TadantaChitra.Com | logo

২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ওয়াসার এমডি পদে দশ বছর!

প্রকাশিত : জুন ২২, ২০১৯, ০৬:০০

ওয়াসার এমডি পদে দশ বছর!

তদন্ত চিত্র: পানির অপর নাম জীবন, আর এই জীবন নিয়েই দীর্ঘ দশ বছর খেলা করছেন ওয়াসার দুর্নীতিবাজ এমডি তাকসিম এ খান। ওয়াসায় যোগদান করেই তিনি দুর্নীতি’র এক স্বর্গরাজ্য বানিয়েছেন নগরবাসীর সেবাদান কারী এই প্রতিষ্ঠানকে। এমডি’র চেয়ারে বসেই তিনি অন্য সব কর্মকর্তার কথা অমান্য করে চলছেন দিন কে দিন। কারো কথা শুনার সময় নাই তার! প্রধানমন্ত্রীর নাম বলেই ওয়াসাকে ধ্বংস করার কাজে নেমেছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে খোদ ওয়াসা ছাড়াও রাজনৈতিক মহলে। তিনি নিজেই বিভিন্ন আড্ডায় ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের কাছে পরিচয় দেন প্রধানমন্ত্রীর আস্থাভাজন হিসেবে। ওয়াসার লাইনের পানিকে শতভাগ সুপেয় দাবি করে রাজধানীবাসীর কাছে আলোচিত-সমালোচিত প্রকৌশলী তাকসিম এ খান ওয়াসার এমডির পদেই আছেন প্রায় দশ বছর। ২০০৯ সালের ১০ অক্টোবর এই প্রতিষ্ঠানের এমডির পদে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে আর এই পদ ছাড়েননি তিনি। ভাগ্যবান এই প্রকৌশলী পর পর পাঁচবার এমডির পদে নবায়ন করেন তার নিয়োগ। সর্বশেষ ৩ বছরের জন্য নিয়োগ লাভ করেন গত বছর। স¤প্রতি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশের (টিআইবি) এক প্রতিবেদনে ওয়াসার পানি বিশুদ্ধ করতে বছরে ৩৩২ কোটি টাকার গ্যাস পুড়ছে নগরবাসী বলে উল্লেখ করা হয়। টিআইবির এই প্রতিবেদনের প্রতিবাদে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ওয়াসার পক্ষ থেকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমডি তাকসিম এ খান দাবি করেন-ওয়াসার লাইনের পানি শতভাগ সুপেয়। তবে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অকপটে তিনি স্বীকার করেন, লাইনের পানি নয়, তিনি ওয়াসার শান্তি জারের পানি পান করেন। এই সংবাদ সম্মেলনের পরই রাজধানীতে বসবাসকারী সাধারণ মানুষ, যারা দীর্ঘদিন ধরে ওয়াসার লাইনের পানি নিয়ে নানা সমস্যায় ভুগছেন, তাদের মঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। দেশের সব গণমাধ্যমগুলোও ওয়াসার লাইনের পানি নিয়ে বিশেষ সংবাদ প্রকাশ শুরু করে। এসব প্রতিবেদনে উঠে আসছে ওয়াসার লাইনের ময়লাযুক্ত ও ব্যবহার অনুপযোগী পানির সাত কাহন। ক্ষুব্ধ মানুষরা নারিন্দা ও রামপুরাসহ কয়েকটি এলাকা থেকে ওয়াসার লাইনের পানি দিয়ে ওয়াসার এই এমডিকে শরবত খাওয়াতে এসেছিলেন কারওয়ান বাজারেরর ওয়াসা ভবনে। বিষয়টি আগেই জানতে পেরে এই দিন তিনি তার দপ্তরেই আসেননি। ওয়াসার নিয়োগ সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, বোর্ডসভায়ই মূলত এমডি নিয়োগের সব বিষয় চ‚ড়ান্ত করা হয়। এই ক্ষেত্রে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি, নানা যোগ্যতা, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার পর মেধা তালিকা করে চ‚ড়ান্ত নিয়োগের একটি সুপারিশ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। মন্ত্রণালয় সেটি অনুমোদন করে। বর্তমান এমডির ক্ষেত্রে তা হয়নি। সর্বশেষ নিয়োগের কথা উল্লেখ করে এই কর্মকর্তা বলেন, উল্টো মন্ত্রণালয় যদি এমডির নাম লিখে ৩ বছরের জন্য নিয়োগ দেয়ার চিঠি দেয়, সেখানে বোর্ডের কী করণীয় কিছু থাকে? স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, তাকসিম এ খানকে নতুন করে নিয়োগ দিতে গত বছরের ৩১ আগস্ট স্থানীয় সরকার বিভাগের (পাস-২ শাখা) তৎকালীন উপসচিব ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম স্বাক্ষরিত একটি চিঠি ঢাকা ওয়াসার বোর্ড চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো হয়েছিলো। ওয়াসার সূত্র জানায়, ২০০৯ সালের ১০ অক্টোবর এই প্রতিষ্ঠানের এমডির পদে প্রথম নিয়োগ লাভ করেন প্রকৌশলী তাকসিম এ খান। এরপর আর এই পদ তাকে ছাড়তে হয়নি। পর পর পাঁচবার তিনি এমডির পদে নবায়ন করেন তার নিয়োগ। সর্বশেষ ৩ বছরের জন্য নিয়োগ লাভ করেন গত বছর। চলতি বছরের ১১ অক্টোবর তার ১০ বছর বা এক দশক পূর্ণ হবে। তাকসিম এ খান এসব বিষয়ে দৈনিক জাগরণকে বলেন, আমার নিয়োগের ক্ষেত্রে কোন অনিয়ম ছিলো বলে আমার জানা নেই। সরকারি নিয়ম মেনেই আমাকে ওয়াসার মত জন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেয়া হয়েছে এবং নিয়োগ নবায়নও হয়েছে। তিনি বলেন, আমার মনে হয় আমি এই প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি বন্ধে উদ্যোগ নিয়েছি, অনিয়ম বন্ধ করেছি, এতে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তারাই আমার নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। আবারও ওয়াসার লাইনের পানিকে শতভাগ সুপেয় পানি দাবি করেন প্রকৌশলী তাকসিম। ওয়াসার সুপেয় পানির শরবত দুই দিন আগেই ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী তাকসিম এ খান দাবি করেছিলেন, ওয়াসার পানি শতভাগ সুপেয়। সেই সুপেয় পানিতে তৈরি শরবত এমডিকে পান করাতে মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) ওয়াসা ভবনে হাজির হয়েছিলেন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা। তাদের সঙ্গে ছিল জুরাইন থেকে সংগ্রহ করা ওয়াসার পাইপ লাইনের পানি, লেবু আর চিনি। ওয়াসা ভবনের সামনেই সেই চিনি-পানি-লেবু দিয়ে শরবত তৈরি করেন তারা। তবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ওয়াসার এমডির দেখা পাননি তারা। পরে বিকেলে ওয়াসার একজন পরিচালক তাদের সঙ্গে দেখা করেন। তিনি আশ্বাস দেন, যা কিছু সমস্যা আছে, সমাধানের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। দেখা দেননি ওয়াসার এমডি, আশ্বাসে শেষ শরবত খাওয়ানো কর্মসূচি য়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) সুপেয় পানির শরবত খাওয়াতে ওয়াসা ভবনের সামনে অবস্থান নেওয়া ব্যক্তিরা শেষ পর্যন্ত এমডির দেখা পেলেন না। পরে ওয়াসার একজন পরিচালক তাদের সঙ্গে দেখা করেন। তিনি আশ্বাস দেন, যা কিছু সমস্যা আছে, সমাধানের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) বিকেলে ওয়াসার পরিচালক (কারিগরি) এ কে এম সহিদ উদ্দিন ডেকে নেন ওয়াসার সামনে অবস্থান নেওয়া জুরাইনের নাগরিক মিজানুর রহমানসহ বাকি চার জনকে। নিজ দফতরে তিনি মিজানুর রহমানসহ অন্যদের কাছ থেকে তাদের এলাকার সমস্যাগুলো শোনেন। এসময় মিজানুর রহমানসহ অন্যরা বলেন, তারা ওয়াসার যে পানি পান তা দুর্গন্ধযুক্ত ও অপরিষ্কার। সেই পানি কোনোভাবেই খাওয়ার উপযোগী নয়। এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এ কে এম সহিদ উদ্দিন বলেন, ওয়াসা সুপেয় পানিই সরবরাহ করে। তারপরও কিছু সমস্যা থাকতে পারে। সেগুলো সমাধানে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সমাধানের পর সবাইকে জানানো হবে। তবে ওয়াসার পানি শতভাগ সুপেয় উল্লেখ করে ওয়াসার এমডি যে বক্তব্য দিয়েছিলেন, তার সঙ্গে একমত পোষণ করেন সংস্থাটির এই পরিচালক। তিনি বলেন, ওয়াসার পক্ষ থেকে খারাপ পানি সরবরাহ করা হয় না। তবে লাইনে সমস্যা থাকতে পারে। সে কারণে পানিতে দুর্গন্ধ থাকতে পারে বা অপরিষ্কার হতে পারে। এসময় এমডি না থাকায় তাকেই জুরাইন-রামপুরা থেকে আনা পানি খেতে বলা হলে এ কে এম সহিদ উদ্দিন বলেন, এটা ওয়াসার পানি নাকি পুকুরের পানি, তা নিশ্চিত নয়। তাই এই পানি খাব না। যেসব সমস্যার কথা বললেন, আগে সেগুলো সমাধান করি। এরপর প্রয়োজনে গিয়ে পানি খেয়ে আসব। পরে মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, উনারা আশ্বাস দিয়েছেন, পানি সরবরাহের লাইনে যেসব সমস্যা রয়েছে সেগুলো সমাধান করবেন। আমরা আপাতত ফিরে যাচ্ছি। তবে তাদের কথামতো সমাধান না হলে জুরাইনবাসীকে নিয়ে বড় আন্দোলন গড়ে তুলব। এক সংবাদ সম্মেলনে দুই দিন আগেই ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী তাকসিম এ খান দাবি করেছিলেন, ওয়াসার পানি শতভাগ সুপেয়। সেই সুপেয় পানিতে তৈরি শরবত এমডিকে পান করাতেই ওয়াসা ভবনে স্ত্রী ও কন্যাকে নিয়ে হাজির হন জুরাইনের মিজানুর রহমান। এছাড়া একই এলাকা থেকে আসেন মতিয়ার রহমান। পূর্ব রামপুরা থেকে আসেন মনিরুল ইসলাম। তবে শেষ পর্যন্ত এমডির দেখা আর তারা পাননি। এর আগে, গত ২০ এপ্রিল এক সংবাদ সম্মেলনে ওয়াসার সরবরাহ করা পানিতে শতভাগ সুপেয় বলে দাবি করেন ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী তাকসিম এ খান। তিনি বলেন, ঢাকা শহরের অধিকাংশ মানুষ ফুটিয়ে নয়, সরাসরি ওয়াসার ট্যাপের পানি পান করেন। আর ওয়াসার পানি শতভাগ সুপেয়। ঢাকা ওয়াসার সার্বিক মান নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) প্রকাশিত প্রতিবেদনের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
ঢাকা ওয়াসার পানি ফুটাতে ৩৩২ কোটি টাকার গ্যাস খরচ!:
সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায় শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে টিআইবি জানায়, বিশ্বের প্রায় সব দেশেই পাইপলাইনের মাধ্যমে সুপেয় পানি সরবরাহ করা হয়। কিন্তু ওয়াসার পানি সুপেয় নয়। তাদের সরবরাহ করা পানি ফুটিয়ে পানযোগ্য করতে বছরে ৩৩২ কোটি টাকার গ্যাস খরচ করতে হয় রাজধানীবাসী। একই প্রতিবেদনে টিআইবি আরও বলেন, দুর্নীতি নেই— ঢাকা ওয়াসায় এমন জায়গা খুঁজে পায়নি টিআইবি! এ প্রতিবেদনের জবাবে ওয়াসার এমডি বলেন, প্রতিবেদনটি একেবারেই গবেষণামূলক নয়, এটি একপেশে ও ধারণামূলক। আমরা ২৪৩টি জায়গা থেকে ওয়াসার পানি সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেছি। কোথাও কোনো ধরনের জীবাণু পাওয়া যায়নি। ঢাকা ওয়াসা ৯৮ ভাগ দুর্নীতিমুক্ত একটি প্রতিষ্ঠান। ওয়াসার এমডিকে সুপেয় পানির শরবত পান করাতে হাজির রাজধানীবাসী দুই দিন আগেই ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী তাকসিম এ খান দাবি করেছিলেন, ওয়াসার পানি শতভাগ সুপেয়। সেই সুপেয় পানিতে তৈরি শরবত এমডিকে পান করাতে ওয়াসা ভবনে হাজির হয়েছেন রাজধানীবাসী। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) সকাল ১১টা থেকে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ওয়াসা ভবনের উল্টো দিকের বিএফডিসি ভবনের নিচে অবস্থান নেন রাজধানীর কয়েকটি এলাকার বাসিন্দা। সঙ্গে করে তারা নিয়ে এসেছেন ওয়াসার সুপেয় পানিতে তৈরি শরবত। হাতে রয়েছে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড। ওয়াসার এমডি, ডিএমডিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাউকেই ওয়াসা ভবনে প্রবেশ করতে দেখা যায়নি। কর্মসূচি পালন করতে আসা রাজধানীবাসী বলছেন, ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে এ কর্মসূচির কথা ছড়িয়ে পড়ার কারণেই তারা কেউ অফিসে আসছেন না। তবে ওয়াসার এমডিকে শরবত খাওয়াতে আসা রাজধানীবাসী বলছেন, তারা বিকেল ৪টা পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন এমডির জন্য। ওয়াসার এমডিকে শরবত পান করানোর এ কর্মসূচির ডাক দিয়েছিলেন রাজধানীর জুরাইন এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রহমান। স্ত্রী শামীম হাশেম খুকি ও তাদের মেয়েকে নিয়ে তিনি হাজির হয়েছেন ওয়াসা ভবনের সামনে। এছাড়া একই এলাকা থেকে এসেছেন মতিয়ার রহমান। পূর্ব রামপুরা থেকে এসেছেন মনিরুল ইসলাম। ওয়াসা ভবনের উল্টোদিকে এসেই তারা ওয়াসার পানি দিয়ে শরবত তৈরি করেন। লেবু-চিনির সেই শরবতই ওয়াসার এমডিকে পান করাতে চান তারা। মিজানুর রহমান বলেন, আমার এলাকায় ওয়াসার লাইন দিয়ে নর্দমার পানি আসে। দুর্গন্ধযুক্ত সেই পানি পান করা যায় না। অথচ ওয়াসার এমডি বলেন, শতভাগ বিশুদ্ধ। তাই উনার বিশুদ্ধ পানি দিয়ে উনাকে শরবত খাওয়াতে চাই। ওয়াসার এমডির কাছে কৈফিয়ত চাইতে এসেছেন জানিয়ে মিজানুর রহমান বলেন, উনি যে বললেন সব পানি সুপেয়, এই কারণে আমি আমার এলাকা থেকে উনার সরবরাহ করা পানি নিয়ে এসেছি উনাকে খাওয়ানোর জন্য। উনি খেলেই বুঝতে পারবেন যে কী পানি সরবরাহ করছেন। তিনি সুপেয় পানির যে দাবি করেছেন তা আসলে সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমার এলাকা জুরাইনে ৪০ বছর আগে ওয়াসার পাইপ লাইন বসানো হয়েছে। প্রথম ১০ বছর আমরা ভালো পানি পেয়েছি। এরপর থেকে ভালো পানি পাচ্ছি না। যা পানি পাই তা স্যুয়ারেজের পানির মতো। এই পানি খাওয়া যায় না, এমনকি গোসলের জন্যও ব্যবহার করা যায় না। এর বিকল্প হিসেবে এলাকার বেশ কয়েকটি মসজিদে গভীর নলক‚প বসানো হয়েছে। এলাকার মানুষকে টাকার বিনিময়ে ওই নলক‚প থেকে পানি নিয়ে দৈনন্দিন কাজকর্ম সারতে হয়। ২০১২ সালে জুরাইনবাসীর পক্ষ থেকে সাড়ে তিন হাজার বাসিন্দার গণসাক্ষর সংগ্রহ করে বর্তমান এমডির হাতে দিয়েছিলেন মিজানুর রহমান। এ তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, সে সময় আমরা যে প্রতিনিধি দল তার সঙ্গে দেখা করি, তাদের সঙ্গে তিনি খুব তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে কথা বলেন। জানান, টাকা নেই। তিনি আমাদের সঙ্গে বাজে ব্যবহার করেন। এ কারণে উনার বক্তব্য অনুযায়ী সুপেয় পানি নিয়ে আমরা এসছি উনাকে খাওয়াতে এবং এই পানি সরবরাহের বিষয়ে কৈফিয়ত চাইতে। তবে ওয়াসার জনসংযোগ শাখা জানিয়েছে, ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান এখনও অফিসে আসেননি। এদিকে, ওয়াসা ভবনের প্রবেশপথে সকাল থেকে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ভবনের ভেতরে প্রবেশেও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। কর্মসূচি চলাকালে কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়া কাউকে কার্যালয়ে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। গণমাধ্যমকর্মী পরিচয় দিয়েও এই প্রতিবেদক ভবনের ভেতরে প্রবেশ করতে পারেননি। তেজগাঁও থানার উপপরিদর্শক আমিনুল ইসলাম বলেন, এই কর্মসূচির কারণেই আমাদের ডাকা হয়েছে। আমরা প্রবেশপথে নিরাপত্তা দিচ্ছি। এছাড়া এমডির দফতরের সামনেও আমাদের পুলিশ সদস্যরা আছেন।ওয়াসার পানি শতভাগ সুপেয়!
গত ২০ এপ্রিল এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী তাকসিম এ খান বলেন, ঢাকা শহরের অধিকাংশ মানুষ ফুটিয়ে নয়, সরাসরি ওয়াসার ট্যাপের পানি পান করেন। আর ওয়াসার পানি শতভাগ সুপেয়। ঢাকা ওয়াসার সার্বিক মান নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) প্রকাশিত প্রতিবেদনের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। ঢাকা ওয়াসা: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায় শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে টিআইবি জানায়, বিশ্বের প্রায় সব দেশেই পাইপলাইনের মাধ্যমে সুপেয় পানি সরবরাহ করা হয়। কিন্তু ওয়াসার পানি সুপেয় নয়। তাদের সরবরাহ করা পানি ফুটিয়ে পানযোগ্য করতে বছরে ৩৩২ কোটি টাকার গ্যাস খরচ করতে হয় রাজধানীবাসী। একই প্রতিবেদনে টিআইবি আরও বলেন, দুর্নীতি নেই ঢাকা ওয়াসায় এমন জায়গা খুঁজে পায়নি টিআইবি! এ প্রতিবেদনের জবাবে ওয়াসার এমডি বলেন, প্রতিবেদনটি একেবারেই গবেষণামূলক নয়, এটি একপেশে ও ধারণামূলক। আমরা ২৪৩টি জায়গা থেকে ওয়াসার পানি সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেছি। কোথাও কোনো ধরনের জীবাণু পাওয়া যায়নি। ঢাকা ওয়াসা ৯৮ ভাগ দুর্নীতিমুক্ত একটি প্রতিষ্ঠান।
এটা শরবত না, ওয়াসার পানি!
কাঁচের গ্লাসে এই পানি দেখে যে কেউ ভাবতে পারেন এটা অরেঞ্জ জুস কিংবা বেলের শরবত! হয়তো ইফতারে খাওয়ার জন্য তৈরি করা হচ্ছে। কিন্তু আসলে কি এটা অরেঞ্জ জুস? না। এটা হচ্ছে ঢাকা ওয়াসার পানি! এই পানি রাজধানীর কদমতলীর পাটেরবাগের দক্ষিণ দনিয়া এলাকায় সরবরাহ করছে ওয়াসা। ওই এলাকার অধিকাংশ বাড়িতে মিলছে ব্যবহার অযোগ্য এ ধরনের নোংরা পানি। সরেজমিনে কদমতলী এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় প্রত্যেক বাড়িতেই পানির সংকট চরমে। আর যেটুকু সময় পানি সরবরাহ করা হয়, তার রঙ ওই কমলালেবুর মতো। তাও নোংরা ও দুর্গন্ধযুক্ত। তবে, সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা দক্ষিণ দনিয়া এলাকায়। সেখানকার বাসিন্দাদের দুর্ভোগের শেষ নেই পানি নিয়ে। পানি নিয়ে সংগ্রাম যেন তাদের নিত্যদিন। রোজার সময় খাবার পানির জন্য তাদের ভরসা দূরের ডিপ টিউবওয়েল কিংবা মসজিদের পানি। আর যাদের একটু সামর্থ আছে তারা জার কিংবা বোতলজাত পানি কিনে ব্যবহার করেন। দক্ষিণ দনিয়া এলাকায় ডলির বাড়ি নামক বাড়িতে ভাড়া থাকেন জনৈক আবুল কালাম। পানির কি অবস্থা দেখাতে তিনি এই প্রতিবেদককে নিয়ে যান তার বাসায়। বাসার ওয়াশরুমে গিয়ে পানি ট্যাপ ছাড়তেই চমকে ওঠার মতো অবস্থা। ট্যাপ দিয়ে বের হচ্ছে কমলা রঙের পানি! যা দেখতে একেবারে অরেঞ্জ জুসের মতো। আবার যে কেউ বেলের শরবতও ভাবতে পারেন। তবে, কমলা রঙের এই পানি যেমন নোংরা তেমনি দুর্গন্ধ। আবুল কালাম বলেন, গত দেড় বছর ধরে এই নোংরা পানি আসছে। এই পানি খাওয়াও যায় না, রান্না-বান্নাও করা যায় না। কাপড়-চোপড় পরিষ্কার করলেও তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের এদিকে অধিকাংশ বাড়ির পানির রঙ নোংরা ও দুর্গন্ধ। তাই দূর থেকে ডিপ টিউবওয়েল কিংবা মসজিদের পানি নিয়ে এসে খাই। একাধিকবার নোংরা পানির বিষয়ে অভিযোগ করেছি, কোনো কাজ হয়নি। স্থানীয় একটি মসজিদের সামনে এক বাড়িওয়ালার কাছে তার বাড়ির পানির অবস্থা কেমন জানতে চাইলে এই প্রতিবেদককে তিনি রাস্তার ড্রেনের পানি দেখিয়ে বলেন, এখানে যে পানি দেখতে পারছেন, আমার বাড়িতেও একই পানি। সরেজমিন ঘুরে আরো একটি বিষয় দেখা গেছে যে, এই এলাকায় বেশ কিছু বাড়ির রঙও হলুদে আকার ধারণ করেছে। বাড়ির রঙগুলো এমন হয়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে আবদুল মানিক নামের একটি বাড়ির কেয়ারকেটার বলেন, এই দেখেন আমাদের বাড়ির রঙও হলুদ হয়ে গেছে। ট্যাংক প্রতিদিন ধোয়ার পরেও লাভ হয় না। বাড়িতে থাকার মতো অবস্থা নেই। তিনি বলেন, খাওয়াতো দূরে থাক, এই পানি কোনো কাজে ব্যবহার করা যায় না। এ কারণে ভাড়াটিয়াও থাকতে চায় না। মানিক বলেন, ওয়াসার লোকদেরকে বললে বলে দেখতেছি, তারপর আর খোঁজ থাকে না। শুধু এই বাসায় না, আশপাশের সব বাসায় একই অবস্থা। তবে, খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, কিছু কিছু বাড়িতে আবার পরিষ্কার পানিও আসছে। এব্যাপারে দক্ষিণ দনিয়ার পাটেরবাগ এলাকার বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, স¤প্রতি একটি নতুন লাইন স্থাপন করেছে ঢাকা ওয়াসা। নতুন লাইনে পরিষ্কার পানি আসছে, আর পুরনো লাইনে নোংরা পানি আসছে। অবশ্য নতুন লাইনের সংযোগ এখনো সকলে পায়নি। তবে, নতুন লাইনের পানিও পর্যাপ্ত পাচ্ছে না। এ বিষয়ে এক বাড়ির মালিক শহীদুল্লাহ বলেন, নতুন লাইনে পানির রঙের কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা হচ্ছে পানি নিয়মিত পাচ্ছি না। তিনি বলেন, পনি না পেয়ে ওয়াসার সাথে যোগাযোগ করলে বলে লাইনে সমস্যা, আজকে মেশিন নষ্ট-নানা অজুহাত দিয়ে থাকে।
৫৯টি এলাকায় ওয়াসার পানি বেশি দূষিতঃ
ঢাকা ওয়াসার ১০টি জোনের ৫৯টি এলাকার ওয়াসার পানি বেশি দূষিত বলে আদালতে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছেন ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু। সম্প্রতি হাইকোর্টের বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়। পরে মোতাহার হোসেন সাজু সাংবাদিকদের বলেন, ওয়াসার দেয়া প্রতিবেদন আজ আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে। এতে ঢাকার ১০টি জোনে ৫৯ এলাকায় ওয়াসার পানি বেশি দূষিত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। জোনগুলো হলো- জোন-১: যাত্রাবাড়ী, বাসাবো, মুগদা, রাজারবাগ, কুসুমবাগ, জুরাইন, মানিকনগর, মান্ডা, ধোলাইরপার ও মাতুয়াইল।
জোন-২: বাঘলপুর, লালবাগ, বকশিবাজার ও শহীদনগর।
জোন-৩: জিগাতলা, ধানমন্ডি, শুক্রাবাদ, কলাবাগান, ভ‚তেরগলি ও মোহাম্মদপুর।
জোন-৪: শ্যাওরাপাড়া, পীরেরবাগ, মনিপুর, পাইকপাড়া, কাজীপাড়া ও মিরপুর।
জোন-৫: মহাখালী ও তেজগাঁও।
জোন-৬: সিদ্ধেশ্বরী, শাহজাহানপুর, খিলগাঁও, মগবাজার, নয়াতোলা, রামপুরা, মালিবাগ ও পরিবাগ।
জোন-৭: কদমতলী, ধনিয়া, শ্যামপুর, রসুলবাগ মেরাজনগর, পাটেরবাগ, শনির আখড়া, কোনাপাড়া ও মুসলিমনগর।
জোন-৮: বাড্ডা, আফতাবনগর, বসুন্ধরা ও ভাটারা।
জোন-৯: উত্তরা, খিলক্ষেত, ফায়েদাবাদ, মোল্লারটেক ও রানাগোলা।
জোন-১০: কাফরুল, কাজীপাড়া, মিরপুর, কচুক্ষেত ও পল্লবী।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, রাজধানীর ওয়াসার পানির ১০৬৫টি নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করতে ৭৫ লাখ ৬১ হাজার টাকা দরকার। প্রতিবেদনটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু হাইকোর্টে দাখিল করবেন বলে জানানো হয়। এর আগে ঢাকা ওয়াসার কোন কোন এলাকার পানি সবচেয়ে বেশি অনিরাপদ, তা পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দাখিল না করায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ঢাকা ওয়াসার পানি পরীক্ষায় যে অর্থ খরচ হবে, তা নির্ধারণ করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন আদালত। তারপরের দিন ঢাকা ওয়াসার অনিরাপদ পানি পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য ছিল। কিন্তু ওয়াসার পক্ষ থেকে বলা হয়, ঢাকা ওয়াসার পানি পরীক্ষায় প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। তখন আদালত অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ঢাকা ওয়াসার ১১টি পানির জোন রয়েছে। প্রত্যেকটি থেকে দুই বোতল পানি নিয়েই তো পরীক্ষা করা যায়। কিন্তু কোনো কথাই শুনছে না স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। তারা হাইকোর্টকে হাইকোর্ট দেখাচ্ছে। শুনানিকালে আদালতে রিটকারী আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদের কাছে অনিরাপদ পানি-সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে চাইলে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত বেশ কিছু প্রতিবেদন আদালতের কাছে তুলে ধরেন তিনি। ওইসব প্রতিবেদনে ঢাকার ১৬টি এলাকার ওয়াসার পানি ব্যবহারের একেবারে অনুপযোগী বলে তথ্য উঠে আসে। এর পর পানি পরীক্ষায় যে অর্থ খরচ হবে, তা প্রতিবেদন আকারে দাখিলের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। তখন ওয়াসার পক্ষ থেকে খরচ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলে সাত দিন সময় চাওয়া হয়। কিন্তু এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দাখিলের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে আদালত বলেন, নির্দিষ্ট দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল না করলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে তলব করা হবে। উল্লেখ্য, গত বছরের অক্টোবরে পানি সংক্রান্ত বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন আইনজীবী তানভীর আহমেদ। ওই রিট আবেদনের পর গত বছরের ৬ নভেম্বর রাজধানী ঢাকায় পাইপের মাধ্যমে সরবরাহ করা ওয়াসার পানি পরীক্ষার জন্য পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া কমিটিকে পানি পরীক্ষা করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেন।
শরবত বানানো মিজানুরকে হুমকির অভিযোগঃ
ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খানকে সুপেয় পানির শরবত খাওয়াতে চাওয়া মিজানুর
রহমানকে ওয়াসার কর্মকর্তারা হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বুধবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে ওয়াসার কয়েকজন কর্মকর্তা রাজধানীর জুরাইনে তার বাড়ি গিয়ে শাসিয়ে এসেছেন বলে অভিযোগ করেছেন মিজানুর। মিজানুর রহমান বলেন, আমি তখন এলাকার কয়েকটি ওয়াসার কল থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ করছিলাম। এসময় আমার স্ত্রীর ফোনে পেয়ে বাসায় যাই। গিয়ে দেখি ওয়াসার কয়েকজন লোক বাড়ির ভেতর মোবাইলে ভিডিও করছেন। তারা বলেছেন, আমরা চুরি করে পানি ব্যবহার করি, বিল দেই না। আমার সঙ্গে আক্রমণাত্মক কথা বলতে থাকে। গতকাল আমরা নাকি শরবত নিয়ে নাটক করেছি। তাই আমাদের দেখে নেবে বলে হুমকি দিয়েছে। তখন আমিও মোবাইলে ভিডিও করা শুরু করলে তারা দ্রæত চলে যায়। তবে হুমকির বিষয়ে লিখিত কিংবা মৌখিকভাবে কদমতলী থানা পুলিশকে কিছু জানাননি মিজানুর রহমান। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খানকে ফোন দেয়া হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ফোন ধরেননি ওয়াসার জনসংযোগ কর্মকর্তা আব্দুল কাদেরও।
সংসদীয় কমিটির ক্ষোভ:
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মতো রাজধানীতে সুপেয় পানি সরবরাহ বৃদ্ধি ও নাগরিক সেবা বাড়াতে ওয়াসাকে উত্তর দক্ষিণে ভাগ করার জন্য সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি। একইসঙ্গে রাজধানীর পানি সংকট বিষয়ে জানতে ঢাকা ওয়াসার এমডিকে সংসদীয় কমিটিতে ডাকা হলেও তিনি বৈঠকে না আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন কমিটির সদস্যরা। পাশাপাশি ঢাকা ওয়াসা প্রকল্পগুলোর কাজের অগ্রগতি সন্তোষজনক না হওয়ায় এবং জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বিভন্ন প্রকল্পের বাস্তবায়নের ধীর গতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে কমিটি। সম্প্রতি সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত অনুমিত হিসাব স¤পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ২য় বৈঠকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন কমিটির সদস্যরা। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কমিটির সভাপতি উপাদক্ষ মো. আব্দুস শহীদ। কমিটির সদস্য নুর-ই-আলম চৌধুরী, শেখ ফজলে নূর তাপস, আহসান আদেলুর রহমান এবং ওয়াসিকা আয়শা খান বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও বৈঠকে স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী, বিভিন্ন প্রকল্পের প্রধানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি আব্দুস শহীদ সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকা ওয়াসার এমডিকে নিয়ে অনেক বিতর্ক হলো এতদিন। এ জন্য ওয়াসার বিষয়ে তার কাছে জানার জন্য সংসদীয় কমিটিতে ডাকা হয়েছিল। কিন্তু তিনি না আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন কমিটির সদস্যরা। কমিটির সদস্যরা পরবর্তী বৈঠকে ওয়াসার এমডির উপস্থিতি নিশ্চিত করার তাগিদ দেয়। জানা যায়, বৈঠকে উপস্থিত স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে ওয়াসার এমডির অনুপস্থিতির কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে উনাকে (এমডি) পত্রের মাধ্যমে জানানো হয়। একই সঙ্গে টেলিফোনেও বিষয়টি অবহিত করা হয়। সংসদের গণসংযোগ বিভাগ জানায়, কমিটি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতাধীন গৃহীত প্রকল্পের বিষয় আগামী আগামী ৩০ জুনের মধ্যে মূল্যায়ন রিপোর্ট প্রদানের সুপারিশ করেছে। এছাড়া ঢাকার বাইরের বিভিন্ন সিটি করপোরেশনের যেসব কর্মকর্তা বৈঠকে উপস্থিত হয়নি ব্যাখ্যাসহ পরবর্তী বৈঠকে তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করার সুপারিশ করে কমিটি।


যোগাযোগ

বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যলয়

কাব্যকস সুপার মার্কেট, ৩ ডি কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫।

মোবাইলঃ ০১৬২২৬৪৯৬১২, ০১৬০০০১৪০৪০

মেইলঃ tadantachitra93@gmail.com, tchitranews@gmail.com

সামাজিক যোগাযোগ

Web Design & Developed By
A

তদন্ত চিত্র কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েব সাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি।