TadantaChitra.Com | logo

২রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

জ্ঞানের আলো জ্বালানো শিক্ষকের জ্বলছে না চুলা

প্রকাশিত : এপ্রিল ০৫, ২০২০, ১৩:৪৫

জ্ঞানের আলো জ্বালানো শিক্ষকের  জ্বলছে না চুলা

এম. এ. আলিম খানঃ সাতক্ষীরায় জ্ঞানের আলো জ্বালানো প্রতিবন্ধী শিক্ষকের এখন চুলা জ্বলছে না। রাখছেন না তার খবর। আয়তনে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উপজেলা সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর। শ্যামনগরে নিয়মিত যাতায়াতের ফলে এই এলাকার মানুষের সাথে এক ধরনের হৃদ্যতা গড়ে উঠেছে। বিশেষ করে শিক্ষকদের সাথে, শিক্ষার্থীদের সাথে, অভিভাবকদের সাথে, জনপ্রতিনিধিদের সাথে, সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে এবং সাংবাদিক ভাইদের সাথে।

শিক্ষকদের বলা হয় মানুষ গড়ার কারিগর, তাঁরা সমাজের সম্মানিত ব্যক্তি। কিন্তু তাঁদের পারিবারিক বা আর্থিক অবস্থার খবর সচরাচর আমরা জানতে চায় না। অনেক শিক্ষক আমাকে বলেন, ‘ভাই পেটে খেলে পিঠে সয়। দীর্ঘ বিশ বছর ধরে ফ্রী শ্রম দিয়ে যাচ্ছি।’ অনেকের চাকরির বয়স প্রায় শেষ পর্যায়ে কিন্তু এখনও কোন বেতন পায় না। কারিগর যদি আর্থিক সমস্যায় থাকে তাহলে ভালো মানের পণ্য তৈরি করবে কীভাবে! আর্থিক সমস্যা থেকেই সৃষ্টি হয় পারিবারিক ও সামাজিক অশান্তি। একজন মানুষ এত প্রতিকূলতার মধ্যে থেকেও স্কুলে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করেন এর চেয়ে বড় আর কী হতে পারে।

যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় শিশু, প্রতিবন্ধী ও বয়স্ক ব্যক্তিরা। শ্যামনগরের বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের তপোবন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের একমাত্র ইংরেজি শিক্ষক শারীরিক প্রতিবন্ধী সুকুমার মন্ডল। যিনি বিনা বেতনে স্কুলে দীর্ঘ ২২ বছর ধরে ছাত্রীদের লেখা পড়া শিখিয়ে আসছেন। আরও মজার ব্যাপার একেবারে অজপাড়াগাঁয়ে অবস্থিত ঐ বিদ্যালয় থেকে প্রায় এক যুগ ধরে কোন শিক্ষার্থী ইংরেজিতে ফেল করেনি। অন্য বিষয়ে ফেল করে কিন্তু ইংরেজিতে ফেল করে না।

ঐ শিক্ষক প্রতিবন্ধীতার কারণে কোন প্রশিক্ষণেও অংশ নিতে পারেন না। প্রশিক্ষণ বিহীন ননএমপিও একজন শিক্ষক নিরলসভাবে জ্ঞানের আলো জ্বেলে যাচ্ছেন। স্কুলে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়িয়ে তারা যা দিতেন তাই দিয়েই ৪ সদস্যের সংসার কোন রকমে চালাতেন। শিক্ষক সুকুমার মন্ডল জীবনের সাথে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে যাচ্ছেন। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস মহামারি আকার ধারণ করেছে। সরকার থেকে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। টিওশনি বন্ধ থাকায় তাঁর কোন আয় নেই; তাই সংসারও চলছে না। জ্বলছে না ঠিকমত চুলা। নিরুপায় হয়ে বৃহস্পতিবার আমাকে ফোন করেছিলেন। কোন সহযোগিতা পাওয়া যায় না।

জানতে চাইলাম সরকারি বা বেসরকারি কোন সহযোগিতা পেয়েছেন কি না। বুকভরা কষ্ট নিয়ে উত্তর দিলেন না। খোঁজ নিলাম শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের ট্যাগ অফিসার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার মিনা হাবিবুর রহমানের কাছে। তিনি বললেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দুস্থ অসহায় মানুষদের তালিকা তৈরি করে দেন। সেই তালিকা অনুযায়ী সরকারি সাহায্য বিতরণ করা হয়।’ বেসরকারি পর্যায়ে যে সহায়তা করা হয় তা অনেকটা শহর কেন্দ্রীক। গ্রামের মধ্যে সাহায্য সহযোগিতা পাওয়া অনেকটা ভাগ্যের ব্যাপার। ভাগ্য এমন সুপ্রসন্ন হয়নি সুকুমার মন্ডলের।

স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে ছোট একটি কুঁড়ে ঘরে থাকেন সুকুমার মন্ডল। জায়গা জমি বলতে তেমন কিছু নেই। তাঁর একটি মেয়ে ও একটি ছেলে। মেয়েটির নাম মোহনা, তার হাতের লেখা অনেক সুন্দর । সে তপোবন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্রী। ছেলেটি স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র।

সুকুমার মন্ডলের মত অসংখ্য শিক্ষক আছেন যারা নিরবে কাঁদছেন। তাঁরা না পারছেন কারও কাছে কিছু চাইতে; না পারছেন কিছু করতে। আমাদের চারপাশে এমন যদি কোন শিক্ষক থাকেন তাঁদের প্রতি আমাদের বিশেষ নজর দেওয়া উচিত। সৃষ্টিকর্তার নিকট প্রার্থনা করি আমাদের করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তি দিন। সব কিছু স্বাভাবিক হলে ফিরে আসবে প্রাণচাঞ্চল্য। ফুটবে সবার মুখে হাসি।


যোগাযোগ

বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যলয়

কাব্যকস সুপার মার্কেট, ৩ ডি কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫।

মোবাইলঃ ০১৬২২৬৪৯৬১২, ০১৬০০০১৪০৪০

মেইলঃ tadantachitra93@gmail.com, tchitranews@gmail.com

সামাজিক যোগাযোগ

Web Design & Developed By
A

তদন্ত চিত্র কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েব সাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি।