TadantaChitra.Com | logo

১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

কে বলবে করোনা এসেছে? চাঁদের হাট বসছে

প্রকাশিত : এপ্রিল ০৮, ২০২০, ১২:৩৯

কে বলবে করোনা এসেছে? চাঁদের হাট বসছে

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম‍ঃ আজ ৮ এপ্রিল। ঠিক এক মাস আগে ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছিল। এক মাস আগে এদিন দেশে তিনজন করোনা রোগী শনাক্ত হয়। মাসের ব্যবধানে দেশে করোনায় আক্রান্ত রোগী বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১৮ জনে। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আক্রান্ত হয়েছে ৫৪ জন। গত ৪৮ ঘণ্টায় ৯৫ জন। সবমিলিয়ে মৃত্যু হয়েছে ২০ জনের।

বন্দরনগর চট্টগ্রামের বুধবার (৮ এপ্রিল) সকালের চিত্র দেখলে বোঝাই যাবে না দেশে করোনাভাইরাসের মতো কোনো মহামারি তাণ্ডব চালাচ্ছে। নগরবাসী নিশ্চিন্তেই অন্য সময়ের মতোই বাজারে ভিড় করেছেন। লক্ষ্য একটাই, আগামীকাল শবে বরাত, ভালো-মন্দ কিনবেন। নগরের বাজারগুলো দেখে মনে হলো- চাঁদ রাতের বাজারে নেমেছে নগরবাসী।

যেখানে এ ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে মানুষের মাঝে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে চাইছে সরকার। যে কারণে গত ২৬ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত তিন দফায় সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। দেশে এত লম্বা সময়ের জন্য এর আগে কখনও ছুটি ঘোষণা করা হয়নি। শুধু ওষুধ ও নিত্যপণ্যের দোকানগুলো প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত খোলা রাখার অনুমতি দিয়েছে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি)।

সন্ধ্যা ৭টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত ওষুধের দোকান ছাড়া সব দোকান, মার্কেট এমনকি নিত্যপ্রয়োজনীয় দোকানও বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয় পুলিশ। সোমবার (৬ এপ্রিল) রাত ১০টা থেকে চট্টগ্রাম মহানগরের প্রবেশের পথগুলোও বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ এখন নগরে ঢুকতেও পারছেন না, বেরোতেও পারছেন না।

কিন্তু প্রশাসনের এতসব প্রচেষ্টা কানেই তুলছেন না নগরবাসী। পবিত্র শবে বরাত পালনে সকাল থেকেই নগর ও উপজেলার বাজারগুলোতে কেনাকাটায় ব্যস্ত হাজার হাজার মানুষ। সামাজিক দূরত্ব বলতে যে কোনো বিষয় আছে তার ছিটেফোঁটাও মানুষের মাঝে নেই। বাজারগুলোতে মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব। রীতিমতো ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়িয়ে কার আগে কে নেবে, চলছে সেই চেষ্টা। সংশ্লিষ্টরা বারবার বলার পরও ব্যর্থ হচ্ছে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা।

বুধবার (৮ এপ্রিল) বেলা ১২টার দিকে নগরের মোমিন রোড এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মুদির দোকান, সবজির ভ্যান, মুরগি হাটসহ সবখানেই উপচেপড়া ভিড়। একজন আরেকজনের গা ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়িয়ে মালামাল দরদাম করছে। কার আগে কে নেবে, চলছে সেই প্রতিযোগিতা। ক্রেতার চাপে বিক্রয় প্রতিনিধি বা দোকানির পক্ষেও দূরত্ব বজায় রাখা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। পুলিশের দুই সদস্য কয়েক দফায় মানুষকে সরিয়েও শেষ পর্যন্ত ওই ভিড় সামলাতে পারেননি।

সোনিয়া আবছার নামের এক গৃহবধূ বলেন, ‘শবে বরাত তাই, এক ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছি দুই কেজি আটার জন্য। কিন্তু কিছুতেই নিতে পারছি না। সবাই হুড়োহুড়ি করছে।’

করোনাভাইরাসের এই সময়ে এভাবে কেন বাজারে এসেছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে ওই গৃহবধূ বলেন, ‘আমার স্বামী ঢাকায় চাকরি করেন। বাসায় ছোট বাচ্চা আছে, শাশুড়ি আছেন, তাদের জন্য যদি আলাদা কিছু না করি তাহলে কেমন হয়? শবে বরাতে আমরাতো সব সময় করে থাকি।’

এদিকে, বাজারের এই ব্যস্ততাকে কাজে লাগিয়ে সড়কে বেড়েছে রিকশা, মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকারের চলাচল। দুপুরে নগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে মনেই হয়নি, এখানে মানুষের মাঝে সচেতনতা বলতে কিছু আছে।

কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন বলেন, ‘আমরাতো আমাদের সবটা দিয়েই চেষ্টা করছি, কিন্তু মানুষ যদি নিজের ভালোটা না বুঝে বল প্রয়োগ করে আসলে কিছুই হবে না। মানুষকে বুঝতে হবে এটি স্বাভাবিক কোনো সময় নয়। বাইরের দেশগুলোর দিকে তাকালেই স্পষ্ট হয়ে যায়, আমরা এখন কী অবস্থায় আছি।’

দুপুর ১টার দিকে কাজীর দেওরী বাজারে গিয়ে দেখা যায়, এলাহী কাণ্ড! কেউ মুরগি আবার কেও গরুর মাংস কেনায় ব্যস্ত। বিক্রেতারা জানালেন শবে বরাত উপলক্ষে বাজারে বিক্রি বেড়েছে।

তারা বলছেন, ‘অনেকে সতর্ক হয়েই আজ কেনাকাটা সেরে নিচ্ছেন, আগামীকাল ভিড় আরও বেশি হবে।’

নগরের দুই নম্বর গেট এলাকায় বসবাস কারে আইনজীবী জামাল উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আজ বুধবার সকালের কর্ণফুলী মার্কেটের পরিবেশ ছিল পুরো চাঁদ রাতের মতোই। বেশ স্বাভাবিকভাবেই মানুষ কেনাকাটা করছেন। এ সব দেখে বোঝার উপায় নেই আমরা একটা মহামারি মোকাবিলা করছি। প্রশাসন সর্বোচ্চ কঠোরতা দেখাচ্ছে, কিন্তু জনগণ সেটা না মানলে কী করার আছে?’

ইসলামিক ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৯ এপ্রিল) দিবাগত রাতে সারা দেশে পবিত্র শবে বরাত পালিত হবে। করোনা প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শবে বরাতের রাতে বাসায় বসে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে মহামারি থেকে বাঁচার দোয়া করতে বলেছেন। শুধু শবে বরাতই নয়, অন্যান্য সময়ও মুসল্লিদের ঘরে বসে নামাজ পড়ার নির্দেশ দিয়েছে সরকার।

ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা জরুরি এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, শুধু মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন, খাদেমরা মসজিদে নামাজ আদায় করবেন। অথচ শবে বরাতের একদিন আগেই বাজারের পরিস্থিতি ভাবিয়ে তুলছে সংশ্লিষ্টদের।

হাটহাজারী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমীন তার ফেসবুক ওয়ালে কয়েকটি ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘সবাই মিলে বাজার ক্লিয়ার করে চৌধুরীহাট পর্যন্ত এসে আবার কী মনে করে যেন আমান বাজার গিয়ে দেখি চাঁদের হাট।’

তিনি বলেন, ‘সকালে হাটহাজারী উপজেলার চৌধুরী হাট থেকে শুরু করে আমানবাজার, ইসলামিয়া হাটসহ একাধিক বাজারে অভিযান চালিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতাদের বাড়ি পাঠাই। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে আবার আমান বাজার এসে দেখা যায় পূর্বের অবস্থায় ফিরে এসেছে বাজারটি। সবাই বহাল তবিয়তে স্বাভাবিক সময়ের মত চাঁদের হাট বসিয়ে বাজার করছেন। মানুষের মানসিকতা দেখে আশ্চর্য হই। কিছু মানুষ সরকারি নিয়মকে গুরুত্ব না দিয়ে ইচ্ছামতো চলাফেরা করছে। এতে আমরা নিজেদের বিপদ বাড়াচ্ছি।’

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্তের পর রোগীর নিজের বাড়ি, আশপাশের আরও পাঁচটি বাড়ি, ওমরা ফেরত মেয়ের বাড়ি, তার শ্বশুর বাড়ি, তাদের দুই নিকট আত্মীয়ের বাড়ি ও প্রতিবেশীর গ্রামের বাড়িসহ ১৪টি বাড়ি লকডাউন করে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ। একই সঙ্গে বৃদ্ধের চিকিৎসায় জড়িত ছিলেন এমন ৩ চিকিৎসক ও ২০ হাসপাতাল কর্মীকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলা হয়। পরে ওই বৃদ্ধের ছেলে করোনা পজেটিভ বলে জানা গেলে সুপারশপ দি বাস্কেটের ৭৪ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইন ও প্রতিষ্ঠানটি লকডাউন করা হয়।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর উত্তরার কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে চট্টগ্রামের এক ব্যক্তি। তার গ্রামের তিনটি বাড়ি লকডাউন করেছে জেলা প্রশাসন। একই দিন নগরীর পাহাড়তলী থানার শাপলা আবাসিক এলাকার একটি বাড়ির ছয় পরিবারকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে সিএমপি কমিশনার মাহাবুবর রহমান বলেন, ‘বল প্রয়োগ করে মানুষকে আইন মানানো সম্ভব নয়। তাদের নিজেদেরই সচেতন হতে হবে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত ওষুধের দোকান ছাড়া সব দোকান, মার্কেট এমনকি নিত্যপ্রয়োজনীয় দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছি। চট্টগ্রাম নগরের সব প্রবেশপথ ও বিভিন্ন পয়েন্টে সিএমপির পক্ষ থেকে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’


যোগাযোগ

বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যলয়

কাব্যকস সুপার মার্কেট, ৩ ডি কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫।

মোবাইলঃ ০১৬২২৬৪৯৬১২, ০১৬০০০১৪০৪০

মেইলঃ tadantachitra93@gmail.com, tchitranews@gmail.com

সামাজিক যোগাযোগ

Web Design & Developed By
A

তদন্ত চিত্র কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েব সাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি।