TadantaChitra.Com | logo

১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ফেসবুকে এক যুগ; অর্জন ও বিসর্জনের গল্প

প্রকাশিত : অক্টোবর ২৮, ২০১৯, ০৫:৩০

ফেসবুকে এক যুগ; অর্জন ও বিসর্জনের গল্প

“মুনজুরুল করিম”

আমি বলি- ফেসবুকের খেয়েদেয়ে আর কাজ নেই, প্রতিদিনই পুরনো দিনগুলোকে সামনে এনে হাজির করে। মানুষের মেমোরী বা স্মৃতি বলে একটা জিনিস আছে যা আসলে সংরক্ষণ করার কাজ ব্রেইন এর। সেটা এখন ফেসবুক করছে। তবে কাজটা এখনো পুরোপুরি করতে পারছে না বা কখনোই পেরে উঠবে না। কারণ, ফেসবুক আমাদের জীবনে যতই অপরিহার্য হয়ে উঠুক না কেন, কেউই আমরা এখানে পুরোপুরি তুলে ধরি না। কখনোই মানুষ নিজেকে কারো কাছেই বা কোন প্লাটফর্মেই তুলে ধরে না।

আজ ২৭ অক্টোবর ফেসবুক আমাকে একটা নোটিশ পাঠালো। বললো, আমি ১২ বছর আগে ফেসবুকে যোগ দিয়েছিলাম। মানে পাক্কা এক যুগ। এ নোটিশ পাবার পর ভাবলাম, একটু খুঁজে দেখি- আসলেই আমি কোন তারিখে ফেসবুকে ঢুকেছিলাম। পরে মনে হলো- নাহ, এতটা সুক্ষ হিসাব-নিকাশ দরকার নেই। সেই প্রাচীনকালে অর্থাৎ এক যুগ আগে ফেসবুক আমাদের কাছে কেমন ছিল?

বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করে চাকরিতে ঢুকেছি বছরখানেক হয়ে গেছে। তখন এনটিভিতে কাজ করি। কিভাবে কিভাবে যেন আমাদের নিউজ রুমে ফেসবুক ঢুকে পড়লো। কার স্মার্টনেসে এটা হলো তা ঠিক মনে নেই। তবে আমার ধারণা, কাজটা রুবেলের হতে পারে। আমরা সকালে রিপোর্ট করার জন্য বিভিন্ন এ্যাসাইনমেন্টে বেরিয়ে পড়তাম। কাজ শেষে ফিরে এসে দ্রুত রিপোর্টটা বানিয়ে দিয়েই কম্পিউটারে বসে ফেসবুকিং শুরু করতাম। ১২ আগের ফেসবুকও এতটা স্মার্ট ছিল না। আমাদের ফেসবুকের বন্ধুত্বের গন্ডিও এনটিভি-কেন্দ্রিকই ছিল। তুমুল আড্ডায় মেতে উঠতাম আমরা ফেসবুককে কেন্দ্র করে।

একটা সময় দেখা গেলো, রিপোর্টে মনযোগ নেই আমাদের। তখন অফিসের কম্পিউটারে ফেসবুক ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হলো। এটা নিয়ে আমাদের সবারই খুব মন খারাপ হয়েছিল। এসব পুরনো কথা বাদ দেই। এবার বলি, ফেসবুকে আমাদের বয়স কিভাবে চোখের সামনে বাড়তে থাকে।

শিক্ষা ও ব্যাচেলর জীবন‍ঃ আপনি যদি শিক্ষাজীবন থেকে ফেসবুক ব্যবহার করেন তবে বিষয়টা আপনি ভালোভাবে বুঝতে পারবেন। শিক্ষাজীবনে ফেসবুকটা প্রায় শতভাগ রোমান্টিক। এই সময় ফেসবুকে নতুন নতুন বন্ধুত্ব হয় বেশি। প্রেমের মতো ঘটনা অহরহ ঘটতে থাকে। খুব হালকা মাপের লেখালেখিতে ভরে যায় প্রোফাইল। নিয়মিত স্টাইলিশ ছবি পোস্ট করা, রেস্টুরেন্টে খাওয়া এসব ছাড়া স্ট্যাটাসে ভিন্ন কিছু পাওয়াটা ব্যতিক্রম।

কর্মজীবন‍ঃ কর্মজীবনে চলে এলে, শিক্ষা জীবনের বন্ধুরা বেশিরভাগ সময়ই ফেসবুকের ফ্রেন্ডলিস্টে অংশগ্রহণ করেই সঙ্গ দেয়। যে বন্ধুর সাথে এক বেলা দেখা না হলে সবকিছু ওলটপালট হয়ে যেতো, সেই বন্ধুর সাথে বাস্তব যোগাযোগ কমতে থাকে। এই সময়টায় সহকর্মীরা খুব কাছাকাছি চলে আসে। ফ্রেন্ডলিস্টে শিক্ষাজীবনের বন্ধুর চেয়ে সহকর্মীর সংখ্যা বেড়ে যায়। অফিসের বা ব্যবসার বিষয়, চাকরির আনন্দ বা বিড়ম্বনা এবং ক্যারিয়ারের প্রসঙ্গ মুখ্য হয়ে উঠে। এই সময়ের ফেসবুক বন্ধুত্বগুলোও বেশিরভাগ সময় উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়। সবাই চায় নেটওয়ার্ক বাড়াতে যা তার কর্মজীবনে সহযোগিতা করবে।

সংসার জীবন‍ঃ এই সময়টায় মানুষের ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইলের রং ঢঙ বদলে যেতে থাকে। কর্মজীবনও থাকে সে প্রোফাইলে। কিন্তু স্বামী/স্ত্রী, সন্তান, প্রোপার্টি এসব বিষয় প্রাধান্য পায়। এমনকি বেশিরভাগ মানুষ নিজের ছবিও পোস্ট করা কমিয়ে দেয়। খুব মজার একটা ঘটনা ঘটে এ পর্যায়ে। মানুষ তার স্ট্যাটাসে দীর্ঘ লেখা লিখতে থাকে। কেউ দর্শন, কেউ রাজনীতি, কেউবা সমসাময়িক বিষয়ে জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করে। অর্থাৎ এক ফেসবুক প্রোফাইলেই জীবনের বহু ধাপ দৃশ্যমান।

এবার যদি কেউ আমার মতো ১ যুগ আগে ফেসবুকে যোগ দিয়ে থাকে, তবে প্রতিদিনই স্মৃতি হিসেবে তার হ্যাংলা-পাতলা শিক্ষাজীবন থেকে শুরু করে সেই রোমান্টিক সময় এবং বিবর্তনগুলো সামনে মেমোরী বা স্মৃতি হিসেবে হাজির হবে। সেসব স্মৃতির কোনটা হাসাবে, কোনোটা বিষন্নতায় ভরিয়ে দেবে। আর ফেসবুকের জন্মের পর থেকে যারা এটি ব্যবহার করছে, তারা যদি কমপক্ষে ৭০ বছরও বাঁচে তবে প্রতিদিনই তাদের চোখের সামনে পুরো জীবন ভেসে আসবে।

ফেসবুক থেকে যা পেয়েছিঃ

দুনিয়াজোড়া নেটওয়ার্ক; এই ফেসবুকের কারণে আর্মেনিয়া, বুলগেরিয়া থেকে শুরু করে চিলি বা মেক্সিকো পর্যন্ত আমার নেটওয়ার্ক বিস্তৃত হয়েছে।
বিনোদন হাতের মুঠোয় চলে এসেছে।
যার যত বড় নেটওয়ার্ক সে তত পাওয়ারফুল হয়ে উঠছে।
দ্রুততম সময়ে দুনিয়ার যে কোন প্রান্তে পৌঁছে যেতে পারি ভার্চুয়ালি।
এই যে এখন এত বড় লেখাটা লিখছি, সেটাও ফেসবুকের কারণেই হয়েছে।
পাবলিসিটির সবচেয়ে সহজ এবং বড় মাধ্যম।
প্রবাস কথা; বাংলাদেশে বসে সারা দুনিয়াব্যাপী একটা শক্তিশালী নেটওয়ার্ক তৈরি করতে পেরেছি শুধু ফেসবুকের কল্যাণে।
দাবি আদায়ের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে ফেসবুক।

ফেসবুকের কারণে যা হারিয়েছি
মানুষের পারষ্পরিক সম্পর্কের আন্তরিকতা নষ্ট হয়ে গেছে।
সামাজিক বিভিন্ন মূল্যবোধ বা কাঠামো ভেঙ্গে পড়েছে।
চিঠি লেখার আবেগ বা চিঠি পাওয়ার অপেক্ষার মধুরতা হারিয়ে গেছে।
প্রোপাগান্ডা বা গুজবের সবচেয়ে বড় মাধ্যম হয়ে উঠেছে ফেসবুক।
টেলিভিশন মুমুর্ষু অবস্থায় চলে গেছে।
ফেসবুক আসক্তি নামে নতুন রোগ তৈরি হয়েছে।
ভার্চুয়াল অপরাধ ও প্রতারণা বেড়েছে।
আরো অনেক কিছু।

সবশেষে বলি-
ফেসবুকের জন্মের আগে যারা জন্ম নিয়েছে এবং সজ্ঞানে চিঠির যুগ দেখেছে, তারা একটা বিবর্তন প্রক্রিয়ার ঠিক মাঝখানে পড়ে গেছে। একদিকে তারা সেই সত্যিকারের আবেগ-অনুভূতিকে মিস করছে, অন্যদিকে আধুনিকতার সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়েও যেতে হচ্ছে। এটা খুবই কষ্টদায়ক একটা ব্যাপার। এই জেনারেশনের মৃত্যুর পর পুরো সামাজিক কাঠামোই বদলে যাবে।

লেখকঃ হেড অফ ইনভেস্টিগেশন
ইনডিপেন্ট টিভি.


যোগাযোগ

বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যলয়

কাব্যকস সুপার মার্কেট, ৩ ডি কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫।

মোবাইলঃ ০১৬২২৬৪৯৬১২, ০১৬০০০১৪০৪০

মেইলঃ tadantachitra93@gmail.com, tchitranews@gmail.com

সামাজিক যোগাযোগ

Web Design & Developed By
A

তদন্ত চিত্র কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েব সাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি।