TadantaChitra.Com | logo

১লা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

জলবায়ু পরিবর্তন কী, কীভাবে ও কেন ঘটছে?

প্রকাশিত : আগস্ট ০২, ২০২৩, ১২:৪০

জলবায়ু পরিবর্তন কী, কীভাবে ও কেন ঘটছে?

মোঃ আরমান চৌধুরী: বর্তমান সময়ে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সারাবিশ্বেই আলোচনা হচ্ছে। কী এই জলবায়ু পরিবর্তন? জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে- কোনও একটি জায়গায় বছরের পর বছর ধরে আবহাওয়ার যে গড়-পড়তা ধরন, তাকেই বলা হয় জলবায়ু। আবহাওয়ার সেই চেনাজানা ধরন বদলে যাওয়াকেই বলা হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন।

পৃথিবী গরম হয়ে পড়ছে এবং তার ফলে দ্রুত বদলে যাচ্ছে আবহাওয়ার বহুদিনের চেনাজানা আচরণ। যা মানবজাতির জন্য হুমকিস্বরুপ। জলবায়ু পরিবর্তন এখন সারা বিশ্বের জন্য একটা বড় সংকট! আর এই সংকট মোকাবেলায় আমাদের সকলকেই একাত্ম হয়ে কাজ করতে হবে। সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থায় পৃথিবীকে ফিরিয়ে আনতে এর কোনো বিকল্প নেই। মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সারাবিশ্ব যেভাবে লড়ছে ঠিক সেভাবেই জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধেও লড়তে হবে। কারণ, করোনভাইরাস থেকে আরও বেশি ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে এই বিশ্বব্যাপী জলবায়ু সংকট।
জলবায়ু পরিবর্তনে পরিণতি যা হতে পারে-

মানুষ – মানুষের জন্য এই পরিবর্তনের অর্থ সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ুর এই পরিবর্তনে বদলে যাবে মানুষের জীবন যাপন। পানির সঙ্কট তীব্র আকারে দেখা দিবে। খাদ্য উৎপাদন কঠিন হয়ে পড়বে। বিপজ্জনক মাত্রায় কোনো কোনো অঞ্চল গরম হয়ে পড়বে। সমুদ্রের পানি বেড়ে প্লাবিত হবে বহু এলাকা। ফলে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে সে সব জায়গা।

চরম ভাবাপন্ন আবহাওয়া – অতিরিক্ত গরমের কারণে আগের তুলনায় বৃষ্টি কম হবে। আবার যখন হবে তখন খুব ভারি বৃষ্টি এবং ঝড়ের প্রকোপ অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকবে। ফলে প্রচুর মানুষের জীবন এবং জীবিকা হুমকিতে পড়বে। বিশেষ করে গরীব দেশগুলোতে এসব বিপদ মোকাবেলার সক্ষমতা কম বলে তাদের উপর চাপ পড়বে।

পরিবেশ – পরিবেশে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় উত্তর মেরুর জমাট বাধা বরফ এবং হিমবাহগুলো দ্রুত গলে যাচ্ছে। বেড়ে যাচ্ছে সাগরের উচ্চতা। যার ফলে উপকুলের নিচু এলাকাগুলো ডুবে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে। সাইবেরিয়ায় মাটিতে জমে থাকা বরফ গলে বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়ছে আটকে থাকা মিথেন গ্যাস। যার ফলে এই মিথেন গ্রিনহাউজ গ্যাস জলবায়ু পরিবর্তনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেবে। পৃথিবীর উষ্ণতা বেড়ে গিয়ে বন-জঙ্গলে আগুন লাগার ঝুঁকি বাড়বে।

প্রকৃতি- জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাদের চিরচেনা আবহাওয়া বদলে যাওয়ায় অনেক প্রাণী তাদের অনুকূলের কোন নতুন জায়গায় চলে যাবে। অনেকে ইতোমধ্যে চেষ্টা করছে। কিন্তু এতো দ্রুত হারে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে যে অনেক প্রজাতি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে। যেমন, পোলার বিয়ার বা উত্তর মেরুর শ্বেত ভালুকের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়ছে। এছাড়া সাগরের পানি গরম হয়ে যাওয়ায় আটলান্টিক মহাসাগরের স্যামন মাছ যেসব নদীতে ঢুকে ডিম পাড়ে তা বিপন্ন হয়ে যাবে। ট্রপিক্যাল অঞ্চলের কোরাল রিফ বা প্রবাল-প্রাচীর উধাও হয়ে যেতে পারে, কারণ বায়ুমণ্ডলের অতিরিক্ত কার্বন ডাই-অক্সাইড সাগরের পানিতে মিশে পানির অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে।

জলবায়ু পরিবর্তন যেসব কারণে হয়-
প্রাকৃতিক কারণে জলবায়ুতে স্বাভাবিকভাবেই কিছু পরিবর্তন হয়। কিন্তু বর্তমানে জলবায়ুর যে পরিবর্তন তা অস্বাভাবিক। যার জন্য আসলে আমরাই দায়ী। মানুষ যখন থেকে কল-কারখানা এবং যানবাহন চালানো শুরু করেছে এবং শীতে ঘর গরম রাখতে তেল, গ্যাস এবং কয়লা পোড়াতে শুরু করেছে সেই সময়ের তুলনায় পৃথিবীর তাপমাত্রা এখন ১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেছে।

বায়ুমণ্ডলে অন্যতম একটি গ্রিন হাউজ গ্যাস কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ উনবিংশ শতকের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেড়ে গেছে।। গত দুই দশকে বেড়েছে ১২ শতাংশ। বনাঞ্চল ধ্বংসের কারণেও বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউজ গ্যাসের নির্গমন বাড়ছে। গাছপালা কার্বন ধরে রাখে। ফলে, সেই গাছ যখন কাটা হয় বা পোড়ানো হয়, সঞ্চিত সেই কার্বন বায়ুমণ্ডলে নিঃসরিত হয়।

ভবিষ্যতে যা ঘটতে পারে-
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, শিল্প বিপ্লব শুরুর আগে বিশ্বের যে তাপমাত্রা ছিল তার থেকে বৃদ্ধির মাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখা গেলে বড় ধরণের বিপদ এড়ানো যাবে। তা না পারলে বিপজ্জনক হয়ে পড়বে প্রকৃতি, পরিবেশ এবং মানুষের জীবন। অনেক বিজ্ঞানীর আশঙ্কা যে ভয়ঙ্কর এই পরিণতি ঠেকানোর আর কোনো উপায় নেই এবং চলতি শতকের শেষে গিয়ে বিশ্বের তাপমাত্রা তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যাবে। তা হলে এর প্রভাব বিশ্বের একেক জায়গায় একেক রকম হবে:
-ব্রিটেনে বৃষ্টিপাতের মাত্রা প্রচণ্ডভাবে বেড়ে গিয়ে ঘনঘন বন্যা হবে।
-সাগরের উচ্চতা বেড়ে প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলের ছোট অনেক দ্বীপ বা দ্বীপরাষ্ট্র বিলীন হয়ে যেতে পারে।
-আফ্রিকার অনেক দেশে খরার প্রকোপ বাড়তে পারে এবং পরিণতিতে খাদ্য সঙ্কট দেখা দিতে পারে।
-অস্ট্রেলিয়ায় অতিরিক্ত গরম পড়তে পারে এবং খরার প্রকোপ দেখা দিতে পারে।

বিভিন্ন দেশ, সরকারপ্রধান ও বিজ্ঞানীদের ভূমিকা-
দেশগুলোকে বলা হচ্ছে তারা যেন বর্তমান শতকের মাঝামাঝি অর্থাৎ ২০৫০ সাল নাগাদ গ্রিন হাউজ গ্যাস নির্গমন শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনে। অর্থাৎ যেটুকু গ্যাস নিঃসরিত হবে তা অতিরিক্ত গাছ লাগানোর মত ব্যবস্থা নিয়ে ভারসাম্য রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। দেশগুলো যদি তা করতে পারে তাহলে তাপমাত্রা বৃদ্ধির দ্রুত গতি কমিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের বিপর্যয়কর পরিণতি এড়ানো যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আশার কথা পৃথিবীব্যাপি জলবায়ু নিয়ন্ত্রণে বিজ্ঞানীরা নানা গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। যার ফলে বিষয়টি সম্পর্কে জ্ঞান বাড়ছে। কোনও একটি জায়গায় আবহাওয়ার চরম আচরণ যেমন অতিবৃষ্টি বা অতিরিক্ত গরমের সাথে জলবায়ু পরিবর্তনের যোগাযোগ খুঁজে পেতে বিজ্ঞানীরা এখন সমর্থ হচ্ছেন। যা এ ধরনের চরম আবহাওয়ার পূর্বাভাস হিসেবে ভবিষ্যতে সহজতর হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আমরা যা করতে পারি-
বেশি বেশি গাছ লাগাতে পারি। একমাত্র গাছ লাগালেই বায়ুমন্ডলে তাপমাত্রা সহনীয় অবস্থায় আসতে পারে। গাড়ির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে সাইকেল বা জনপরিবহনের ব্যবহার বাড়াতে পারি। বাড়িতে যাতে গরম বা ঠাণ্ডা কম ঢোকে তার ব্যবস্থা নিতে পারি। মাংস এবং দুগ্ধজাত খাবার কমাতে পারি। বিমান ভ্রমণ কমাতে পারি।


যোগাযোগ

বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যলয়

কাব্যকস সুপার মার্কেট, ৩ ডি কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫।

মোবাইলঃ ০১৬২২৬৪৯৬১২, ০১৬০০০১৪০৪০

মেইলঃ tadantachitra93@gmail.com, tchitranews@gmail.com

সামাজিক যোগাযোগ

Web Design & Developed By
A

তদন্ত চিত্র কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েব সাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি।