TadantaChitra.Com | logo

২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

একখন্ড ভিটে বাড়িই মূল পুঁজি মাহবুবের বহুমুখী প্রতারণা

প্রকাশিত : জুলাই ২৭, ২০১৮, ১৭:০৮

একখন্ড ভিটে বাড়িই মূল পুঁজি মাহবুবের বহুমুখী প্রতারণা

সাফ কথা: পল্লবীতে একখন্ড ভিটে বাড়িকে পুঁজি করেই বহুমুখী প্রতারণার ফাঁদ পেতে বসেছেন জনৈক মাহবুব হাসান। পল্লবীর ১১ নম্বর সেকশনের ৬ পলাশনগরে তার বাসা। বাবার রেখে যাওয়া সাড়ে তিন কাঠা ভিটে বাড়ি এখন তার হাতিয়ার। কখনও বাড়ির রান্নাঘরসহ দুই রুম বন্ধক রেখে, কখনও গোটা বাড়ি বিক্রির নামে আবার কখনও বা বায়নাপত্র সম্পাদনের নামে বিভিন্ন জন থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন তিনি। বাড়িকে ঘিরেই একের পর এক আইনি জটিলতা সৃষ্টিসহ জিডি, মামলা, অভিযোগ পাল্টা অভিযোগের সূত্রপাত ঘটাচ্ছেন। হয়রানি করছেন বহুজনকে। সীমিত মূল্যে কিস্তি সুবিধায় বাড়ি বিক্রির কথা বলে সহজ সরল মানুষজন থেকে লাখ লাখ টাকা হাতানো হয়েছে অভিনব কায়দা কৌশলে। স্বনামে বেনামে ডান হাতে বাম হাতে সহি স্বাক্ষর দিয়েই মাহবুব টাকার বিপরীতে বায়নানামার স্ট্যাম্প করে দিয়েছেন। একইসঙ্গে তিনি বন্ধকও দিয়েছেন কয়েকজনের কাছে। এসব ব্যাপারে প্রতিবাদ জানালে, বায়না-বন্ধকের টাকা ফেরত চাইতে গেলেই নানারকম হুমকি ধমকি আর জিডি-মামলার ফাঁদে ফেলে তাদের বিতাড়িত করেছেন। মাহবুবের বহুমুখী প্রতারণার সর্বশেষ শিকার হয়েছেন পল্লবী থানা যুবলীগের সাধারন সম্পাদক মোঃ জুয়েল রানা। ফ্ল্যাট বন্ধকের নামে, বাড়ি বন্ধকের নামে দফায় দফায় টাকা নেওয়ার পর এবার তার কাছে বাড়ি বিক্রির প্রস্তাব দিয়ে ১২ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন মাহবুব হাসান। জনসম্মুখে টাকা নিয়ে বায়নানামার স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে এখন উল্টো তার নামেই মামলা হয়রানি শুরু করেছেন। অন্যদিকে জুয়েল রানার বায়নাকৃত ভিটের জায়গা গোপনে নিজ স্ত্রী লিপির নামে লিখে দিয়েছেন মাহবুব। এখন সেই লিপি একের পর এক অভিযোগ তুলে, মিথ্যা হয়রানির মামলা ঠুকে জুয়েল রানাকে তাড়িয়ে বেড়ানোর ফন্দিফিকির চালিয়ে যাচ্ছেন। থানা, পুলিশ, আদালত ঘুরে মিথ্যা মামলায় সুবিধা করতে না পারায় এবার শীর্ষ সন্ত্রাসীর মাধ্যমে দফারফার পথ খুঁজছেন মাহবুব। ইতিমধ্যেই মাহবুবের গডফাদার হিসেবে চিহ্নিত শীর্ষ সন্ত্রাসী সাহাদাৎ মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জুয়েল রানাকে কয়েক দফা হুমকি দিয়েছে। টেক্সট ম্যাসেজের মাধ্যমে মাহবুবের কাছে পাওনা টাকার দাবি ছেড়ে সরে দাঁড়াতে বলা হয়েছে জুয়েল রানাকে। অন্যথায় কঠিন মাসুল দিতে হবে বলেও হুমকি দিয়েছে সাহাদাৎ। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পল্লবী ১১ নম্বর সেকশনের পলাশনগর ৬ নম্বর হোল্ডিংয়ের মৃত এম এ মালেক সরকারের ছেলে মাহবুব হাসান বিপদগ্রস্ত অবস্থায় প্রতিবেশী জুয়েল রানার সরনাপন্ন হন। নিজের পাঁচ দশমিক ৩৩ শতাংশ ভিটেবাড়ি বিক্রির প্রস্তাব দিয়ে তাৎক্ষনিকভাবেই ১২ লাখ টাকা দাবি করেন মাহবুব। তিনি জানান, তিন মাসের মধ্যে এ টাকা পরিশোধ করতে পারলে আমাকে ভিটেটুকু ফেরত দিতে হবে, অন্যথায় উল্লিেখত সময়ের মধ্যে আমি বাড়িটি রেজিস্ট্রি করে দিবো। এ ব্যাপারে স্থানীয় বাসিন্দাদের উপস্থিতিতে স্ট্যাম্পের মাধমে বায়নাপত্রে স্বাক্ষরও করেন তিনি। কিন্তু এ বায়নানামার পর পরই তিনি দক্ষিণখান এলাকার এক ব্যবসায়ি এবং মিরপুর এলাকার আরো দুজনের কাছে একই বাড়ি বন্ধক ও বিক্রির নামে পৃথক পৃথক বায়না সম্পাদন করেন। তাদের কাছ থেকেও তিনি প্রায় ৬০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মোটা অঙ্কের টাকা পয়সা দিয়ে বায়নাপত্র সম্পাদনকারী লোকজন দফায় দফায় যোগাযোগ করেও মাহবুব হাসানের সন্ধান পেতে ব্যর্থ হয় এবং তারা টাকা বা জায়গাটুকু বুঝে পাওয়ার নিমিত্তে বিভিন্ন মহলে ধর্ণা দিয়ে বেড়াচ্ছেন। বায়না সম্পাদনকারীদের মধ্যে অন্যতম জুয়েল রানা স্থানীয় প্লট মালিকদের এসোসিয়েশনে অভিযোগ দিয়েও কোনো সুরাহা পাচ্ছেন না। পলাশনগর প্লট মালিক সমিতির সভাপতি জানান, জুয়েল রানার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পর পর তিন দফা নোটিশ পাঠিয়েও মাহবুব হাসানের সন্ধান পাওয়া যায়নি। তিনি স্বপরিবারে শ্বশুর বাড়ি এলাকায় অবস্থান করেন বলে শোনা গেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মাহবুব বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা আত্মসাত করেছেন, তার এ বাড়ির মতো তিন বাড়ি লিখে দিলেও সেসব পাওনা পরিশোধ হবে না। সুতরাং বাড়িঘর পরিত্যক্ত অবস্থা ফেলে রেখে স্বপরিবারে পালিয়ে গেছেন তিনি। সরেজমিনে পলাশনগর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রাজউকের অনুমোদনবিহীন নির্মিত দোতলা বাড়িটি ভাঙ্গাচুরা পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। দেয়ালের চারপাশেই গজিয়ে উঠেছে অসংখ্য গাছপালা, লতাগুলা। বিল্ডিংয়ের আস্তর, ইট, প্লাস্টার খসে পড়ে পড়ে রীতিমত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে ভবনটি। ইতিমধ্যেই ডেসকো ও তিতাস গ্যাস কোম্পানি ওই বাড়ির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। বিছিন্ন করা হয়েছে ওয়াসার পানির লাইনও। এ অবস্থায়ও মাহবুব হাসান তিন চার মাস সেখানে বসবাস করলেও পাওনাদারদের অব্যাহত তাগিদের মুখে সে উধাও হয়ে যায়। প্রতিবেশিরা জানান, এ বাড়িটি এখন আমাদের জন্য আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে কোনো মুহূর্তে এটা ধ্বসে পড়ে আশপাশের বাড়িঘর ও জানমালের ক্ষতিসাধনের আশঙ্কা রয়েছে। বায়নানামা সম্পাদনকারী জুয়েল রানা বলেন, শুধু বায়নাপত্রের ক্ষমতায় আমি তো আর বাড়িটি ভেঙ্গে নিজে নতুন কোনো ভবন নির্মান করতে পারি না। কিন্তু অজস্রবার তাগিদ দেওয়া সত্তেও তিনি আমাকে বাড়িটি দলিল করে দিচ্ছেন না। আবার পাওনা টাকা ফেরত দেয়ারও উদ্যোগ নিচ্ছেন না মাহবুব হাসান। বরং ভিটের একটি অংশ নিজ স্ত্রীর নামে এবং বাকি অংশ শ্যালকদের নামে লিখে দিয়ে আমাদের ঠকানোর পাঁযতারায় লিপ্ত হয়েছেন তিনি। একইসঙ্গে নানা কৌশলে মামলা মোকদ্দমায় জড়িয়ে আমাকে বিপর্যস্ত করে টাকাগুলো আত্মসাৎ করার ফন্দি আঁটছেন। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে মাহবুব হাসান বলেন, আমার কাছ থেকে বিগত ২৩/০৫/২০১৭ ইং তারিখে জোরপূর্বক সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে তা বায়নাপত্রে পরিনত করা হয়েছে। কিন্তু ভয়ে গত দুই বছরেও এ সংক্রান্ত কোনো জিডি-মামলা করতে সাহস পাইনি আমি। আমার ভিটে বাড়ির একটি অংশ আমার স্ত্রীর নামে দলিল রেজিস্ট্রি করে দিয়েছি। এরপরই আমার স্ত্রী লিলিকে বাদী বানিয়ে জুয়েল রানার বিরুদ্ধে কোর্টে একটি মামলা রুজু করেছি। তবে জোরপূর্বক বায়নানামা করার বিষয়টি এলাকার লোকজন ভূয়া অভিযোগ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তারা জানান, শত শত লোকের সামনে প্রকাশ্যে বসে হাসিমুখে বায়নানামা করে দিয়েছেন মাহবুব-এখন তিনি প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন। প্রতিবেশি দুই যুবক ওই বায়নানামা স্ট্যাম্প লিখে দেওয়া অনুষ্ঠানটির পুরো ভিডিওচিত্রও দেখান এ প্রতিবেদককে। তাতে দেখা যাচ্ছে, মাহবুব হাসান নিজেই বারবার বলছেন, ভাই জুয়েল আমার এই বিপদের দিনে বারো লাখ টাকা দিয়ে চালাও-তুমি চাইলে আমি কালকেই আমার ভিটেটুকু রেজিস্ট্রি করে দিতে রাজি আছি। তুমি পরবর্তীতে ধীরে ধীরে বাকি টাকা পরিশোধ করে দিও। ভিডিওচিত্রের কথা জানিয়ে মাহবুব হাসানকে ফোন করা হলে তিনি নিরুত্তোর থাকেন এবং একপর্যাায়ে মোবাইল ফোনের লাইন সংযোগ বিচ্ছিন করে দেন। সংশ্লিষ্ট ব্যাপারে পল্লবী থানার ওসি’র সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, জায়গা জমির কেনাবেচা নিয়ে কি হয়েছে তা আমার জানা নেই। তবে মাহবুবের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাৎ সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি মামলা ও জিডি রয়েছে। বারবাার পুলিশ পাঠিয়েও তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায় না। তার বাসায় ঘুরে আসা এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, শুধু পরিত্যক্ত একটি ভুতের বাড়িকে পুঁজি করেই মাহবুব হানান বিভিন্ন লোক থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হয়েছে।


যোগাযোগ

বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যলয়

কাব্যকস সুপার মার্কেট, ৩ ডি কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫।

মোবাইলঃ ০১৬২২৬৪৯৬১২, ০১৬০০০১৪০৪০

মেইলঃ tadantachitra93@gmail.com, tchitranews@gmail.com

সামাজিক যোগাযোগ

Web Design & Developed By
A

তদন্ত চিত্র কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েব সাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি।