TadantaChitra.Com | logo

৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

প্রাণিসম্পদ গবেষণাগারের দুর্নীতির তদন্ত এক বছরেও আলোর মুখ দেখেনি!

প্রকাশিত : ডিসেম্বর ১৪, ২০১৮, ০৭:৩৭

প্রাণিসম্পদ গবেষণাগারের দুর্নীতির তদন্ত এক বছরেও আলোর মুখ দেখেনি!

ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি, লুটপাট আর জালিয়াতিতে ডুবতে বসেছে রাজধানীর মহাখালীস্থ কেন্দ্রীয় প্রাণিসম্পদ গবেষণাগার। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের এই প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন শাখা ও প্রকল্পে নিলাম, কেনাকাটা, সরবরাহ, ভ্যাকসিন উৎপাদনের নামে দীর্ঘদিন ধরেই  লুটপাট চলছে। একশ্রেণির অসৎ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের যোগসাজশে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট এই অনিয়ম দুর্নীতির ফায়দা লুটছে।
বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি থেকে লুটপাট করা কোটি কোটি টাকা ভাগবাটোয়ারা করে নিচ্ছে সিন্ডিকেটের সদস্যরা। মহাখালী প্রাণিসম্পদ গবেষণাগারের জন্য যন্ত্রপাতি কেনাকাটা থেকে শুরু করে ওষুধ, বোতল, হ্যান্ড গ্লাভস, গ্লিসারিন, ক্যামিকেলসহ প্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্র কেনার ক্ষেত্রে দুর্নীতি হয়। বিশেষ কিছু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের যোগসাজশে বাজারদরের চেয়ে অধিক মূল্যে এসব কেনাকাটা করে লুটপাট চালানো হয়। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিষ্ঠানটিতে দীর্ঘদিন ধরে একই ঠিকাদাররা সব ব্যবসা করে, ফলে একই মালামাল বিভিন্ন শাখায় সরবরাহ দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা ভুয়া বিল উঠিয়ে সিন্ডিকেটের সাথে ভাগাভাগি করে নেয়। নিয়মনীতি ছাড়া পুরাতন যন্ত্রপাতি নিলামে তুলে স্বল্পমূল্যে বিক্রয় দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়। মেরামতযোগ্য ও ব্যবহারযোগ্য অনেক জিনিসপত্রও নিলামে তুলে দেয়া হয়। অবস্থা এমন জায়গায় গিয়ে ঠেকেছে যে, ঠিকাদাররা মালামাল সরবরাহের আগেই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা স্টক দেখিয়ে বিল পরিশোধ করে দিচ্ছে। কোনো কোনো টেন্ডারে উন্নতমানের যন্ত্রপাতি ও মালামাল সরবরাহের শর্ত থাকলেও নিন্মমানের প্রোডাক্ট সরবরাহ করে উন্নতমানের  প্রোডাক্টের বিলই তুলে নিচ্ছে দুর্নীতিবাজদের সিন্ডিকেট। ভ্যাকসিন উৎপাদন প্রকল্পেও ব্যাপকহারে লুটপাট, অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। প্রাণি সম্পদ গবেষণাগারের এসব দুর্নীতি, জালিয়াতি ও অনিময়মের তথ্য দিয়ে তা তদন্তের দাবি জানিয়ে ২০১৭ সালে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর একটি আবেদন করেন গবেষণাগারের দেশপ্রেমিক কর্মকর্তা, কর্মচারীরা। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে গবেষণাগারের সীমাহীন দুর্নীতি জালিয়াতির ঘটনা তদন্তের উদ্যোগ নেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সচিব। ২০১৭ সালের ৬ আগস্ট মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব বেগম নিগার সুলতানাকে এই তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু রহস্যজনকভাবে এক বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও ওই তদন্ত শেষ করা হয়নি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা নিগার সুলতানা এ প্রতিবেদককে বলেন, তিনি তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু এ বিষয়ে অন্য একটি কমিটি তদন্ত করছে- তার আর তদন্তের দরকার নেই বলে তাকে থামিয়ে দেয়া হয়। এ কারণে তিনি আর তদন্ত এগিয়ে নেননি। কিন্তু কে থেমে যেতে বলেছেন তা বলতে রাজি হননি নিগার সুলতানা।
উল্লেখ্য, গত অর্থবছরে মহাখালীস্থ প্রাণিসম্পদ গবেষণাগারের ‘টিকা উৎপাদন প্রযুক্তি আধুনিকায়ন ও গবেষণাগার সম্প্রসারণ’ প্রকল্পের আওতায় ৩৮ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনাকাটায় দুর্নীতি হয়। সিলিং ফিলিং মেশিনসহ এই যন্ত্রপাতি ক্রয়ে দরপত্র আহ্বান, মূল্যায়ন, কার্যাদেশ ও বিল পরিশোধে ব্যাপক দুর্নীতি-জালিয়াতি ও ঘুষ বাণিজ্য হয়েছে। এমনকি যন্ত্রপাতি সরবরাহ না নিয়েই স্টক দেখিয়ে ঠিকাদারকে কোটি কোটি টাকার অগ্রিম বিল পর্যন্ত পরিশোধ করা হয়েছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের হাত ধরে এসব জালিয়াতি হয়েছে। মহাদুর্নীতি-জালিয়াতির এই ঘটনা ফাঁস হবার পর তা তদন্তে এক বছর আগে একটি কমিটি গঠন করা হলেও তদন্ত রিপোর্ট এ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। অথচ ওই তদন্তের অজুহাত দেখিয়েই প্রাণিসম্পদ গবেষণাগারে ১০ বছর ধরে চলা নানা দুর্নীতি, জালিয়াতি, অনিয়মের তদন্ত থামিয়ে দেয়া হয়েছে। মূলত নিগার সুলতানাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিলো প্রতিষ্ঠানটির দীর্ঘ দিনের নানা দুর্নীতি, সরকারি সম্পদ লুট ও আত্মসাতের একটি বিস্তারিত তদন্তের জন্য। আর যে তদন্তের কথা বলে তার তদন্তটি থামিয়ে দেয়া হয়েছে সেটি ছিল প্রাণিসম্পদ গবেষণাগারের একটি প্রকল্পের মাত্র এক বছরের মেশিনারিজ ক্রয়ে দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের ঘটনা।
সূত্র জানায়, মূলত প্রাণিসম্পদ গবেষণাগারে দীর্ঘদিন ধরে লুটপাটকারী দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট এই তদন্ত চায় না। আর তাই চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি  রইছউল আলম ম-ল মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর পরই দুর্নীতিবাজরা  তার শরণাপন্ন হয়। একপর্যায়ে তিনিও দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। এখন তিনিই এসব দুর্নীতি-জালিয়াতির ঘটনা ধামাচাপা দিতে চান। মূলত সচিবের ইশারাতেই দুর্নীতির তদন্তটি দীর্ঘদিন ধরে ধামাচাপা পড়ে আছে। সচিব রইছউল আলম ম-লের প্রশ্রয়ের কারণেই মূলত এই দুর্নীতির তদন্ত শেষ হচ্ছে না। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, টিকা উৎপাদন প্রযুক্তি আধুনিকায়ন প্রকল্পের ৩৮ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ক্রয়ে যে অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে সেটিও অবশেষে ধামাচাপা দেয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ওই তদন্ত কমিটির প্রধান যিনি, প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক ডা. এবিএম খালেকুজ্জামান নিজেই এ দুর্নীতির সঙ্গে পরোক্ষভাবে জড়িত। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আগে থেকেই তার বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। তিনিই ঠিকাদার এবং প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের অন্য দুর্নীতিবাজদের সঙ্গে যোগসাজশে বেশি দামে এসব নিন্মমানের মালামাল সরবরাহে সহযোগিতা করেন। এই দুর্নীতি-জালিয়াতি ধামাচাপা দেয়ার ব্যাপারে সচিব রইছউল আলম ম-ল অতি উৎসাহী ভূমিকা পালন করছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।


যোগাযোগ

বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যলয়

কাব্যকস সুপার মার্কেট, ৩ ডি কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫।

মোবাইলঃ ০১৬২২৬৪৯৬১২, ০১৬০০০১৪০৪০

মেইলঃ tadantachitra93@gmail.com, tchitranews@gmail.com

সামাজিক যোগাযোগ

Web Design & Developed By
A

তদন্ত চিত্র কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েব সাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি।