TadantaChitra.Com | logo

১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বিএনপি স্মরণও করলো না দলের দুর্দিনে কান্ডারী আবদুস সাত্তারকে!

প্রকাশিত : অক্টোবর ০৫, ২০১৯, ১৮:৪৬

বিএনপি স্মরণও করলো না দলের দুর্দিনে কান্ডারী আবদুস সাত্তারকে!

“মোহাম্মদ অলিদ সিদ্দিকী তালুকদার”

৫ অক্টোবর ৩৪তম মৃত্যুবার্ষিকী বিচারপতি আবদুস সাত্তার বাংলাদেশের ৮ম রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির ২য় চেয়ারম্যান।

জন্ম ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দ দাড়কা গ্রাম, বোলপুর, বীরভূম জেলা, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, মৃত্যু ৫ অক্টোবর ১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দ, ঢাকা, বাংলাদেশ বিচারপতি আব্দুস সাত্তার (১৯০৬ – ৫ অক্টোবর ১৯৮৫) বাংলাদেশের অষ্টম রাষ্ট্রপতি। তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারপতি ছিলেন। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর তিনি প্রথমে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এসময়ে তার বয়স ছিল ৭৬ বছর। পরে তিনি ১৯৮১ সালের ১৫ নভেম্বর তারিখে দেশব্যাপী অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ৬৬% ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার শাসনকালে সরকারের মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। ১৯৮২ সালে তিনি শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করেন। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ তার জায়গায় সামরিক আইন জারীর মাধ্যমে প্রধান সামরিক প্রশাসক হিসেবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের হাতে চলে যায়।

পরিচ্ছেদসমূহ: আব্দুস সাত্তার ১৯৮১ সালের১৫ নভেম্বর তারিখে দেশব্যাপী অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ৬৬% ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। এ নির্বাচন ৮৩ জন প্রার্থী মনোনয়ন দাখিল করেন। ১১ জনের মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে বাদ পড়ে এবং কারো আপীল গৃহীত না হওয়ার বৈধভাবে মনোনয়ন প্রার্থীর সংখ্যা দাড়ায় ৭২ জন। এই ৭২ জনের মধ্যে ৩৩ জন প্রার্থী প্রার্থিতা প্রত্যাহার করায় সর্বশেষ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ৩৯ জন ছিল। ১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ৩৯জন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেনঃ ১। জনাব আফতাব উদ্দিন শেখ ২। জনাব আবদুর রহমান খান ৩। জনাব আব্দুস সাত্তার ৪। আলহাজ্ব গোলাম মোর্শেদ ৫। আলহাজ্ব মাওলানা খায়রুল ইসলাম যশোরী ৬। আলহাজ্ব মাওলানা শেখ মোঃ ওয়াবদুল্লাহ বিন্ সাঈদ জালালাবাদী ৭। জনাব আলী হোসেন আক্তার ৮। জনাব এ বি এ মসিউদ্দৌলা ৯। জনাব এম এ মজিদ ১০। কাজী মোঃ শাহজাহান ১১। জনাব এম কে এম আবুল কালাম আজাদ ১২। জনাব কে এইচ নূরুল ইসলাম ১৩। জনাব সাইফুর রহমান ১৪। জনাব সাদেক মিঞা ১৫। জনাব জাকির হোসাইন ১৬। জেনারেল মুহাম্মদ আতাউল গণি ওসমানী, পি,এস,সি (অবঃ) ১৭। ডঃ আলীম আল রাজী ১৮। ডঃ কামাল হোসেন ১৯। জনাব নূরুল হক ২০। প্রফেসর মোজাফ্ফর আহমেদ ২১। মাওলানা মোহাম্মদউল্লাহ ২২। জনাব মনরঞ্জন দাস ২৩। মাওলানা গোলাম মোস্তফা খান ২৪। মাওলানা মোঃ আব্দুর রহিম ২৫। মেজর (অবঃ) এম এ জলিল ২৬। জনাব মোঃ আকরাম হোসেন মোল্লা ২৭। জনাব মোঃ আব্দুল জব্বার ২৮। জনাব মোঃ খলিলুর রহমান মজুমদার ২৯। জনাব মোঃ জিল্লুর রহমান ৩০। জনাব মোঃ তোহা ৩১। জনাব মোঃ শরিফ নূর মোহাম্মদ ৩২। জনাব মোহাম্মদ রওশন আলী ৩৩। জনাব শাহজাহান চৌধুরী ৩৪। জনাব সালেহ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী ৩৫। জনাব সিদ্দিকুর রহমান ভূঞা ৩৬। জনাব সিরাজুল ইসলাম ৩৭। মিসেস সেলিনা মজুমদার ৩৮। জনাব সৈয়দ শামসুর রহমান ৩৯। জনাব হারুনর রশিদ

বিচারপতি ও রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তার ১৯০৬ সালে পশ্চিমবঙ্গের বোলপুর জেলার বীরভূমের দাড়কা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯২৮ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ ও ১৯২৯ সালে বিএল পাস করেন। এরপর তিনি কলকাতা জজকোর্টে আইন ব্যবসা শুরু করেন। এ সময় তিনি শেরে বাংলা ফজলুল হকের কৃষক প্রজা পার্টির সাথে সংশ্লিষ্ট হন। ১৯৩৯ সালে তিনি কলকাতা করপোরেশনের কাউন্সিলার নির্বাচিত হন এবং ১৯৪২ সাল পর্যন্ত কলকাতা ইমপ্র“ভমেন্ট ট্রাইবুন্যালের এ্যাসেসারের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৪৫ সালে তিনি কলকাতা করপোরেশনের চিফ একজিকিউটিভের দায়িত্ব পান।

দেশবিভাগের পর তিনি ১৯৫০ সালে ঢাকায় চলে আসেন। ঢাকায় এসেই তিনি হাইকোর্টে আইন ব্যবসা শুরু করেন। ১৯৫৩ শেরে বাংলার নেতৃত্বে শ্রমিক পার্টি গঠিত হলে তিনি এই পার্টিতে যোগ দেন। ১৯৫৫ তিনি পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৫৬ সালে গণপরিষদের অধিবেশনে দেশের খসড়া শাসনতন্ত্র বিল উত্থাপন করা হলে তিনি এই বিলের প্রতি জোরালো সমর্থন জ্ঞাপন করেন। ১৯৫৭ সালে আইআই চুন্দ্রীগড়ের কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভায় আবদুস সাত্তার স্বরাষ্ট্র ও শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পান।

এ বছরেই মন্ত্রীসভা ভেঙে গেলে তিনি ঢাকায় ফিরে আসেন। এরপর তিনি ঢাকা হাইকোর্টের বিচারপতির পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। বিচারপতি হিসাবে তিনি ১৯৫৭ সাল থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৯ সালে তিনি পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হন এবং একই সালে পাকিস্তানের প্রধান নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পান।

তিনি ১৯৭৩ সালে জীবন বীমা করপোরেশনের পরিচালক মন্ডলীর চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান। এই পদে এক বছর থাকার পর তাকে ১৯৭৪ সালে সাংবাদিক বোর্ডের চেয়ারম্যান করা হয়। ১৯৭৫ সালের ১০ নভেম্বর প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও প্রেসিডেন্টের বিশেষ সহকারী হিসাবে তিনি নিয়োগ পান। ১৯৭৭ সালের ৩ জুন সামরিক প্রেসিডেন্ট মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান তাকে ভাইস-প্রেসিডেন্ট হিসাবে নিয়োগ দেন। ১৯৭৮ সালে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান প্রবর্তিত জাগদলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে ও পরবর্তীতে বিএনপি গঠিত হলে গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে সেনাবাহিনীর কতিপয় সদস্যের গুলিতে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নিহত হলে তিনি বাংলাদেশের অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট হন। ১৯৮১ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হলে তিনি দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৯৮২ সালে ২৪ মার্চ এক সামরিক অভ্যুত্থানে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন। দেশে সামরিক শাসন থেকে বেসামরিক ব্যবস্থায় প্রত্যাবর্তনের ক্ষেত্রে তার অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারী বিএনপি’র প্রাথমিক সদস্যপদ লাভের মাধ্যমে একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন খালেদা জিয়া। তাঁর এই যোগদানে বিএনপিতে প্রাণ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। কিন্তু খালেদা জিয়ার যোগদানে নাখোশ হয় কিছু কুচক্রী বিএনপি নেতা। খালেদা জিয়া যাতে নেতৃত্বে না আসতে পারেন তার জন্য করা হয় গোপন ষড়যন্ত্র।

অকৃতজ্ঞ বিএনপি: বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তুলনামূলক বেশি অকৃতজ্ঞ দল হচ্ছে বিএনপি। সম্ভবত সবচেয়ে বেশি স্বার্থপর দলও হচ্ছে এই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল। এরা কোন কষ্ট এবং ত্যাগ-তিতিক্ষা ছাড়াই ক্ষমতায় আসতে চায়, এবং দেশ ও জনগণকে কিছু না দিয়েই সব কিছু ভোগ করতে চায়। অন্যের কাঁধে বন্দুক রেখে শিকার করতে চায়। জনগণও বিকল্প না পেয়ে বার বার ক্ষমতায় বসিয়েছে অকৃতজ্ঞ ও স্বার্থপর এই দলটিকে।

বিএনপির অকৃতজ্ঞতার একটি জ্বলন্ত উদাহরণ হচ্ছে বিচারপতি আব্দুস সাত্তার। এই সাত্তার হচ্ছেন বিএনপির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। জিয়াউর রহমানের পরে এবং খালেদা জিয়ার আগে দলটির চেয়ারম্যান ছিলেন। সবচেয়ে দু:সময়ে এই দলের হাল ধরেছিলেন। বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ছিলেন দেশের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। ৮০’র দশকে বিএনপিকে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন। গৃহবধু খালেদা জিয়াকে রাজনীতিতে এনে দলের চেয়ারপার্সন বানিয়েছিলেন। দলটির অন্যতম এই প্রতিষ্ঠাতা, সাবেক চেয়ারম্যান, দেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি এবং ১৯৭০ সালের নির্বাচনের সময়ে দেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি আব্দুস সাত্তারকে ভুলে গেছে বিএনপি। তাঁকে একটু স্মরণ করার প্রয়োজনও মনে করেনা খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের দল। শেষ কবে স্মরণ করেছিল– সেটা আমাদের জানা নেই।

আজ বিচারপতি আব্দুস সাত্তারের ৩৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৮৫ সালের এই দিনে মারা যান দেশের এই অবিসংবাদিত রাজনীতিবিদ। দিনটি উপলক্ষে বিএনপির এমনকি ছোট্ট কোন আয়োজন আছে কি? মহাসচিব বা অন্য কারো পক্ষ থেকে কোন বাণী আছে কি? নাই। নাই। নাই। বিচারপতি আব্দুস সাত্তারের মতো এদেশের আরেক অবিসংবাদিত রাজনীতিবিদ মশিয়ুর রহমান জাদু মিয়াকেও ভুলে গেছে বিএনপি। জাদু মিয়া বিএনপির শুধু অন্যতম প্রতিষ্ঠাতাই নন, এই দলটির প্রতিষ্ঠায় তাঁর ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। জিয়াউর রহমান সামনে ছিলেন, কিন্তু নেপথ্যে থেকে দল প্রতিষ্ঠা ও গুছিয়ে আনার সব কাজ করেছেন এই জাদু মিয়া। বিএনপির যে ধানের শীষ প্রতীক– এটাও জাদুর মিয়ার কারণে পাওয়া। কিছুদিন আগে মারা যান সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুর রহমান বিশ্বাস। এদেশে একটি ক্যু’ কিন্তু ব্যর্থ করে দিয়েছিলেন এই আব্দুর রহমান বিশ্বাস। সেদিন সেই সামরিক ক্যু’ ব্যর্থ করে দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন দেশের সে সময়ের প্রেসিডেন্ট। সেই আব্দুর রহমান বিশ্বাস মারা গেলেন নিরবে-নির্ভৃতে এই তো কিছু দিন আগে। বিএনপি কি তার খবর রেখেছিল মারা যাওয়ার সময় বা তার আগে। আব্দুর রহমান বিশ্বাসও আজ হারিয়ে গেছেন বিএনপির স্মরণ থেকে।

অকৃতজ্ঞ ও স্বার্থপর বিএনপি বিচারপতি সাত্তার কিংবা জাদু মিয়াকে স্মরণ করে না। আর করবেই না কী করে? বুলু-টুলুদের কথায় যে দল ১১ জনকে সুপারসিড করে মঈন ইউ আহমদকে সেনাপ্রধান করে, তারা তো তাদের লোককে স্মরণ করবে না এটাই স্বাভাবিক।

লেখক: ডিইউজে সদস্য, আহবায়ক জাতীয় জনতা ফোরাম, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: দৈনিক আপন আলো।


যোগাযোগ

বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যলয়

কাব্যকস সুপার মার্কেট, ৩ ডি কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫।

মোবাইলঃ ০১৬২২৬৪৯৬১২, ০১৬০০০১৪০৪০

মেইলঃ tadantachitra93@gmail.com, tchitranews@gmail.com

সামাজিক যোগাযোগ

Web Design & Developed By
A

তদন্ত চিত্র কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েব সাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি।