TadantaChitra.Com | logo

২৩শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বিআইডব্লিউটিসি অনিয়মই যেখানে নিয়ম

প্রকাশিত : জুন ২৬, ২০১৮, ১৮:০০

বিআইডব্লিউটিসি অনিয়মই যেখানে নিয়ম

সুটার শুভ্রঃ অনিয়ম ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে রাষ্ট্রীয় সংস্থা বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্পোরেশন (বিআইডবিøউটিসি)। জনগুরুত্বপূর্ণ সেবাদানকারী বাণিজ্যিক এ প্রতিষ্ঠানটিকে স্বেচ্ছাচারিতা, ব্যক্তিগোষ্ঠীর স্বার্থ অন্বেষণ, কর্ম ফাঁকি, অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে পিয়ন থেকে শীর্ষ কর্মকর্তা পর্যন্ত। এসব কারণে প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে লোকসানের ভারে ন্যূজ হয়ে পড়েছে। ২০১১ সাল থেকে চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে একটু লাভের মুখ দেখতে শুরু করলেও পরবর্তী সময়ে সেটা আর ধরে রাখতে পারেনি। এ সময়ে প্রতিষ্ঠানের শৃংখলা প্রতিষ্ঠা, অপচয় রোধ, উৎপাদন ও সেবার মান বৃদ্ধি করে কাগজ কলমে বিগত ৪ বছরে ৫৮ কোটি টাকা লাভ দেখাতে পারলেও কিন্তু এর আগে পরে কোনো লাভ দেখাতে পারেনি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বিআইডব্লিউটিসি। বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলেও অনিয়ম ও দুর্নীতিবাজদের কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ গুণগত মানের হয় না। এসব অনিয়ম ও দুর্নীতিবাজদের কার্যক্রম কিছুদিন বন্ধ থাকলেও বর্তমানে তারা মাথাচাঁড়া দিয়ে উঠেছে। ফলে রাষ্ট্রীয় এ প্রতিষ্ঠানকে লাভজনক করা যাচ্ছে না। অনুসন্ধানে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
কর্মস্থলে অনুপস্থিতি, কাজ না করে ওভারটাইম বিল গ্রহণঃ
অফিসার ও কর্মচারীদের ন্যায়সঙ্গত দাবি আদায়ের নামে অফিসার্স ও কর্মচারী ইউনিয়ন অন্যায়কে প্রশ্রয়, অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করে। অধিকাংশ নেতৃবৃন্দ কর্মস্থলে উপস্থিত থাকেন না। নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয় ও ঘাটে অবস্থানরত অকেজো জাহাজে কর্মরত কর্মচারীগণ অধিকাংশ অনুপস্থিত থেকে বেতন ভাতা নিয়ে যান। কাজ না করে তারা ওভার টাইমের বিল গ্রহণ করেন। আবার এক শ্রেণীর কর্মচারী ইচ্ছে করে অলস জাহাজে পোস্টিং নিয়ে দীর্ঘদিন থাকতে চান। আঞ্চলিক কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা যথাসময় কর্মস্থলে উপস্থিত থাকেন না। অধিকাংশ নেতাকর্মী অফিসের কাজ না করে ইচ্ছামত আশা যাওয়া করেন। প্রয়োজন না থাকলেও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ইচ্ছামত পদস্থ করতে হয়। জাহাজে পোস্টিং নিতে তাদের টাকা দিতে হয়। ফেরি সার্ভিসে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালনরত ২ জন কর্মকর্তাকে বদলি করা হলে তারা ক্ষুব্ধ হন বলেও অভিযোগ রয়েছে। কর্তৃপক্ষের গ্রহণকৃত বদলির আদেশ বাতিলের জন্য তারা বিক্ষোভ মিছিল পর্যন্ত করেছে বলে জানা গেছে।
গাড়ি বুকিং জালিয়াতি, বাংকার গায়েব করে অর্থ আত্মসাৎঃ
পাটুরিয়া ও মাওয়া ফেরি সেক্টরে তাদের সৃষ্ট আনবুকড গাড়ি পারাপার, কন্টেইনার মুভারসহ বড় গাড়ির সাইজ হ্রাস করে ফেরি পারাপারের টিকেট প্রদান করা হয়। ২০১২ সালের ১৯ ডিসেম্বর ফেরিতে গাড়ি বুকিংয়ে জালিয়াতির একটি বিষয় হাতেনাতে ধরার বিষয়টি সংস্থার অডিট টিমের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এছাড়া চরজানাজাত প্রান্তিকের টার্মিনাল সুপারিন্টেন্ডেন্ট শেখ ফরিদ মিয়া মাওয়া অভিমুখী ফেরি রামশ্রীতে ৮টি বাসের টিকেট বুকিং দেন। এর মধ্যে ১টি বাসের যাত্রীসহ ভাড়া ২ হাজার ৫০ টাকা জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেন। ওই সুপারেন্টেন্ডেন্ট টিকেটের নথি অংশ বিক্রির মাধ্যমেও ইতিপূর্বে সরকারের অনেক টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অডিট টিমের প্রতিবেদনে জানা গেছে। অডিট টিম মাওয়া-চরজানাজাত ফেরি রুটে চলাচলরত ফেরিসমূহের ড্রাইভার ও মাস্টারের নিকট রক্ষিত জাহাজ কপি পরীক্ষাকালে দেখতে পান, ঘাট হতে চালানের মাধ্যমে জাহাজের কপির পরিবর্তে নথি কপি (মুরি অংশ) সরবরাহ করে বাস পারাপার করা হয়েছে। টার্মিনাল সুপারিন্টেন্ডেন্ট শেখ ফরিদ মিয়ার স্বাক্ষরিত মোট ২৩টি নথি কপির মাধ্যমে ২৩টি বাস পার করে ৪৭ হাজার ১৫০ টাকা আত্মসাৎ করা হয়। এ ব্যাপারে অডিট টিম চরজানাজাত ঘাটের সহ-ব্যবস্থাপক আবদুল বাতেন ও সংশ্লিষ্টদের কাছে টিকেটের নথি অংশ চাইলে তারা সরবরাহ করতে ব্যর্থ হন। টিকেট বই নম্বর ৩৪৮৮ এর নথি কপি তারা সরবরাহ করতে পারেননি। একটি বইয়ে মোট ৫০টি টিকেটে নথির কপি ৫০টি থাকে। এই হিসাবে মোট আত্মসাৎকৃত অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় ১ লাখ ২ হাজার ৫০০ টাকা। অডিট টিমের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে ২০১২ সালের ২০ ডিসেম্বর চরজানাজাত প্রান্তিকের টার্মিনাল সুপারেন্টেন্ডেন্টকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পাটুরিয়া সেক্টরে ফেরিতে তেল সরবরাহে ১৫ থেকে ২০টি বাংকার গায়েব করা হয়। এখান থেকে প্রতি মাসে গড়ে তেল চুরি হয় ১ কোটি টাকার বেশি। অনুরূপ মাওয়া ফেরি সেক্টরেও বাংকার গায়েব করে তেল চুরি হয় ১ কোটি টাকার বেশি। যে কমিটি ফুয়েল রেশনিং গ্রহণ করে, তারাই উলে­খযোগ্য পরিমাণ তেল বিক্রি করে। ৫ হাজার লিটার তেল রেশন উত্তোলন করে সরবরাহ করা হয় ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার লিটার। এভাবে ফেরি ও যাত্রী সেক্টর মিলিয়ে প্রতিমাসে তেল চুরি হয় ৩ থেকে সাড়ে ৩ কোটি টাকার মত। আন্তঃ আঞ্চলিক যাত্রী সার্ভিস, ঢাকা-বরিশাল-খুলনা রুটে পরিচালিত স্টিমার রকেটে দুই থেকে ৩টি বাংকার গায়েব করে ১১ হাজার লিটার এবং উপক‚লীয় যাত্রী সার্ভিসের শতকরা ৪০ ভাগ আয় চুরি হয়ে যায়। টিকেটবিহীন যাত্রী পরিবহন, বুকিং মালামালে সঠিক মূল্য নিয়ে কম মূল্যে বুকিং দেয়াসহ বিভিন্ন অনিয়ম রয়েছে। উপক‚লীয় রুটে যাত্রী সার্ভিসেও ২ থেকে ৩টি বাংকার গায়েব হয়। নগদ টাকায় মালামাল ক্রয়ের ক্ষেত্রে অনেক সময় চাহিদা না থাকলেও ভুয়া চাহিদা পত্র উপস্থাপন করা হয়। প্রচলিত এসব অনিয়ম ভাঙতে প্রশাসনিক অ্যাকশন চাপানো হলে নানামুখী প্রতিক্রিয়া আসে।


যোগাযোগ

বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যলয়

কাব্যকস সুপার মার্কেট, ৩ ডি কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫।

মোবাইলঃ ০১৬২২৬৪৯৬১২, ০১৬০০০১৪০৪০

মেইলঃ tadantachitra93@gmail.com, tchitranews@gmail.com

সামাজিক যোগাযোগ

Web Design & Developed By
A

তদন্ত চিত্র কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েব সাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি।