অনলাইন ডেস্ক: ঈদ উল ফিতরের আগে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অহরহ ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনায় পরিবহন শ্রমিক ও যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ মহাসড়কে দিন দিন ডাকাত ও ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম বেড়েই চলেছে। ডাকাত ও ছিনতাই চক্রের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না পণ্যবাহী গাড়ি থেকে শুরু করে যাত্রীবাহী বাস, কার, মাইক্রোবাস, সিএনজি চালকরাও। তবে শিল্পকারখানার পণ্যবাহী গাড়ি ও প্রবাসফেরত যাত্রী ডাকাত ও ছিনতাইকারীদের সবচেয়ে বেশি টার্গেটে থাকে।
থানা, হাইওয়ে ও ফাঁড়ি পুলিশ নিয়মিত টহল দিলেও কোনোভাবেই কমানো যাচ্ছে না ছিনতাই ও ডাকাতি। পুলিশ সম্প্রতি কয়েকজনকে গ্রেফতার করলেও কোনোভাবে ডাকাতি ও ছিনতাই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের প্রায় ১৬ কিলোমিটার রাস্তায় রাতের বেলা ছিনতাইকারী ও ডাকাতদের দখলে চলে যায় বলে পরিবহন শ্রমিকরা অভিযোগ করেছেন। রমজান মাস ও ঈদে তাদের তৎপরতা আরো বৃদ্ধি পায়। মহাসড়কে যখন যানজট বাড়ে তখনই ছিনতাই ও ডাকাতির তৎপরতা বেড়ে যায়।
সোনারগাঁ থানা সূত্রে জানা যায়, গত ৬ মাসে সোনারগাঁ থানায় ৭টি ডাকাতি ও ৩টি ছিনতাইয়ের মামলা গ্রহণ করা হয়। এসব মামলায় ৩১ জনকে গ্রেফতার করা হয়। সবগুলো ঘটনায় মামলা গ্রহণ করে সোনারগাঁ থানা।
সূত্র জানায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর কিউট পল্লী এলাকায় ২০২১ সালে ২৪ অক্টোবর রাতে শম্ভুপুরা এলাকার বাসিন্দা দুবাই ফেরত আলমগীর হোসেন নামের এক প্রবাসীর গাড়ি গতিরোধ করে স্বর্ণলংকার, মোবাইলসেট ও তার সঙ্গে আনা মালপত্র লুট করে নিয়ে যায় ডাকাতরা।
গত ৩ জানুয়ারি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দড়িকান্দি এলাকায় রাত দেড়টার দিকে যানজটে আটকা পড়লে মাইক্রোবাসের যাত্রীদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মোবাইল ফোন, নগদ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা।
২৪ জানুয়ারি রাতে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার ইস্পাহানির চর এলাকায় তৌহিদুল ইসলাম তার ব্যক্তিগত গাড়িতে করে বাড়ি ফিরছিলেন। রাত সাড়ে ১২টার দিকে পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের সামনে ইউটার্নে ৫-৬ জন যুবক গাড়ির গতিরোধ করে নগদ ৫৭ হাজার টাকা, স্বর্ণের চেইন ও আংটি, দুটি মোবাইলসেট ছিনিয়ে নেয়।
৭ ফেব্রুয়ারি রাতে সোনারগাঁয়ের মেঘনা ঘাট এলাকার ফ্রেশের সুগার মিল থেকে কিশোরগঞ্জ যাওয়ার জন্য একটি ট্রাক রাত সাড়ে ১১টার দিকে রওনা হয়। পথে রাত পৌনে ২টার দিকে পাকুন্ডা এলাকায় ওই ট্রাকটির চালক আফজাল হোসেন ও হেলপার সোহাগকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে চিনিসহ ট্রাকটি ছিনতাই করে নিয়ে যায়।
১৯ মার্চ কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার মাইজখার গ্রামের সৌদি প্রাবাসী ফারুক হাওলাদার দীর্ঘ ১৩ বছর পর দেশে ফিরে আসেন। তিনি স্ত্রী, দুই সন্তানসহ প্রাইভেটকারে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে তিনি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর কিউট পল্লীর সামনে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গাড়ি থামান। হঠাৎ করে ৬-৭ জনের একটি ডাকাত দল এসে গাড়ির মধ্যে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তার একটি স্যুটকেস, নগদ ১২ হাজার টাকা ও ১৪শ সৌদি রিয়েল নিয়ে যায়।
মেঘনা উপজেলার মানিকের চর গ্রামের কবির হামজা। আবুধাবি থেকে বাড়িতে ফেরেন ৯ জানুয়ারি রাতে। তার সঙ্গে ছিল বিদেশি পণ্য, মোবাইল সেট ও স্বর্ণালংকার। মহাসড়কের আষাঢ়িয়ারচর ব্রিজের সামনে তাদের বহনকারী মাইক্রোবাস গতিরোধ করে মুখোশধারী ডাকাতদল সর্বস্ব লুট করে নিয়ে যায়।
এদিকে ২ মার্চ রাতে সাদিপুর এলাকায় ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ২ ডাকাতকে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় গ্রেফতার করে পুলিশ।
এছাড়াও ৪ মার্চ ভোরে র্যাব-১১’র একটি দল কাঁচপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৪৫৫টি মোবাইলসেটসহ ছিনতাই চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেফতার করে।
১৬ মার্চ রাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ডাকাতির প্রস্ততিকালে ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত দেশীয় অস্ত্রসহ ডাকাত চক্রের ৩ সদস্যকে বন্দেরা এলাকা থেকে গ্রেফতার করে সোনারগাঁ থানা পুলিশ।
৬ এপ্রিল রাতে পিরোজপুর এলাকা থেকে কাঁচপুর হাইওয়ে থানা পুলিশ রানা নামে এক ছিনতাইকারীকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করে।
চলতি মাসের ৯ এপ্রিল রাতে কাঁচপুর চেঙ্গাইন এলাকায় ডাকাতির প্রস্তুতির সময় দেশীয় অস্ত্রসহ ৭ ডাকাতকে গ্রেফতার করে পরদিন আদালতে পাঠায় সোনারগাঁ থানা পুলিশ।
এসব বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান জানান, জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশে ঈদ উপলক্ষে অতিরিক্ত টহলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে পুলিশের নজরদারি রয়েছে। আশা করি ছিনতাই ও ডাকাতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।
সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান বলেন, মহাসড়কে ডাকাতি বা ছিনতাই অল্প সময়ের মধ্যে ঘটিয়ে অপরাধীরা পালিয়ে যায়। এরইমধ্যে প্রায় ৩১ জন ডাকাত ও ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। মহাসড়কের ডাকাতি ও ছিনতাই নিয়ন্ত্রণে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নবীর হোসেন বলেন, মহাসড়কে ডাকাতি ও ছিনতাই প্রতিরোধে হাইওয়ে পুলিশ আশপাশের সব থানার পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে ডাকাতির ঘটনার চেয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনা বেশি। ডাকাত ও ছিনতাইকারীদের চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এছাড়া মহাসড়কে কোনো ডাকাতি, ছিনতাইয়ের ঘটনা যেন না ঘটে সে বিষয়ে আমরা সতর্ক রয়েছি।
‘ভাঙ্গায় পৃথক দুটি সড়ক দুর্ঘটনায় চারজন নিহত’
ফরিদপুরের ভাঙ্গায় পৃথক দুটি সড়ক দুর্ঘটনায় চারজন নিহত হয়েছেন। নিহতদের......বিস্তারিত