ধশ্বাস উদ্ধার অভিযান

প্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২২, ০৮:৪৫

ফায়ার সার্ভিসের রুদ্ধশ্বাস উদ্ধার অভিযান

২৭ ফেব্রুয়ারি গভীর রাত। ঘড়ির কাঁটায় তখন ০০-৪৫টা। নিয়ন্ত্রণ কক্ষে সংবাদ আসে অজ্ঞাত এক যুবক পড়ে গেছে ৪০ ফুট গভীরে। উদ্ধারে পাঠানো হয় সূত্রাপুর রেসকিউ ইউনিট। সিনিয়র স্টেশন অফিসার সাইফুলের নেতৃত্বে সূত্রাপুরের ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে সাহায্য চায় ঢাকা সদর দপ্তর। ডিএডি বজলুর রশিদের নেতৃত্বে স্টেশন অফিসার শহিদুল ইসলাম সুমনসহ ৬ জনের একটি উদ্ধারকারী দল রাত ০১-১৫ ঘটিকায় ছুটে যায় ঘটনাস্থলে।

ঘটনাস্থল পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়া ডিস্টিলারি রোডের (ধূপখোলা মাঠের পশ্চিম পাশে) একটি চারতলা বাড়ি। অ্যাম্বুলেন্সসহ সদর দপ্তরের রেসকিউ ইউনিটটি ঘটনাস্থলে পৌঁছে জানতে পারে, ৪ তলা ভবনের পাশে একটি ভয়েড স্পেস দিয়ে একজন যুবক নিচে পড়ে গেছেন। উদ্ধারকারীরা ভবনের ছাদে গিয়ে ঘুঁটঘুঁটে অন্ধকার সুড়ঙ্গে লাইটের আলো ফেলে অস্পষ্টভাবে দেখতে পান পড়ে থাকা যুবককে। চারটি ভবনের সংযোগস্থলে ৩ ফুট বাই ২ ফুটের অপ্রশস্ত ভয়েড স্পেসটি ওপর থেকে দেখলে মনে হয় মাটির নিচে চলে যাওয়া কোনো অন্ধকার সুড়ঙ্গ বা গর্ত। নিচে পড়ে থাকা ব্যক্তির তখনো চেতনা আছে, আহত অবস্থায় একটু গোঙরাচ্ছেন। উদ্ধারকারীদের প্রশ্নে রেসপন্স করতে পারছেন তিনি। উদ্ধারকারীদের কাছে নিশ্চিত হয় তার জীবিত থাকার বিষয়টি।

ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনীয় তথ্য জানার পর উদ্ধার কৌশল নির্ধারণ করা হয়। শুরু হয় শ্বাসরুদ্ধকর উদ্ধার অভিযান। ডিএডি বজলুর রশিদের নির্দেশনায় স্টেশন অফিসার শহিদুল ইসলাম সুমন দায়িত্ব বণ্টন করেন উদ্ধারকারীদের। চৌকস উদ্ধারকর্মী মুক্তারকে ব্রিদিং অ্যাপরেটাস পরিয়ে আর ফুলবডি হারনেস বেঁধে নামানো হয় অন্ধকার সুড়ঙ্গে। সাথে দেয়া হয় অতিরিক্ত আরেকটি ফুলবডি হারনেস। ওপর থেকে হারনেসের প্রান্ত ধরে রাখেন অপর উদ্ধারকর্মীরা। দুরন্ত সাহস আর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অন্ধকারের ভয়কে জয় করে সহকর্মীদের সহায়তায় মুক্তার পৌঁছে যান সুড়ঙ্গের শেষ প্রান্তে, আহত অবস্থায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে পড়ে থাকা যুবকের কাছে। উদ্ধারকর্মীকে কাছে পেয়ে বিচলিত যুবক বেঁচে থাকার আকুল আঁকুতি জানায়। তাকে অভয় বাণী শুনিয়ে ফায়ার ফাইটার মুক্তার সাথে নেয়া অতিরিক্ত ফুলবডি হারনেসে সুরক্ষিত করে বেঁধে ফেলে আহত ব্যক্তিকে। এবার ওপরে সংকেত পাঠান আহত ব্যক্তিকে টেনে তোলার।

সকলের সহযোগিতায় চারতলা থেকে পড়ে যাওয়া এবং সুড়ঙ্গের নিচে আটকে থাকা ‘সালমান’ নামের ২৪ বছরের সেই যুবককে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করে আনেন ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা। আহত ব্যক্তির অবশ্য তখন করুণ অবস্থা। তিনি কিভাবে সেখানে পড়লেন, কেন সেখানে এসেছিলেন, পড়ার পর তার অবস্থা কি হয়েছিল, তিনি কেমন অনুভব করেছেন, মৃত্যু ভয় তাকে তাড়িত করেছে কি না – এসব তথ্য শোনার চেয়ে তার জীবন রক্ষার জন্য তাকে হাসপাতালে পাঠানোকেই অধিক গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করেন উদ্ধারকর্মীরা। জীবন রক্ষার জন্য সাথে থাকা ফায়ার সার্ভিসের অ্যাম্বুলেন্সে করে সালমানকে পৌঁছে দেয়া হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।

উদ্ধারকাজ সম্পন্ন করে রাত ০২-২০ ঘটিকায় কর্মস্থলে ফিরে আসেন উদ্ধারকারীরা। তখনো ফুটতে শুরু করেনি ভোরের আলো। রাতের নিস্তব্ধতা আর অন্ধকারে নিঝুম চারপাশ। কিন্তু সেই নিস্তব্ধ অন্ধকারেও উদ্ধারকর্মীদের চেহারায় লেগে থাকলো সাফল্যের অপার্থিব আলো, জীবন বাঁচানোর অবর্ণনীয় আত্মতৃপ্তি।

অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ সাজ্জাদ হোসাইন এবং পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লে. কর্ণেল জিল্লুর রহমান উদ্ধার অভিযানের ভিডিও দেখে উদ্ধারকারীদের আন্তরিক অভিনন্দনে সিক্ত করেছেন।

২৭ ফেব্রুয়ারি রাত ৯-০০টায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জানা গেছে, উদ্ধারকৃত সালমানের কোমড়ের হাড় ভেঙে গেছে। তিনি বর্তমানে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। খবর-ফায়ার সার্ভিস মিডিয়া সেল।


যোগাযোগ

বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যলয়

কাব্যকস সুপার মার্কেট, ৩ ডি কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫।

মোবাইলঃ ০১৬২২৬৪৯৬১২, ০১৬০০০১৪০৪০

মেইলঃ tadantachitra93@gmail.com, tchitranews@gmail.com

সামাজিক যোগাযোগ

Web Design & Developed By
A

তদন্ত চিত্র কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েব সাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি।