TadantaChitra.Com | logo

৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২০শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ঢাকায় কেন এত আগুন?

প্রকাশিত : মার্চ ৩০, ২০১৯, ১৬:২৪

ঢাকায় কেন এত আগুন?

সাম্প্রতিক সময়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বেড়েছে। আগুনে জীবনহানি ঘটছে, পুড়ছে সম্পদ। গ্রাম থেকে শহর, বস্তি থেকে শুরু করে আবাসিক ও বাণিজ্যিক বহুতল ভবন, দোকানপাট, গুদাম, মার্কেট কোনো কিছুই আগুনের লেলিহান গ্রাস থেকে মুক্ত নয়। কিন্তু কেন ঘন ঘন আগুন লাগছে, সেই রহস্য আগুনের কুণ্ডুলির মতোই ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন। প্রশ্ন উঠেছে এসব নিছক দুর্ঘটনা নাকি এর পিছনে অন্য কিছু আছে।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ আগুন লাগার ক্ষেত্রে মোটা দাগে ১৯ টি কারণ পেয়েছে। এগুলো হচ্ছে চুলার আগুন, বৈদ্যুতিক গোলযোগ, সিগারেটের টুকরা, খোলা বাতির ব্যবহার, উত্তপ্ত ছাই বা জ্বালানি, বাচ্চাদের আগুন নিয়ে খেলা, যন্ত্রাংশে ঘর্ষণজনিত, ইচ্ছাকৃত অগ্নিসংযোগ, উচ্ছৃঙ্খল জনতা কর্তৃক আইন ভঙ্গ করে আগুন, মাত্রাতিরিক্ত তাপ, মিস ফায়ার, স্বত:স্ফূর্ত প্রজ্বলন, চিমনি থেকে জলন্ত আগুন, স্থির বিদ্যুত্, রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া, বাজি পোড়ানো, বনজঙ্গল থেকে আগুন, জাহাজে ও বিমানে আগুন।

পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৮ সালে সারা দেশে ৮ হাজার ৪৬১টি আবাসিক ভবনে আগুনের ঘটনা ঘটেছে, এর ২ হাজার ৮৮টি ঢাকায়, চট্টগ্রামে ২৮৫ ও রাজশাহীতে ১১৬টি। সারা দেশে ৫০৮টি নৌ দুর্ঘটনার মধ্যে ঢাকায় ১৯৫টি, চট্টগ্রামে ৫৪ ও খুলনায় ৪০টি। এসব দুর্ঘটনায় শুধু ঢাকায় প্রাণ হারান ১২১ জন। এক বছরে দেশে ১৬টি ভবন ধসের ঘটনার ১০টি ঢাকায়। এতে ছয়জন নিহত হন। দেশের গার্মেন্টগুলোতে ১৭৩টি আগুনের ঘটনা ঘটেছে; এর মধ্যে ১১৫টি ঢাকায়। শিল্প কারখানায় ১ হাজার ১৩১টি আগুনের ঘটনার মধ্যে ৫২৬টি ঢাকায়।
কেন এত দুর্ঘটনার শিকার, ফায়ার সার্ভিস থেকে জানা যায়, ঢাকার ডেনসিটি বেশি। অল্প জায়গায় বেশি মানুষ বসবাস করে। অনেক অপরিকল্পিত ও অবৈধ বৈদ্যুতিক সংযোগ রয়েছে। নতুন নতুন ইলেকট্রিক গ্যাজেট, ল্যাপটপ, মোবাইল চার্জারসহ অন্যান্য দাহ্য পদার্থের প্রাপ্যতা বেশি। তাই ঢাকায় অগ্নিকাণ্ডসহ অন্যান্য দুর্ঘটনার সংখ্যা বেশি।
গত বছর দেশে যত অগ্নিকান্ডের ঘটেছে তার কারণ সম্পর্কে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর একটি পরিসংখ্যান দিয়েছে। তাদের তথ্য বলছে, গত বছর দেশে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে ১৮ হাজারের কিছু বেশি।
গত বছরের সব অগ্নি দুর্ঘটনার মধ্যে সবচেয়ে বেশি হয়েছে বিদ্যুতের শর্টসার্কিট থেকে। এর পরই বেশি আগুন লেগেছে চুলা থেকে। শর্টসার্কিট থেকে আগুন লেগেছে প্রায় ৩৭ শতাংশ ক্ষেত্রে। আর চুলা থেকে আগুন লেগেছে ২৩ দশমিক ৪ শতাংশ।
আর সর্বশেষ শর্টসার্কিট থেকে আগুন লাগে ঢাকার বনানীতে। এর আগে ২৩ মার্চ সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে রামপুরায় আগুন লাগে। কেউ হতাহত না হলেও ভবনের ভেতর থাকা তিনটি মোটরসাইকেল পুড়ে যায় বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
হাতিরঝিল থানা পুলিশ জানান, শর্টসার্কিট থেকেই এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর আগে ২২ মার্চ ঢাকার নিউমার্কেট এলাকার বহুতল ভবন বিশ্বাস বিল্ডার্সে অগ্নিকাণ্ড হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে এতে হতাহতের খবর জানা যায়নি। ফায়ার সার্ভিসের কয়েকটি ইউনিট প্রায় ঘণ্টাখানেক চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে তিনি বলেন, ভবনের চতুর্থতলার একটি কম্পিউটারের দোকানে আগুন লেগেছিল। বহুতল এই ভবনের প্রথম কয়েকটি ফ্লোরে দোকান রয়েছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয়তলায় মালামাল রাখেন নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীরা।
আর ৮ মার্চ রাতে সিদ্দিকবাজার এলাকায় ফের আগুন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিস কন্ট্রোল রুমের ডিউটি অফিসার বলেন, ১০টার দিকে সিদ্দিকবাজারে মুদি সর্দার মসজিদের কাছে একটি গ্যাস পাইপের লিকেজ থেকে হঠাৎ আগুন জ্বলছিল। খবর পেয়ে দ্রুত ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে ছুটে আসার আগেই স্থানীয় লোকজন আগুন নিভিয়ে ফেলেন। আর ৭ মার্চ আগুন লাগে নবাবপুরের একটি টায়ারের গোডাউনে।
এর আগে ২ মার্চ বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে চকবাজারে একটি ভাঙারির দোকানে বিস্ফোরণের এ ঘটনা ঘটে। পরে দগ্ধ তিনজনকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। বিকেলে দোকানে ভাঙারির মালামাল একটি মেশিনে চাপ দেওয়ার সময় সেখানে হঠাৎ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে তারা দগ্ধ হন।
এরও আগে ১৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। হাসপাতালের ভবনের তৃতীয়তলার স্টোর রুমে এই আগুন লাগে। আগুন লাগার খবরে রোগী, স্বজন, চিকিৎসক ও হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আগুন ও ধোঁয়ার কুণ্ডলি থেকে রক্ষা পেতে রোগী ও স্বজনরা ভয়ে ও আতঙ্কে আর্তচিৎকার শুরু করে দেন। যে যেভাবে পেরেছে হাসপাতাল থেকে নেমে আসেন।
ঘটনার পরপরই বিভিন্ন স্থান থেকে সরকারি-বেসরকারি শতাধিক অ্যাম্বুলেন্স হাসপাতালে পৌঁছে রোগীদের অন্যত্র সরিয়ে নেয়। ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট তিন ঘণ্টা চেষ্টার পর রাত ৯টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। অগ্নিকান্ডে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দাবি করলেও প্রায় ১ হাজার ২০০ রোগীকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার সময় এক শিশুর মৃত্যু হয়। আর বছরের সবচেয়ে বড় অগ্নিকান্ড ঘটে ২০ ফেব্রুয়ারি চকবাজারের চুড়িহাট্টায়। ওই অগ্নিকান্ডে ৭৮ জন নিহত হন। ওই আগুন রাসায়নিক ও প্লাস্টিকের মতো দাহ্য পদার্থের জন্য বেশি ছড়িয়েছিল বলে ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে।
সর্বশেষ গুলশান ডিএনসি মার্কেট ও গুলশান-২ ডেল্টা লাইফ ইন্সুরেন্স ভবনে আগুন লাগে।

চলতি বছর তিনটি বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ২০০৪ সাল থেকে ২০০৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪০ হাজার ৬৬৩ টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৩৬৮৪ জন আহত ও ৪৮০ জন নিহত হন। দমকল কর্মকর্তা নিহত হন ৫ জন। ১৮৪ জন আহত হন। ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ৭৮ হাজার ৯৫টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ১৩৮৫ জন আহত ও ১৬১ জন নিহত হন। দমকল কর্মী আহত হন ৮৬ জন ও নিহত হন একজন। ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৮৯ হাজার ৯২৩টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৫১৩৫ জন আহত আর নিহত হন ১১২২জন। দমকল কর্মী ৪৮২ জন আহত হন আর নিহত হন ৩ জন।

দেখা যাচ্ছে, ২০০৪ সালের পর থেকে ক্রমেই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা যেমন বেড়েছে তেমনি ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বা সংখ্যাও বেড়েছে। তবে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাপনায়ও বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে। আধুনিক যন্ত্রাংশের ব্যবহার বেড়েছে। আগে যেখানে ক্রেন সাত তলার ওপর পৌঁছাত না, এখন সেখানে ২০ তলা পর্যন্ত পানি ও কর্মী বহন করার মতো ক্রেন রয়েছে। দমকল কর্মী ও প্রশিক্ষণও বাড়ানো হয়েছে। বিএসইসি ভবন ও বসুন্ধরা সিটিতে অগ্নিনির্বাপণের সময় দমকলবাহিনী ছিল অসহায়। কারণ তখন আধুনিক যন্ত্রাংশ ছিল না, প্রশিক্ষিত কর্মী বাহিনীর অভাব ছিল। এখন পানি সরবরাহের গাড়িও বাড়ানো হয়েছে।


যোগাযোগ

বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যলয়

কাব্যকস সুপার মার্কেট, ৩ ডি কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫।

মোবাইলঃ ০১৬২২৬৪৯৬১২, ০১৬০০০১৪০৪০

মেইলঃ tadantachitra93@gmail.com, tchitranews@gmail.com

সামাজিক যোগাযোগ

Web Design & Developed By
A

তদন্ত চিত্র কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েব সাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি।