TadantaChitra.Com | logo

১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বিশ্বে ৭৬ কোটি ৩০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত

প্রকাশিত : ডিসেম্বর ১৮, ২০১৯, ০৮:০৩

বিশ্বে ৭৬ কোটি ৩০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বিশ্বজুড়ে অভিবাসীদের সংখ্যা বাড়ছেই। নানা সংকট, নির্যাতন, নিপীড়ন ও হত্যাযজ্ঞের মুখে জীবন বাজি রেখে এক দেশের মানুষ অন্য দেশে পাড়ি দিচ্ছে। বাড়ছে অভ্যন্তরীণ অভিবাসীর সংখ্যাও। আবার এক টুকরো মাটির সন্ধানে উত্তাল সাগরে ভাসছে লাখ লাখ মানুষ। অনেকেই সাগরেই ডুবে মরছে। কেউবা উন্নত জীবনের টানে জন্মভিটা ছেড়ে উন্নত দেশগুলোতে স্থায়ী আবাস গড়ছেন।

মূলত অভিবাসন হচ্ছে একটি চলমান প্রক্রিয়া। হাজার হাজার বছর ধরে, বলা যায় সৃষ্টির আদিকাল থেকেই মানুষ প্রাকৃতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় কারণে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে, এক দেশ থেকে অন্য দেশে পাড়ি জমিয়েছে। মানুষের এই স্থান ও দেশ পরিবর্তনের প্রবণতা চিরন্তন। অভিবাসীরা যেমন একটি দেশের আশীর্বাদ, আবার অভিশাপও। বিশ্বে এমন বহু উন্নত ও পরাশক্তির দেশ আছে যারা সমৃদ্ধ হয়েছে অভিবাসীদের ছোঁয়ায়। আবার অনেক দেশ অভিবাসীদের চাপে নুয়েও পড়েছে।

আজ ১৮ ডিসেম্বর, আন্তর্জাতিক অভিবাসন দিবস। বিশ্বজুড়ে এ দিনটিকে নানা আয়োজনে ও উদ্যোগে পালন করা হচ্ছে। এই দিনে অভিবাসীদের নিশ্চিত জীবনের লক্ষ্যে নেয়া হচ্ছে নানা পদক্ষেপ ও পরিকল্পনা। হচ্ছে নানা সেমিনার, বক্তৃতা ও সমাবেশ।

গেল ১১ অক্টোবর জাতিসংঘের শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংগঠন ইউনেস্কোর গ্লোবাল অ্যাডুকেশন মনিটরিং রিপোর্টে বাস্তুচ্যুতিপ্রবণ ১০টি দেশের তালিকায় উঠে এসেছে বাংলাদেশের নাম। রিপোর্টে বলা হয়েছে, গোটা বিশ্বের অন্তত ৭৬ কোটি ৩০ লাখ মানুষ জন্মভূমি ছেড়ে অন্য দেশে বাস করে। এর মধ্যে অভিবাসীর সংখ্যা ২৭ কোটি ২০ লাখ। কেউ কাজের সন্ধানে, কেউ জীবন বাঁচাতে, কেউ আবার উন্নত জীবনের প্রত্যাশায় স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে অভিবাসনের পথ বেছে নিচ্ছে।

বিশেষত চীন ও ভারতের মতো মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে অভ্যন্তরীণ অভিবাসন বেশি ঘটছে। সাব-সাহারা আফ্রিকাতেও গ্রাম ছেড়ে শহরমুখী হচ্ছে মানুষ। যা শহরের উন্নয়ন পরিকল্পনাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলছে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা বর্তমানে সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। যেখানে নানা দ্বন্দ্ব-সংঘাতের কারণে বিশ্বে অন্তত ৪ কোটি মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর সেনা নিপীড়ন ও গণহত্যার মুখে মিয়ানমার থেকে ১১ লাখের মতো মানুষ সাগর ও সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশ, ভারত, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় আশ্রয় নিয়েছে। যেখানে সবচেয়ে বেশি আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে। এই লাখ লাখ পরিবারের শিশু সন্তানেরা বাস্তুচ্যুতির কারণে যথাযথ শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। গ্লোবাল অ্যাডুকেশন মনিটরিং রিপোর্টে বাস্তুচ্যুত ৪ কোটি ও অভিবাসী ৭৬ কোটি ৩০ লাখ মানুষের শিক্ষা অধিকার নিশ্চিত করার তাগিদ দেয়া হয়েছে।

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সম্পর্কে রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে গোটা বিশ্বে আন্তর্জাতিক অভিবাসীর সংখ্যা ছিল ২৫৮ মিলিয়ন। যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ৩.৪ শতাংশ। যাদের মধ্যে ৬৪ শতাংশ অভিবাসী উচ্চ আয়ের দেশে করে। সেইসব দেশে ২০০০ সাল নাগাদ অভিবাসীর সংখ্যা ছিল মোট জনগোষ্ঠীর ১০ শতাংশ। যা ২০১৭ সালে দাঁড়ায় ১৪ শতাংশে।

আবার কুয়েত, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো অনেক উপসাগরীয় দেশে অধিকাংশ মানুষই অভিবাসী। বিশ্বে সর্বাধিক অভিবাসন হয়ে থাকে মেক্সিকো করিডোর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে।

গ্লোবাল অ্যাডুকেশন মনিটরিং রিপোর্টে অভিবাসী ও বাস্তুচ্যুতি এই বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীর জন্য শিক্ষা অধিকার নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাদের জন্ম সনদের বাধ্যবাধকতা নিষিদ্ধ করতে হবে। সেইসঙ্গে শনাক্তকরণ নথিপত্র, বসবাসের অবস্থা বা আইনের বিশেষ প্রয়োগিক ব্যবস্থা যেমনই হোক- সরকারকে অবশ্যই অভিবাসী, শরণার্থী ও বাস্তুচ্যুতদের শিক্ষা অধিকারকে সুরক্ষা দিতে হবে। এ বিষয়টিকে আইনগত ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার ঊর্ধ্বে রাখতে হবে।

রিপোর্টে বাস্তুচ্যুতিপ্রবণ ১০টি দেশের তালিকায় থাকা বাংলাদেশে বাস্তুচ্যুতির কারণ হিসেবে প্রাকৃতিক দুর্যোগকে সামনে আনা হয়েছে। এখানে প্রতি বছর অন্তত ৯০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভূমিকম্প, বন্যা ও নদীভাঙনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে ওইসব এলাকার শিক্ষা কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে।

চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সম্পর্ক বিভাগ অভিবাসন নিয়ে যে হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যাচ্ছে, অভিবাসনে বাংলাদেশ ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে। ২০১৯ সাল পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৭৮ লাখ বাংলাদেশি বসবাস করছে। তাদের বেশিরভাগেই জীবন-জীবিকার তাগিদে শ্রমিক হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে অস্থায়ীভাবে অভিবাসন নিয়েছে। আবার একটি অংশ উন্নত জীবনের প্রত্যাশায় স্থায়ীভাবে পাড়ি জমিয়েছেন ‍যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোতে।

গেল তিন দশকের ব্যবধানে ৪০ শতাংশের বেশি বেড়েছে বাংলাদেশি অভিবাসীর সংখ্যা। একটু ভালো থাকা, একটু অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা ও একটু নিরাপদ জীবনের প্রত্যাশায় স্থায়ী কিংবা অস্থায়ীভাবে বাংলাদেশ থেকে বছর বছর লাখ লাখ মানুষ দেশান্তরি হচ্ছেন।

উল্লেখ্য, অভিবাসী হওয়ার দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন ভারতীয়রা। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় পৌনে ২ কোটি ভারতীয় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন। এ প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের সামনে আছে মেক্সিকো, চীন, রাশিয়া ও সিরিয়ার মতো দেশগুলো।


যোগাযোগ

বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যলয়

কাব্যকস সুপার মার্কেট, ৩ ডি কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫।

মোবাইলঃ ০১৬২২৬৪৯৬১২, ০১৬০০০১৪০৪০

মেইলঃ tadantachitra93@gmail.com, tchitranews@gmail.com

সামাজিক যোগাযোগ

Web Design & Developed By
A

তদন্ত চিত্র কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েব সাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি।