ঢাকা: রাজধানীর রূপনগর থানার দুয়ারীপাড়া ওয়াক্ফ এস্টেট এলাকার বাসিন্দারা উচ্ছেদ আতঙ্কে দিন পার করছে। এ উচ্ছেদের জন্য তারা সবকিছু হারিয়ে রাস্তায় বসে পড়তে পারে বলে এমনটাই দাবি করেছেন এ এলাকার মানুষেরা। হঠাৎ করেই এই উচ্ছেদ অভিযানের ফলে বহির্মুখী সমস্যা হচ্ছে তাদের। এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, ধর্ম মন্ত্রণালয় আর ভূমি মন্ত্রণালয়ের টানা হেঁচড়ার মাধ্যমে সমন্বয়হীনতার কারণে তাদের এই উচ্ছেদ অভিযানের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
শনিবার এ এলাকায় সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উচ্ছেদ আতঙ্কে এলাকাবাসী বাসাবাড়ি পরিবর্তন করছেন। এলাকাবাসী বাসা পরিবর্তনের জন্য ভ্যান-রিকশা করে যে যেভাবে পারছে মাল-পত্র, আসবাবপত্র নিয়ে এলাকা ছাড়ছেন। এর ফলে দুয়ারীপাড়া মোড়ে প্রধান সড়কে জ্যাম লেগে থাকতে দেখা যায়।
আগামী ২২ ডিসেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দুয়ারীপাড়ায় এ উচ্ছেদ অভিযান চলবে বলে জানা গেছে।
দুয়ারীপাড়ায় বসবাসকারী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যাক্তি বলেন, আমরা আজ ২৫ বছর ধরে এই এলাকায় বসবাস করছি। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে শুক্রবার রাতে মাইকিং করে বলা হয় দুয়ারীপাড়া এলাকা ছেড়ে যাওয়ার জন্য।
হাবিবা খাতুন নামের এক নারী বলেন, আমরা এখন কোথায় থাকব কোথায় যাব কী করব এই নিয়ে এক অনিশ্চয়তার মধ্যে বসবাস করছি। আমাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই বলে আর কিছুই থাকবে না আমাদের।
এ এলাকার বসবাসকারী আজিমুল হক বলেন, আমরা র্দীঘ অনেক বছর ধরে এই এলাকায় বসবাস করছি এখন যদি আমাদের উচ্ছেদ করে তাহলে আমরা ছেলে মেয়ে নিয়ে কোথায় যাবো আমাদের সবকিছুই তো এখানে।
শা-আলম নামের এক ব্যক্তি বলেন, আমরা ২৫ বছর ধরে এই এলাকায় বসবাস করি এখন হঠাৎ উচ্ছেদের আগেই মাইকিং করে আমাদের এলাকা ছাড়তে বলেছে আমরা কোথায় যাবো আমরা ধর্মমন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে এ জায়গাটি লিজ নিয়েছি তাহলে কেন আমাদের অবৈধভাবে উচ্ছেদ করা হবে।
তিনি বলেন, কোট থেকে আমাদের উচ্ছেদ বন্ধ করার জন্য নোটিশ পাঠানো হয়েছে কিন্তু মন্ত্রণালয় সেটা শুনছে না, যদি আমদের অন্যায়ভাবে উচ্ছেদ করা হয় তাহলে আমরা প্রতিরোধের জন্য প্রস্তুত রয়েছি। কারণ হলো এই জায়গাটি আমাদের ঠিকানা আমরা আমাদের স্থায়ী ঠিকানা হারাতে চাই না।
প্লটের এক (রেজি.) মালিক বলেন, আমরা ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে ১৯৯৩ সালে এই জায়গাটি ৯৯ বছরের জন্য লিজ নিয়েছিলাম। এখন আমাদের সরে যাওয়ার জন্য গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে।
এ এলাকার কল্যাণ সমিতির সভাপতি শুকুর খান বলেন, বর্তমানে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত আছি আমরা। এখন আমরা কোথায় যাব? তিনি বলেন, এদিকে যুগ্ম জেলা জজ ২য় আদালত, ঢাকা নভেম্বর মাসে স্টে অর্ডার জারি করে। আদালত ১০ দিনের মধ্যে গৃহায়ন মন্ত্রণালয়কে জবাব দিতে বলেছেন কিন্তু এখন গণপূর্ত মন্ত্রণালয় কোর্টের আদেশ অমান্য করে আমাদের উচ্ছেদ করতে চাইছে এটা কেমন আইন কেমন বিচার?
তিনি আরো বলেন, আগামী ২২ ডিসেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দুয়ারীপাড়া উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে। মাঝখানে ২৫ থেকে ২৮ ডিসেম্বর তারিখ সরকারি ছুটি থাকায় উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ থাকবে।
উচ্ছেদ অভিযানের বিষয় নিয়ে দুয়ারীপাড়া বাড়ি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোবারক হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা আইনের ওপর বিশ্বাসী আমরা আদালতকে মানি। আদালতে এই বিষয়টির মামলা নিয়ে আমাদের পক্ষে রায় দিয়েছে। আমরা আদালতের দিকে তাকিয়ে আছি।
মোবারক হোসেন বলেন, দুই মন্ত্রণালয়ের টানা হেঁচড়ার মধ্যে দুয়ারীপাড়ায় আমরা বসবাস করছি। ওয়াক্ফ এস্টেট এলাকা ২৩ একর জায়গা নিয়ে অবস্থিত। আমরা এ এলাকার প্রায় ৪৭৪টি প্লটে প্রায় ১ লাখ লোক বসবাস করছি।
আমরা আইন মানি কিন্তু মন্ত্রণালয় আইন মানছে না এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, আমাদের সাথে ঠিক ভাষানটেকের উচ্ছেদ অভিযানের মতো ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। ভাষানটেকে উচ্ছেদ অভিযানের সময় আগেরদিন সন্ধ্যাবেলায় মাইকিং করে বলা হয়। ঠিক একইভাবে আমাদের শুক্রবার রাতে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মাইকিং করে জানানো হয় উচ্ছেদের কথা।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে, রূপনগর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম জানান, আমাদের জানানো হয়েছে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করবে। তারা আমাদের কাছে সহযোগিতা চেয়েছে। আমরাও আইনি প্রকরিয়ায় সহযোগিতা করব।
তিনি বলেন, এ অভিযান পরিচালনার সময় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ থেকে ২জন ম্যাজিস্ট্রেট থাকবে। তিনি আরো জানান, আমাদেরকে আরো জানানো হয়েছে, উচ্ছেদ এ অভিযানের সময় তাদের পক্ষ থেকে আরো দুজন আইনী কর্মকর্তা উপস্থিত থাকবেন।
এই উচ্ছেদ অভিযান বন্ধের প্রতিরোধে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করছে। এমন প্রশ্নের জবাবে ভারপ্রাপ্ত কর্মকমতা বলেন, বিষয়টি আইনী প্রক্রিয়াধীন থাকবে। এ সময় কেউ যদি সঠিক কাগজপত্র উপস্থাপন করতে পারে তারা সহযোগিতা পাবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মিরপুর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনারের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করলে তিনি তা রিসিভ করেননি।
বিষয়টি নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগযোগ করার চেষ্টা করা হলে তা সম্ভব হয়নি।
উচ্ছেদ এ অভিযানের বিষয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, আমাদের ১২টি সংস্থা আছে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় কোন শাখায় এ অভিযান চালাবে সেটা নির্দিষ্ট করে বলা একটু কষ্টের বিষয়।
জায়গাটি ধর্মন্ত্রণালয় ৯৯ বছরের জন্য এ এলাকার কিছু প্লট তাদর লিজ দিয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আপনি বললেন জায়গাটি গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তাহলে ধর্ম মন্ত্রণালয় কীভাবে তাদের লিজ দেয়?
অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান আরো বলেন, আমার এই উইং-এর সাথে কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তিনি এ বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে নারাজ।
‘পদ্মায় গোসলে নেমে ৩ কিশোরের মৃত্যু’
রাজশাহীর পবা উপজেলায় পদ্মা নদীতে ডুবে তিন কিশোরের মৃত্যু হয়েছে।......বিস্তারিত