TadantaChitra.Com | logo

১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

হাবিবুর রহমানের কাছে ঋণী একজন মানুষের গল্প

প্রকাশিত : এপ্রিল ০৫, ২০২১, ১৬:৩৭

হাবিবুর রহমানের কাছে ঋণী একজন মানুষের গল্প

“খাইরুল ইসলাম তুফান”

হাজার মানুষের পাশে দাঁড়ানো ডি আই জি হাবিবুর রহমান আজ নিজেই করোনা আক্রান্ত! তার কাছে ঋণী একজন মানুষের গল্প-
আমি তো সবার উপকার করার চেষ্টা করি, আমার আশে-পাশে তো অনেক মানুষ, হ্যাঁ সত্যিই আমার আশপাশে অনেক মানুষ। হঠাৎ একদিন ঘরে দুইজনেরই একই দিনে ঠাণ্ডা এবং হালকা জ্বর! পরদিন আরো বেড়ে গেলো এবং আমার প্রচণ্ড মাথা ব্যথা শুরু হলো। সারারাত ঘুমাতে পারলাম না। সকালে কোন এক দূরের হাসপাতালের এক বড় ভাইকে জানালাম বিষয়টা। আমি ভাবতে পারিনি সেই দূরের ভাইটা আমার বাসায় চলে এসেছেন। ও করোনার পরীক্ষার জন্য নমুনা নেওয়ার কথা বলছেন। আমিও দিলাম। সন্ধ্যার আগেই আমাকে শুভেচ্ছা পাঠালেন, “ভাই আপনাদের দুইজনকেই শুভেচ্ছা। সাথে থাকছে ট্রিটমেন্ট অ্যাডভাইস!’ এই প্রথম কোন শুভেচ্ছা আমার ঘরওয়ালি অপছন্দ করলো।

বর্তমান বয়সের প্রায় ২১ বছর যাবৎ একটা ছোটখাটো কর্মের সাথে জড়িত আমি! এই ২১ বছর ছোট বড় অনেক প্রতিষ্ঠান এর সাথে কাজ করার সুযোগ হয়েছে এবং ছোট বয়সে বড় টাকার ঘ্রাণ ও নিয়েছি বেশ! কিন্তু কখনো এই টাকার ঘ্রাণ জমানো বা জমানোর কোন মাধ্যম কিংবা নিজের বর্তমান বয়সের পরে যে আরো বয়স থাকতে পারে, তখন হয়তো কাজের সক্ষমতা নাও থাকতে পারে ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কখনো মাথাটাকে বিরক্ত করিনি। এমন কি অনেক দূরের মানুষ কাছের ভেবে কিছু বললেও কোন গুরুত্ব দেইনি। আল্লাহর অশেষ রহমতে প্রায় তিন বছর হলো আমি বিয়ে করেছি এবং শেষ এক বছর আমি বুঝতে পেরেছি জীবনটার অর্থ কি! যদিও সেটার একটা বড় কারণ আছে, যেটা কথায় এবং ভাষায় বোঝানো যাবেনা। কিন্তু গত এক বছর হলো জীবনটার অর্থ বোঝার পেছনে একজন মহান মানুষকে জড়ানো, এই কারণে যে সে গত এক বছর হলো নিজের অনিচ্ছা সত্বেও অফিসে আসতে পারেনি করোনাভাইরাসের এই অভিশপ্ত সময়ের জন্য। এবং আমি সরাসরি তার সু-নজরে থাকার কারণে, অতীতের সমস্ত কষ্ট, কর্ম, যন্ত্রণার দিনগুলোর কল্যাণে বিবাহিত জীবনটাকে সুন্দর করে কাটাতে শুরু করেছিলাম। কিন্তু সর্বশেষ যখন সেই আমার মাথার ছায়াটা চিকিৎসার উদ্দেশ্যে দেশ ছেড়ে বহু দূরের দেশে চলে গেলেন, আমার কাছে মনে হয়েছিলো আমার মাথা থেকে হয়তো পৃথিবীর জমিন থেকে দেখতে পাওয়া আকাশের অর্ধেক হঠাৎ করে সরে গেলো! যদিও আমার মতো হয়তো না জানা, না চেনা অনেকের কাছেই এরকম মনে হয়েছে।

যা হোক, করোনা পজিটিভ হওয়ার ৩ দিন পরে আমার শরীরটা একটু অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে। কিন্তু আমি শক্ত থাকার চেষ্টা করছি, কারণ আমার বউ ভেঙ্গে পড়বে। যদিও এটা করোনার কারণে ঠিক বলা মুশকিল হচ্ছিল। কারণ আমার মাথায় একটা বড় অপারেশন আছে, সেটার কারণেও হতে পারে। পরের দিন আমার অফিসের একজন শ্রদ্ধেয় স্যারকে জানানোর পর, তার সহায়তায় কিছু পরীক্ষা করালাম। কাছে কিছু টাকা ছিলো সেটা খরচ করলাম। যদিও সেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমার স্যারের জন্য আমাকে অনেক পছন্দ করেন, টাকাটা পরে দিলেও পারতাম, কিন্তু বাসায় ছিলো তাই দিয়ে দিলাম। তারপরের দিন রিপোর্ট আসলো, এবং আমার অন্য আরেকজন সরকারী চিকিৎসক স্যার আমাকে কিছু মেডিসিন খাওয়ার পরামর্শ দিলেন এবং সাথে কিছু ভালো খাবারেরও। যদিও আমার জন্য খুব সামান্য টাকা বটে! কিন্তু সময়টা এমন যে আমার পকেটে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা হবে হয়তো, কিন্তু আমার চলাফেরা দেখে কারো বোঝার উপায় নেই। সাধারণত বিবাহিতদের অসময়ে টাকার প্রয়োজন হলে, বউ এর কাছে কিছু থাকলে বলতে পারে। কিন্তু আমার সেই সুযোগ নেই, কারণ আমি তিন বছর হলো বিয়ে করেছি। আমার বউয়ের কাছে কখনো কোন টাকা পয়সা রাখতে দেইনি বা খরচের জন্যও রাখিনি। কারণ আমি ভেবেছি সবসময় আমার পকেটে টাকা থাকবেই। যেটা অতীত থেকে করে এসেছি এবং দেখেও এসেছি।

সে যাই হোক মেডিসিন লাগবে, আমি আমার অফিসের শ্রদ্ধেয় স্যার কে জানালাম। স্যার ব্যবস্থা করছেন বললেন, এবং আমাদের অফিসে একজন সহকর্মীকে বললাম আমাকে মেডিসিনগুলো এনে দিতে। সে এনে দিলো হয়তো নিজের টাকা দিয়ে, পরে অফিস এর শ্রদ্ধেয় স্যার এর কাছ থেকে নিয়ে নেবে।

চিকিৎসা হলো, মেডিসিন হলো। কিন্তু নিজের মুখের স্বাদ আমার অসময়ে আমারই বিরোধিতা করা শুরু করলো। এমন কি আমার বউয়ের মুখের স্বাদও। এবং আমাকে ভাবাতে শুরু করলো, আমার কত বড় বড় মানুষের সাথে পরিচয়! আমি কত টাকা লেনদেন করেছি মানুষের সাথে! কত টাকা উপার্জন করেছি! মানুষকে ভালো খাওয়ানোর জন্য যতটুক পারি নিজের টাকা সবসময় না পারলেও আমার সেই মহান ব্যাক্তিত্ব পরোপকারি স্যারের টাকা হলেও মানুষকে দিয়েছি। যদিও আমার সেই স্যার কোন দিন আমার কাছে কোন হিসাব চায়নি! এবং কখনো জিজ্ঞাসাও করেনি, কার পেছনে টাকা খরচ করি! আমি শুধু অফিসিয়াল ভাউচারে “P”, মানে স্যার এর “পারসোনাল” লিখে দিয়ে দিয়েছি! আর আজ আমি কিনা আমার বউয়ের মুখে একটু ভালো তরকারী এনে দিতে পারছি না! এগুলো ভেবে আমি আমার রুমের বাইরে অন্য ওয়াশরুমে গিয়ে নিজের অজান্তেই হাউমাউ করে মেয়েদের মতো কখন কেঁদে ফেলেছি বলতে পারবো না! যদিও সর্দি ঠাণ্ডার কারণে রুমে ঢুকে বউয়ের তীক্ষ্ণ চোখকে ফাঁকি দিতে পেরেছিলাম। তবে বলে রাখা জরুরী, আমার এতটা আর্থিক সমস্যার বড় কারণ হলো, আমি নিজের শরীরকে আরাম আয়েশের জায়গায় থাকতে দিতে পছন্দ করি না। সেই অভ্যাসের কারণে যখন করোনাভাইরাস শুরু হলো, তখন আমার স্যার এর নিজের অনিচ্ছা সত্বেও অফিসে আসা বন্ধ করতে হলো। আমি যেহেতু স্যার এর কাজগুলোর প্রতি বেশি সময় দিতাম, তাই আমার আর কোন কাজ থাকলো না। যদিও সে সময় অফিসিয়ালি নির্দেশে বেশির ভাগ কলিগই ছুটিতে! শুধুমাত্র নিউজ, কন্ট্রলরুমসহ কিছু ডিপার্টমেন্ট ব্যতিত। আমার আরও বেশি করে অবসর থাকার কারণ, স্যার অফিসে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন। কিন্তু আমার ওই যে কাজের অভ্যাস! অফিসে এসে দেখলাম একজন বিখ্যাত পরিচালক এবং একজন বিখ্যাত অভিনেতা কিছু বিষয় নিয়ে খুবই মনোযোগ দিয়ে কাজ করছেন। তারপরের দিন আমি নিজেই করোনার অ্যাওয়ারনেস নিয়ে একটি ছোট বাস্তব নির্ভর গল্প লিখে ফেললাম! এবং তারও পরের দিন সেটার শ্যুটিং করলাম সারাদিন! এবং সারারাত এডিট করে পরের দিন সকালে আমার স্যারকে দেখালাম! স্যার বললেন, “-ওকে”!

যদিও লেখাগুলো আমি খুব সংক্ষেপে লিখছি, মনে হচ্ছে আমি একাই সব করে ফেললাম! আসলে ঘটনা এমন না, এর পেছনে আমার শ্রদ্ধেয় সেই পরিচালক, অভিনেতা, ক্যামেরা, এডিটিংসহ সমস্ত বড় ভাইদের জন্যই সেটা সম্ভব ছিলো।

পরবর্তিতে সবাই অনুষ্ঠানটি পছন্দ করলো, যার অনুপ্রেরণা থেকে ওই সময়েই ৩০ থেকে ৩৫ টা করোনা অ্যাওয়ারনেস নিয়ে অনুষ্ঠান নির্মাণ করা হয়েছিলো। এবং কোন একটা প্রথম সারীর বেসরকারী টেলিভিশনে করোনা অ্যাওয়ার্নেস নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন টপিকে একেকটা অনুষ্ঠান সারা দিনে ৮ থেকে ১০ বার প্রচারিত হয়েছিল। যা কোনরকম বিজ্ঞাপন ছাড়াই টেলিভিশনের ক্রান্তিকালেও জনস্বার্থে টেলিভিশনের মালিক প্রচার করেছিলো। এবং তার পর থেকে আমার বহুদিনের ইচ্ছা বাংলাদেশের প্রতিটি পাড়াগ্রামকে নিয়ে যদি কোন দিন সময় সুযোগ হয় তাহলে প্রামাণ্যচিত্র করব।

আর আমার মনে হলো, সেই সুযোগ এই করোনার বছরেই পেয়ে গেলাম! কারণ আমার নিজের কিছু অর্থ এবং আমার স্যার অফিসে না আসায় আমার সময়, এই ভেবেই আমি আমার সামর্থ্যের বাইরেই রিস্ক নিয়ে শুরু করলাম আমার সেই প্রজেক্ট, এবং নিজের কিছু টাকার সাথে প্রকাশ না করার মতো একজন আত্মীয়ের কাছ থেকেও নিলাম বড় অঙ্কের টাকা! যা দিয়ে আগে পরে কিছু না ভেবেই ইনভেস্ট করলাম। আলহামদুলিল্লাহ! কাজের ফিডব্যাক ও আসতে শুরু করলো, তার পরেই স্যার দেশ থেকে যাওয়ার পরেই কেমন যেন সব স্বপ্ন আশা হঠাৎ করেই অনেক দূরে যাওয়া শুরু করলো! যদিও এখন অব্দি সেটা চলমান আছে এবং হাল হয়তো এখনো ছাড়িনি! বাকিটা আল্লাহ যদি চায়। এবং এই কারণেই আমার আর্থিক সমস্যার মুহূর্তগুলো আসছে।

কিন্ত ওই মুহূর্তে স্ত্রীর ভালবাসার তীক্ষ্ণ চোখকে ফাঁকি দিতে পারলেও মনকে ফাঁকি দেওয়া এতো সহজ নয়। তার পরে আবার বাঙালি সু-বংশের মেয়েরা!

হঠাৎ আমাকে বলে ফেলল “আপনার স্যার দেশে থাকলে আপনার করোনা হয়েছে শুনলে এতো দিনে কতবার আপনার খবর নিতো তাই না!”

কথাটা শোনার পরে আমি নিজেকে কোথায় যেন কল্পনায় নিয়ে বউয়ের কথার উত্তর না দিয়ে ফোন এ কথা বলব এমন ভান ধরে আবারও বাইরের ওয়াশরুমে গেলাম। কিন্তু এবার আর হাউমাউ করে কান্নার শক্তি নেই!

যা হোক, বউয়ের থেকে আড়াল করার জন্য এবার ভালো করে চোখে মুখে পানি নিলাম অর্ধেক গোসল এর মতো। ঘুমানোর সময় বউকে বললাম, স্যার অসুস্থ কিভাবে বলি আমার করোনা হয়েছে!

স্যার এখন অনেক দূরে! কোটি মানুষের ভালোবাসার যায়গা থেকে সবাই দোয়া করে চলেছেন। আল্লাহ যে অতি দ্রুত সুস্থ করে হাজার হাজার মানুষের খাবার যোগানের উছিলা এবং সবার ভালো চাওয়া, ভালো থাকার চিন্তায় মগ্ন এই মহান মানুষটাকে আমাদের মাঝে যেন দ্রুত নিয়ে আসেন।
অতঃপর দুই দিন পার হলো। আমি নিজে যে কিছু কাজের জন্য স্টাফ নিয়েছি তাদের মধ্যে একজন আর্থিকভাবে খুবই অস্বচ্ছল! তার কিছু টাকা লাগবে আমি অন্য মাধ্যমে জেনেছি, এবং আমার এই অবস্থা যে সব মিলিয়ে আমি এখন বেশির ভাগ সময় ওয়াশরুমে গিয়ে বসে থাকতে বেশি ভালো লাগছে… স্বাভাবিক এর ন্যায় আমার ফোন এর রিংটোন বেজে উঠলো, আমি স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখলাম আমার শ্রদ্ধেয় একজন স্যার ফোন করেছেন। আমি রিসিভ করলাম স্বাভাবিক ভাবেই। স্যার ওপাশ থেকে প্রথমেই জিজ্ঞেস করে বসলেন আমার নাম ধরে! “তোমার শরীরের কি অবস্থা?” আমি বললাম, “ ভালো স্যার!” আমি করোনার বিষয়টা লুকানোর চেষ্টা করে কিছু একটা বলার প্রস্তুতি নিচ্ছি, তার আগেই এতো বড় সরকারী ক্ষমতাধর স্যার আমাকে বলে ফেললেন- “করোনা হয়েছে আমি জেনেছি, এখন শরীর কেমন?”

সমস্ত আবেগ অনুভূতি লুকিয়ে আমি নিজেকে শক্ত করে বললাম, “আলহামদুলিল্লাহ, স্যার আমি ভালো ইনশাআল্লাহ!” স্যার আমার বউয়ের কথাও জিজ্ঞেস করলেন এবং হাসপাতালে ভর্তির জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করতে চাইলেন। আমি বললাম “স্যার, আমি ভালো আছি ইনশাআল্লাহ!” তিনি কয়েকবার বলেলনও। তারপর আবারও বললেন, “খারাপ লাগলে অবশ্যই জানাবে। আমি বললাম- “জি স্যার।”

ঘুমিয়ে পড়েছি। রাতে খাবার খাইনি হয়তো স্বার্থপর মুখে স্বাদ ছিলনা তাই..।

তার পরে পার হলো আরও দুইদিন! আমি বাসায় আছি এবং বউয়ের সাথে বিভিন্ন কথায় হালকা মজার ঝগড়া করি। যদিও বউ মনে মনে খুব খুশি, কারণ তিন বছর বিয়েতে কোন হানিমুন বা আলাদা করে তাকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়া কখনো হয়নি, তাই এই সুযোগে আমি দীর্ঘ কয়দিন বাসায় আছি এবং বাধ্যতামূলক থাকতে হবে। সেই কারণেই সে খুব খুশি। যাই হোক, আমি কোন কিছুই ভেবে কোন উপায় করতে পারছি না, কোন মানুষকে বলতে পারছি না, কেউ বুঝতে পারছে না, আমি এতোটা বিভৎস অবস্থায় আছি যদিও আমি নিজে যে কয়জনকে জানিয়েছি, তাদের সবাইকেই আমার আর্থিক অবস্থার কথা বলিনি বা বলতে পারিনি। ছোটবেলা থেকে শুনে এসেছি সৃষ্টিকর্তা নাকি মানুষের মধ্যে থাকে, ফেরেস্তা নাকি মানুষের রূপ ধারণ করে পৃথিবীতে কাজ করেন। যদিও তার পুরো সত্যতা মানুষের মধ্যে না থাকাই স্বাভাবিক! কিন্তু আপনার নিজের সাথে যদি কখনো এমন কোন ঘটনা ঘটে থাকে, তাহলে হয়তো পৃথিবীর সমস্ত মানুষ যদি তাকে ভুলও বোঝে, আপনি এবং আপনার মতো যারা সেই মানুষটির দ্বারা আপনার নিজের অজান্তেই তার উপকার পেয়ে এসেছেন তখন সমস্ত মানুষের ধারণা আপনার কাছে তুচ্ছ মনে হবে। যদিও আমার জীবনে আরো মানুষরূপী ফেরেস্তার সান্নিধ্য পেয়েছি, হয়তো সেটা এরকম না।

এবং আমি এখন যেটা লিখতে যাবো সেটা হয়তো লক্ষ মানুষের লেখা, হয়তো কেউ লেখার সুযোগ পায়নি অথবা সময় হয়নি। আমার বিশ্বাস এই লেখাটা দেখলে তাদের মনে পড়ে যাবে সেই ব্যাক্তির কথা।

হঠাৎ আমার ফোনে একটি কল আসলো- “আপনার বাসার নিচে আমরা আসছি একটু উপরে আসবো? আমাদের ডিআইজি হাবিব স্যার পাঠিয়েছেন।”
আমি- “দ্রুত আসেন, প্লিজ ভাইয়া!”
দরজা খুলতেই বিশাল বড় দেশি বিদেশি ফলের বাস্কেট আমার টেবিলে রাখলেন। সাথে একটি খাম! তাতে লেখা আছে- “ডিআইজি, ঢাকা রেঞ্জ”।

দুইজন পুলিশ সদস্য দেরি না করে চলে গেলেন। আমাকে এগুলো দিয়ে কে পাঠিয়েছেন সেটা আর দ্বিতীয়বার বললেন না। আমি প্যাকেটটা পেয়ে আমার বউকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললাম! আমার বউ কিছু বুঝে উঠার আগেই আমাকে শান্ত করলো। এবং ফলগুলো পেয়ে ছোট বাচ্চাদের মতো খাওয়ার জন্য পায়চারি করতে লাগলো। যদিও, বউ ফল খুব কম খায়। এবং পুনরায় আমি আবার এই বন্দি দিনের সঙ্গী, ওয়াশ রুমে এবার আনন্দের কান্নায় নিজেকে আবিষ্কার করলাম । যাই হোক, আজ ২৬-০৩-২০২১ বাঙালি জাতির মহান স্বাধীনতা দিবস! যেটা লিখতে বসে এতো কিছু লিখে ফেললাম সেটা হলো হাজার অগণিত পুলিশ কন্সটেবলসহ নাম না জানা অসংখ্য সদস্যদের অসুস্থতায় ছটফট করার সময় সরাসরি-
ডিআইজি, ঢাকা রেঞ্জ, বলে ফোন দিয়ে খোঁজ নেয়া! ফলের বাস্কেট পাঠানো, চিকিৎসা খরচসহ খোঁজখবর নেয়া, সমাজের পিছিয়ে পড়া হাজারও মানুষ ও সম্প্রদায়- বেদে, হিজড়াসহ অসংখ্য মানুষের হাবিব স্যার, হাবিব ভাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আদরের হাবিবুর রহমান!

ভালবাসার এই পুলিশ কর্মকর্তা জনাব হাবিবুর রহমান, (বিপিএম বার, পিপিএম বার, ডি আই জি, ঢাকা রেঞ্জ) মহোদয় আজ নিজেই করোনায় আক্রান্ত হয়েও হাসপাতাল থেকেই নিজের আত্মবিশ্বাসে অনড় থেকে কর্মকাণ্ডের তদারকি করে চলেছেন।

আজ কোন কাজ করতে না পারা বেদে সম্প্রদায়ের সেই বয়স্ক মানুষটির খাবার যোগানোর মানুষ হাবিব দয়ালুকে হয়তো ফোন এ বলতে পারবে না “স্যার কেমন আছেন?” এবং হাসপাতালের বিছানায় সুস্থ হওয়া সেই কনস্টেবল হয়তো তার এই মহান স্যার কে বলতে পারবে না ফোন দিয়ে স্যার আপনার কিছু লাগবে? বা পাঠাতে পারবে না কোন ফলের বাস্কেট অথবা চিকিৎসার খরচ!
কিন্তু কোটি মানুষ দোয়া করছেন এই মানবতার ফেরিওয়ালা জনাব হাবিবুর রহমান (বিপিএম বার, পিপিএম বার, ডি আই জি, ঢাকা রেঞ্জ) মহোদয় যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে ফিরে আসেন সবার মাঝে।
সর্বশেষে তার সুস্থতা কামনায় লাখো মানুষের মধ্যে আমিও একজন।


যোগাযোগ

বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যলয়

কাব্যকস সুপার মার্কেট, ৩ ডি কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫।

মোবাইলঃ ০১৬২২৬৪৯৬১২, ০১৬০০০১৪০৪০

মেইলঃ tadantachitra93@gmail.com, tchitranews@gmail.com

সামাজিক যোগাযোগ

Web Design & Developed By
A

তদন্ত চিত্র কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েব সাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি।