TadantaChitra.Com | logo

৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২০শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বঙ্গবন্ধু, তাঁর দর্শন এবং আমাদের সমৃদ্ধি

প্রকাশিত : মার্চ ২৬, ২০১৯, ১৭:৩৭

বঙ্গবন্ধু, তাঁর দর্শন এবং আমাদের সমৃদ্ধি

টুঙ্গিপাড়ার শেখ মুজিবর রহমান পরে বঙ্গবন্ধু আরো পরে প্রমানিত হলেন তিনিই হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী, নিছক কেউ নন। তিনি ইতিহাসের এক মহানায়ক। রাজনৈতিক-সামাজিক ধারাবাহিক বিবর্তনের মধ্য দিয়েই বঙ্গবন্ধু ইতিহাসের মহানায়ক হতে পেরেছিলেন। তার ভাবনা-চিন্তা আদর্শবোধ-জীবন দর্শন ইত্যাদি ক্রমান্বয়ে বিকশিত হয়েছে। এক অবস্থান থেকে উন্নতর অবস্থানে উত্তরণ ঘটেছে। উত্তরণের এই গতি কোনোদিন বন্ধ হয় নি, অব্যাহত থেকেছে তাঁর জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত। রাজনীতির অনেক আঁকা-বাঁকা পথে তাকে চলতে হয়েছে, অনেক আগ-পিছ করে করে তাকে রাজনীতির পথ অতিক্রম করতে হয়েছে, বাস্তবতার প্রতিক‚লতার মুখে কখনো কখনো তাঁকে সাময়িক আপসও করতে হয়েছে, কিন্তু তার গতি ছিল সামনের দিকে, প্রগতি অভিমুখে। কেননা, তিনি ছিলেন সাধারণ মানুষের লোক, ছিলেন জনতার নেতা। তিনি আমাদের স্বাধীনতার স্থপতি। এই স্থাপত্যকারের জীবন ও সংগ্রাম কেমন ছিল, বাংলাদেশ নামের দেশ গড়ার কারিগর তিনি কীভাবে হলেন, অবশ্যই সহজে নয়। সেজন্য একটি দর্শন তৈরি হয়েছিল। যে দর্শনের উদ্যাক্তা তিনি। কী ছিল তা- জনতার পক্ষে, জনতার রুচি ইচ্ছা নিয়ে তৈরি হবে এই দেশ, কোন বৈষম্য নয়। দেশের সকল মানুষের আহার-বাসস্থান-চিকিৎসা-নিরাপত্তা থাকতে হবে। সাধারণ মানুষের জন্যই তো রাজনীতি, এটি তার দর্শন। গরীব-ধনী বৈষম্য নয়, উঁচু-নীচু থাকবে না, ধর্ম-বর্ণ নয়। মানুষের পক্ষই প্রধান। এই রাজনৈতিক দর্শন বঙ্গবন্ধু নিয়েছিলেন। যে কারণে, সংবিধানে সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতার স্তম্ভ সমুন্নত রাখেন তিনি। এটি ছিল তাঁর বিশ্বাস এটাই মানতেন তিনি। জানতেন এটিই তার শক্তি। এই শক্তির ভিত্তি এদেশের আপামর মেহনতী জনতা। চারটি মূল স্তম্ভের ওপর ৭২ এ আমাদের সংবিধান রচিত হয়, এ চার মূলনীতি হচ্ছে জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর গনপরিষদে সংবিধান পাস করার দিনে প্রদত্ত ভাষণে এ চারনীতি সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু বলেন, জাতীয়তাবোধের ভিত্তিতে বাঙালি জাতি ঝাঁপিয়ে পড়েছিল চরম মরণ-সংগ্রামে। জাতীয়তাবাদ না হলে কোনো জাতি এগিয়ে যেতে পারে না। এ মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে আমরা এগিয়ে গিয়েছি। আমরা জাতীয়তাবাদে বিশ্বাস করি। ভাষাই বলুন, শিক্ষাই বলুন, সভ্যতাই বলুন আর কৃষ্টিই বলুন, সবার সঙ্গে একটা জিনিস রয়েছে, সেটা হলো অনুভ‚তি। এ অনুভ‚তি যদি না থাকে, তাহলে কোনো জাতি বড় হতে পারে না। জাতীয়তাবাদ আসতে পারে না। আজ বাঙালি জাতি রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করেছে, এই সংগ্রাম পরিচালিত হয়েছিল যার ওপর ভিত্তি করে, এ স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে যার ওপর ভিত্তি করে সেই অনুভ‚তি আছে বলেই আমি বাঙালি, আমার বাঙালি জাতীয়তাবাদ। সেদিন গণপরিষদে বঙ্গবন্ধু বলেন, বিপ্লবের পর ৯ মাসের মধ্যে শাসনতন্ত্র দেওয়া, মানুষের মৌলিক অধিকার দেওয়ার অর্থ হলো আমরা জনগণের ওপর বিশ্বাস রাখি। তিনি শোষণ ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজব্যবস্থা কায়েমের মাধ্যমে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন তার স্বপ্নের সোনার বাংলা। তাঁর রাজনৈতিক দর্শন ছিল শোষিতের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা। মানুষের প্রতি ভালবাসাই ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনীতির মূল দর্শন। মানুষকে ভালোবেসে তিনি একটি ক্ষুধা ও দারির্দ্যমুক্ত স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে বাঙ্গালীদেরকে স্বাধীনতার মন্ত্রে দিক্ষিত করেন এবং স্বাধীনতা এনে দেন। বঙ্গবন্ধুর জীবন দর্শন থেকে আমরা শিক্ষা নিয়েছি কিনা, আজ জিজ্ঞাসা করা দরকার আমাদের সকলের। তাঁর লক্ষ্য ছিল বাংলার মানুষের মুক্তি। বাঙ্গালি উন্নত জীবনের অধিকারী হোক। বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াক। বাঙ্গালি জাতিসত্তাকে প্রতিষ্ঠা করুক। একজন মহান নেতা হওয়ার সব গুণই আমরা তাঁর মধ্যে খুঁজে পাই। কিউবার বিপ্লবী প্রেসিডেন্ট ফিদেল কাস্ত্রো বলেছিলেন, আমি হিমালয় দেখিনি, আমি শেখ মুজিবকে দেখেছি। ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্ট (১৯৭২ সালের এক সাক্ষাতকারে) বঙ্গবন্ধুকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, আপনার শক্তি কোথায়? বঙ্গবন্ধু সে প্রশ্নের উত্তরে বলেন, আমি আমার জনগণকে ভালোবাসি। আর আপনার দুর্বল দিকটা কী? বঙ্গবন্ধুর উত্তর ছিল আমি আমার জনগণকে খুব বেশি ভালোবাসি। এই হলেন বঙ্গবন্ধু। জনগণের অন্তর্নিহিত শক্তির ওপর অপার আস্থা-বিশ্বাস, অসাম্প্রদায়িক, মানুষের প্রতি নিঃশর্ত ভালোবাসা, মমত্ববোধ, ত্যাগ স্বীকার এবং সহমর্মিতার বিরল দৃষ্টান্ত সমৃদ্ধ মানুষ বঙ্গবন্ধু। বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু আর মুক্তিযুদ্ধ এই শব্দ তিনটি মূলত সমার্থক। এই তিনটির যেকোনো একটিকে আলাদা করে বিশ্লেষণ করার কোনো সুযোগ নেই। বঙ্গবন্ধুর কর্মকান্ড বাংলার মানুষের জীবনের প্রতিটি অধ্যায়কে স্পর্শ করে। তার আত্মত্যাগের কথা, তাঁর আদর্শের কথা, তাঁর আপোষহীন সংগ্রামের কথা, তাঁর প্রতিবাদী মানসিকতার কথা এবং তাঁর দর্শন নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। মানব দরদী ও মানবতার দিশারী এ মহান নেতা জাতিকে একটি স্বাধীন দেশ ও একটি স্বাধীন পতাকা দিয়েছেন। আর নিজে দেশের জন্য প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন। আজ বড় প্রয়োজন সবার বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুঝা এবং ধারণ করা। সেই আদর্শে নিজেদের বলীয়ান করে দেশকে এগিয়ে নেয়া। আসুন জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে চলমান উন্নয়নের ধারা আরো জোরালো করতে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত হই সবাই। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও চরিত্র আমাদের কাজকর্মে ও জীবনে প্রতিফলিত হোক। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন ও নীতিসমূহ সমাজ জীবনে প্রকৃতভাবে প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই নিহিত রয়েছে আমাদের সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি।


যোগাযোগ

বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যলয়

কাব্যকস সুপার মার্কেট, ৩ ডি কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫।

মোবাইলঃ ০১৬২২৬৪৯৬১২, ০১৬০০০১৪০৪০

মেইলঃ tadantachitra93@gmail.com, tchitranews@gmail.com

সামাজিক যোগাযোগ

Web Design & Developed By
A

তদন্ত চিত্র কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েব সাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি।