TadantaChitra.Com | logo

৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

রাষ্ট্রের পাহারাদার পুলিশের ঘর মেলে না

প্রকাশিত : ডিসেম্বর ১৩, ২০১৮, ১৭:৫৩

রাষ্ট্রের পাহারাদার পুলিশের ঘর মেলে না

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ সন্ধ্যা নামলেও ল্যাম্পপোস্টের আলোয় অন্ধকার তাড়িয়ে দিয়েছে। রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র শাহবাগ তখন আড্ডায় জমে উঠেছে। ছাত্র, সাংবাদিক, শিল্পী, সাহিত্যিকের পদচারণায় শাহবাগের চিরায়িত রূপের কোনো ঘাটতি নেই। পাশেই থানা। থানার গেট পর্যন্ত বাহারি ফুলের দোকান। তবে রাস্তার ঝকঝকে আলো আর ফুলের সুবাস থানায় ছড়ায় না। বাংলাদেশের আর দশটি থানার যে চিত্র, শাহবাগ থানায়ও তাই। আলো আছে, আলো নেই। আলো-আঁধারের মাঝে দাঁড়িয়ে কয়েকজন পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। দরবার চলছে থানায় আটকদের স্বজনদের সঙ্গে।

থানার দক্ষিণ পাশে থাকার ঘর। এটিই শাহবাগ থানা পুলিশের ব্যারাক। ঘর নয়, যেন বস্তিসম টিনের চালা। ছোট ছোট কয়েকটি কক্ষ। তাতে আড়াআড়ি করে বেশ কয়েকটি বিছানা। প্রথম কক্ষটিতে কোনো চৌকিও নেই। মাটিতেই বিছানা। তাতে সন্ধ্যায়ই দুজন শুয়ে আছেন। কেউ কেউ ইউনিফর্ম পরছেন আবার কেউ ডিউটি থেকে এসে ইউনিফর্ম ছাড়ছেন।

কক্ষগুলোতে আলো আছে কি নেই, তা বোঝা যাচ্ছিল না। ঝুলিয়ে রাখা ইউনিফর্ম আর পোশাকের কারণে মনে হচ্ছিল কোনো ধোপাবাড়ির ঘর হবে এটি। একটি কক্ষে ক`জন ঘুমায়, তারও কোনো হদিস মেলে না।

রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকার একটি থানার আবাসিক চিত্র এটি। পুলিশের আবাসন সংকট পুরনো। উন্নয়ন হচ্ছে। উন্নয়ন হচ্ছে পুলিশ বিভাগেও। কিন্তু উন্নয়ন পুলিশের আবাসিক সমস্যার দুঃখ গাথাকে দূর করতে পারেনি। পুলিশের আবাসিক সংকট সর্বত্রই। শীর্ষ কর্তা থেকে শুরু করে কনস্টেবল পর্যন্ত সবাই আবাসন সংকটে। আবাসিক বাড়ির বরাদ্দ থাকলেও সংকটের কারণে বেশির ভাগ সদস্যকে ভাড়া বাড়িতে থাকতে হয়।

এ প্রসঙ্গে মহানগর গোয়েন্দা সংস্থার (ডিবি) এক সদস্য বলেন, প্রায় এক বছর হলো ডিএমপিতে যোগ দিয়েছি। বিভাগে আবাসিক ব্যবস্থা তো নাই-ই, বাড়ি ভাড়াও পাচ্ছি না। ব্যাচেলর হওয়ার কারণে কেউ বাড়ি ভাড়াও দিতে চায় না।

শাহবাগ থানার এক এসআই বলেন, ‘ব্যারাকে যে পরিবেশে থাকি, তার চেয়ে বস্তির পরিবেশ অনেক ভালো। শাহবাগ বলে কথা নয়, বিভিন্ন জায়গায় দায়িত্ব পালন করে এসেছি। সেখানেও একই চিত্র। বরং কোথাও কোথাও আরো খারাপ অবস্থা।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দোষ সবাই দেখে। কিন্তু আমাদের কষ্ট কেউ দেখে না। হাজারও সমস্যায় জর্জরিত আমরা। এর মধ্যে আবাসিক সমস্যাই প্রধান। যেহারে পুলিশ নিয়োগ পায়, সেহারে আবাসিক ব্যবস্থা না থাকার কারণেই সংকট তীব্র হচ্ছে।’

গত বছরের এক হিসাব মতে, পুলিশের আবাসনের জন্য ১ লাখ ৫৫ হাজার বাসার বিপরীতে বরাদ্দ ছিল মাত্র ৬ হাজার ৫২২টি। ১০ জন অতিরিক্ত আইজিপির মধ্যে সাতজনের জন্য বাসা ছিল। বাকি তিনজন ভাড়া বাসায় থাকতেন। ৪৭ জন ডিআইজির মধ্যে মাত্র ৮ জন থাকছেন সরকারি বাসায়। আর ৭৭ জন অতিরিক্ত ডিআইজির মধ্যে চারজন সরকারি ও বাকি ৭৩ জন ভাড়া বাসায়। ২৪৫ জন পুলিশ সুপারের মধ্যে ১৮৫ জন সরকারি বাসায় এবং ৬০ জন ভাড়া বাসায়। ৫২০ জন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের মধ্যে ২৯ জন বাসা পেলেও ৪৯১ জন থাকেন ভাড়া বাড়িতে।

১ হাজার ২২৯ জন সিনিয়র এএসপির মধ্যে ২৬৮ জন সরকারি বাসায় থাকলেও ৯৬১ জন থাকেন ভাড়া বাসায়। ৪ হাজার ১৫ জন ইন্সপেক্টরের মধ্যে ৫৪০ জন সরকারি বাসা পেলেও ৩ হাজার ৪৭৫ জন ভাড়া বাসায় থাকছেন। ১২ হাজার ২৭৫ জন নিরস্ত্র সাব-ইন্সপেক্টরের মধ্যে ২ হাজার ১২২ জন থাকেন কোয়ার্টারে। বাকি ১০ হাজার ১৫৩ জন ভাড়া বাড়িতে। ২ হাজার ১১২ জন আর্মড এসআইয়ের মধ্যে ৩১০ জন কোয়ার্টারে ও ১ হাজার ৮০২ জন ভাড়া বাড়িতে। ১ হাজার ৭৬৪ জন সার্জেন্টের মধ্যে ৪৫ জন কোয়ার্টারে এবং ১ হাজার ৭১৯ জন ভাড়া বাড়িতে। ২৪৭ জন টিএসআইয়ের মধ্যে মাত্র ৯ জন থাকেন কোয়ার্টারে। বাকি ২৩৮ জন ভাড়া বাসায়।

এছাড়া ৪১১ জন নারী এসআইয়ের সবাই ভাড়া বাড়িতে থাকেন। ৯ হাজার ৬৫৬ জন নিরস্ত্র নারী এএসআইয়ের মধ্যে ৯৮৫ জন কোয়ার্টার পেলেও ৮ হাজার ৬৭১ জন ভাড়া বাড়িতে থাকছেন। ১ হাজার ৬৩৩ জন এটিএসআইয়ের মধ্যে সবাই থাকছেন ভাড়া বাড়িতে। ৫ হাজার ৮১৮ জন এএসআই’র (স.) জন্য ৩ হাজার ৪৯১টি বাসা বরাদ্দ দেয়ার কথা থাকলেও আছে মাত্র ৩১৫টি। বাকি ৩ হাজার ১৭৬ জন থাকেন ভাড়া বাসায়। ৬ হাজার ৫৬৪ জন নায়েকের মধ্যে ৩ হাজার ৯৩৮ জন বাসা বরাদ্দ পাওয়ার কথা থাকলেও পাচ্ছেন মাত্র একজন। বাকি ৩ হাজার ৮৩৮ জন থাকছেন ভাড়া বাড়িতে। ১ লাখ ৮ হাজার ৩৩২ জন পুরুষ ও নারী কনস্টেবলের জন্য ৬৪ হাজার ৯৯৯টি বাসা থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র ১ হাজার ৫৯৪টি। বাকি ৬৩ হাজার ৪০৫ কনস্টেবল ভাড়া বাড়িতে থাকছেন।

জানা গেছে, বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য নিয়োগের ফলে চলতি বছর আবাসিক সংকট আরও বেড়েছে। তবে আবাসিক সংকট নিরসনে সরকার ইতোমধ্যে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে আবাসিক সংকট অনেকটাই কমবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

দেশের ১০টি জেলার ১২টি স্থানে এই ব্যারাকগুলো নির্মিত হবে। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ, রাজশাহী পুলিশ লাইনস, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ, শিল্প পুলিশ নারায়ণগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ পুলিশ লাইনস, শিল্প পুলিশ গাজীপুর, গাজীপুর পুলিশ লাইনস, বরিশাল পুলিশ লাইনস, কুমিল্লা পুলিশ লাইনস, সিলেট মেট্রেপলিটন পুলিশ ও রংপুর পুলিশ লাইনসে এসব ব্যারাক নির্মিত হবে।

১২টি পুলিশ ইউনিটে বর্তমানে ১৫ হাজার ৪০৩ জন পুলিশ সদস্য রয়েছেন। এর মধ্যে মাত্র ৫ হাজার ৮৮৮ জনের আবাসিক সুবিধা রয়েছে। প্রস্তাবিত ব্যারাকগুলো নির্মাণ হলে আবাসিক সমস্যা অনেকটাই লাঘব হবে। এছাড়া পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যদের নিরাপত্তায় দেশের বিভিন্ন স্থানে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থায়নে ‘১৮টি আবাসিক ভবন নির্মাণ’ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

পুলিশের একজন অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক বলেন, পুলিশের আবাসিক সমস্যা দীর্ঘদিনের। যে পরিমাণ সদস্য রয়েছেন, তার জন্য এই আবাসিক ব্যবস্থা খুবই অপ্রতুল।

সরকার পুলিশের আবাসিক সমস্যা নিরসনে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে উল্লেখ করে পুলিশের এই কর্তা বলেন, সমস্যার দৃশ্যত অনেক পরিবর্তন হয়েছে। পুলিশ বাহিনীর জন্য বেশ কিছু ভবন তৈরি হচ্ছে। কয়েকটি ব্যারাকও নির্মাণ হচ্ছে। এসব নির্মাণ শেষ হলে সমস্যা অনেকটাই লাঘব হবে বলে বিশ্বাস করি।


যোগাযোগ

বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যলয়

কাব্যকস সুপার মার্কেট, ৩ ডি কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫।

মোবাইলঃ ০১৬২২৬৪৯৬১২, ০১৬০০০১৪০৪০

মেইলঃ tadantachitra93@gmail.com, tchitranews@gmail.com

সামাজিক যোগাযোগ

Web Design & Developed By
A

তদন্ত চিত্র কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েব সাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি।