TadantaChitra.Com | logo

২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

দুই নেতার স্বেচ্ছাচারিতার অন্ত ছিল না

প্রকাশিত : অক্টোবর ২৮, ২০১৯, ১৭:১১

দুই নেতার স্বেচ্ছাচারিতার অন্ত ছিল না

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ উপজেলায় আওয়ামী লীগের নেতারা কোনঠাসা হয়ে পড়েন। তার দলের নেতাদের বাহিরে কেউ কোনো চাকরি, সরকারি সহায়তা পায় না। ইজারা নেওয়া জমিতে ফসল ভালো হলেও কোনো কৃষক তা ঘরে তুলতে পারতেন না। তার লোকজন জমিদারের পাইক-পেয়াদার মতো নির্যাতন চালিয়ে সব কিছু লুটে নিয়ে যেত। এ নিয়ে প্রতিবাদ করলেই তাকে মারধর করা হতো। আর চাচাত ভাই রিপন দেবনাথ ও রামনাথ দেবনাথকে দিয়ে চর দখল, বালু ও জলমহালগুলো দখল ও নিয়ন্ত্রণ করতেন। তারাই তার ডান ও বাম হাত।

তার আসনের আওয়ামী লীগের নেতারা জানান, দুই উপজেলায় জেলা কমিটি কোনো সহযোগী সংগঠনের কমিটি অনুমোদন দিলে তা তিনি মানতেন না। তার ইচ্ছা মতোই সহযোগী সংগঠনের কমিটি দিতেন তিনি। আর এসব কমিটিতে তার মনোপুত লোকজনই ঠাঁই পেত। পঙ্কজের কারণে আওয়ামী লীগের নেতারা এলাকায় কোনো স্কুল ও কলেজের ম্যানেজিং কমিটির সদস্যও হতে পারত না। দুঃখ করে তার আসনের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মুনসুর আহমেদ বলেন, কতজনে আমাকে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি করতে চেয়েছে কিন্তু এমপি ডিও লেটার দেয় না। কারণ আমরা তার অনুগত লোক নই বলে। অথচ তার লোকদের সে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কমিটিতে ইচ্ছা মতো পদে বসিয়েছে। হিজলার এক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, তার তো আওয়ামী লীগকে দরকার নেই, চোর আর বাটপারদের নিয়ে তার সংগঠন।

নেতাকর্মীরা আরও জানিয়েছে, প্রতিটি সরকারি টেন্ডারে কাজের বাজেটের ১০ শতাংশ তার জন্য রাখতে হতো। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিয়োগে তাকে দিতে হতো। সর্বশেষ হিজলা অনার্স কলেজে শিক্ষক নিয়োগেও এলাকার মিলন চেয়ারম্যানের মাধ্যমে ৩ থেকে ৫ লাখ করে টাকা নিয়েছেন।

স্থানীয় এক আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, সরকার নদী ভাঙনে নানা পদক্ষেপ নিলেও এই এমপি যেন ছিলেন নদী ভাঙার পক্ষে। তাইতো তার এলাকার বিভিন্ন নদী থেকে অবাধে তার লোকরা বালু তুলত।

বছর খানেক আগে ভাসানচরের এক যুবককে বালু উত্তোলণের দায়ে গ্রেফতার করে সাজা দিলে পঙ্কজ খুব ক্ষেপে যান। শুধু কি তাই, রেনু পোনা ধরা ও মা ইলিশ ধরা নিষেধ থাকলেও তিনিই তার লোকজনদের নিয়ে এসব অপকর্ম করাতেন। তার লোকেরা মেঘনা, গোবিন্দপুর থেকে হাইমচরের শেষ সীমানা পর্যন্ত মা ইলিশ অবাধে এখনও ধরছে। তার আসনের বিভিন্ন মসজিদ ও মন্দিরের জন্য যে বরাদ্দ দেওয়া হতো তার সবটাই তিনি পকেটস্থ করতেন। হিজলা উপজেলার এক নেতা বলেন, গত কয়েক বছরে মসজিদগুলোতে কোনো অনুদান আসেনি। অথচ সরকার তো ঠিকই দেয়, তা হলে এ অনুদান যায় কই?

১০ বছরে কাওসারের বাড়ি গাড়ি পরিবহন ব্যবসা : মোল্লা আবু কাওসার ১০ বছর আগেও ভাড়া বাসায় থাকতেন। কিন্তু দলীয় পদে সভাপতি হয়ে তার ভাগ্য খুলে যায়। এই কয়েক বছরে হাজারীবাগে তার নিজস্ব বাড়ি, ফ্লাট, পরিবহন ব্যবসা হয়েছে। শুধু কি তাই, নিজের দুই ভাগিনাকে দিয়ে তিনি রাজধানীর গণপূর্ত, সিটি করপোরেশন, রাজউক ও শিক্ষার টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করতেন। তার একটি ফাইন পাওয়ার সলিউশন নামে নামমাত্র ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে বলে জানা গেছে।

এই নামমাত্র ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামেই দুই ভাগিনার মধ্যে হাসানকে দিয়ে রাজউজ ও আলিমকে দিয়ে গণপূর্ত নিয়ন্ত্রণ করতেন মোল্লা কাওসার। কখনও নিজের প্রতিষ্ঠানের নামে আবার কখনও অন্য প্রতিষ্ঠানের নামে তিনি কাজ নিতেন। তবে বেশির ভাগ কাজই অর্ধেক দরে অন্য ঠিকাদারের কাছে বিক্রি করতেন। এভাবে কাওসার খুব অল্প সময়ে গাড়ি, বাড়ি, ফ্লাটও জমির মালিক বনে যান।

২০১২ সালে তিনি স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলনে সভাপতি হন। এরপরই কাওছারের অবস্থা দ্রুত বদলাতে শুরু করে। ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে শুরু করেন একাত্তর পরিবহন নামে ঢাকায় পরিবহন ব্যবসা। এরপর মিরপুর থেকে মতিঝিল রুটে ১০টি বাস নিয়ে যাত্রা শুরু করে একাত্তর পরিবহন। অভিযোগ রয়েছে বিদেশে করেছেন অঢেল সম্পত্তি, পাচার করেছেন টাকা। স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতা বলেন, তিনি সভাপতি হলেও তার দলকে নিয়ে কোনো ধরনের পরিকল্পনা ছিল না।

কখন কিভাবে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি করা যাবে এবং কিভাবে ব্যবসাকে বাড়ানো যাবে সেই চিন্তাই তার সারাক্ষণ ছিল। এ কারণে দলীয় কর্মীরা কোনো পরিকল্পনা নিয়ে গেলে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতেন। কাওছার নিজেকে আইনজীবী হিসেবে দাবি করলেও কখনও তিনি প্রাকটিস করেছেন বলে কেউ জানাতে পারেনি। তারপরও গায়ের জোরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক ছাত্রদের নিয়ে গঠিত আইন সমিতিতে রয়েছে তার একক আধিপত্য। পুরো আইন সমিতি তার নিয়ন্ত্রণে।

শুধু তাই নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি হলেও সংগঠনটিতে সবই চলতো তার নেতৃত্বে। নিয়মিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনে অফিস করতেন। একই সঙ্গে তিনি গোপালগঞ্জ সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। অভিযোগ রয়েছে, এই সমিতির নাম ভাঙিয়ে তিনি চাঁদাবাজি করতেন। সংগঠনের সদস্যদের কাছ থেকে পিকনিক বা কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করার কথা বলে মোটা অংকের চাঁদা নেন তিনি। আর এসব চাঁদার টাকা ভরতেন নিজের পকেটে।

অভিযোগ রয়েছে, মাসে দুই থেকে তিনবার যেতেন দেশের বাইরে। আর এসব তিনি করেন বিদেশ কমিটির নেতাদের অর্থায়নে। যেসব দেশে প্রবাসী বেশি, সেখানেই শাখা খুলেছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ফ্রান্স, ইতালিসহ ১৫টি দেশে শাখা আছে স্বেচ্ছাসেবক লীগের। আর এসব দেশের নেতাদের কাছ থেকে তিনি বাড়তি সুবিধা নিতেন। এই দেশগুলোর বাইরে প্রবাসী নেতাদের কাছ থেকে তিনি মোটা অংকের টাকা নিয়ে দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়ান।

বিশাল মোটর সাইকেল শোডাউন : পঙ্কজ দেবনাথকে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সকল সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু সেই নির্দেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এই নেতা শনিবার হিজলা, মেহেন্দিগঞ্জ এবং কাজিরহাটে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন পঙ্কজ দেবনাথ।

প্রায় হাজার খানেক নেতাকর্মীদের নিয়ে তিনি শোডাউন দেন। এ সময় তিনি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিমকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘পেছন থেকে একজন কলকাঠি নাড়ছে। আমিও খেলব।’ এ সময় এলাকার নেতাকর্মীরা বলাবলি করে, এত কিছুর পরেও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অমান্য করার সাহস পায় কী করে পঙ্কজ?

এলাকাবাসী জানায়, শনিবার পঙ্কজ দেবনাথ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশকে অমান্য করে তার আসনের তিনটি জায়গায় শোডাউন করেছেন। এ সময় হাজারখানেক নেতাকর্মীদের মোটরসাইকেলে প্রধান সড়কে অন্য যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শোডাউন চলাকালীন সময়ে বক্তব্যে এই এমপি সবার উদ্দেশে বলতে থাকেন, তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। এই ষড়যন্ত্রে তার এলাকার কোনো নেতাকর্মী যাতে কান না দেন। তবে এই শোডাউনে তার স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মীদের ছাড়া আওয়ামী লীগের অন্য সংগঠনগুলোর কোনো কর্মীকে খুঁজে পাওয়া যায়নি বলেও জানান তারা।

এক আওয়ামী লীগের নেতা বলেন, তার তো লজ্জা থাকা দরকার, প্রধানমন্ত্রী তাকে সকল কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছে। এরপরও সে কেন এলাকায় আসবে আর কেনই বা শোডাউন করবে। সে কি প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে ভুল প্রমাণ করতে চায়? অন্য নেতারা বলেন, তার এমন কাজের কারণে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা দরকার।


যোগাযোগ

বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যলয়

কাব্যকস সুপার মার্কেট, ৩ ডি কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫।

মোবাইলঃ ০১৬২২৬৪৯৬১২, ০১৬০০০১৪০৪০

মেইলঃ tadantachitra93@gmail.com, tchitranews@gmail.com

সামাজিক যোগাযোগ

Web Design & Developed By
A

তদন্ত চিত্র কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েব সাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি।