TadantaChitra.Com | logo

২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ক্যাসিনো খালেদের ক্যাশিয়ারের নামে মামলা হলেও গ্রেফতার নাই!

প্রকাশিত : মে ১৪, ২০২০, ১২:১৯

ক্যাসিনো খালেদের ক্যাশিয়ারের নামে মামলা হলেও গ্রেফতার নাই!

তদন্ত চিত্র ডেস্কঃ দেশের এই সংকটময় ভয়াভহ মূহুর্তে মানুষ যখন একটু ভালো থাকার আশায় দিশেহারা, ঠিক তখনই আবার কিছু মানুষ নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে ব্যস্ত। ক্ষমতা এবং টাকাই যেন তাদের কাছে সব। এমনই এক ঘটনায় গত ১১ই মে খিলগাঁও থানায় একটি চাঁদাবাজি মামলা দায়ের হয়। মামলা সূত্রে জানা যায়, ক্যাসিনো খালেদের অন্যতম সহযোগী ও নানা অভিযোগে অভিযুক্ত ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের স্ব ঘোষিত নেতা শাহাদাত হোসেন সাদু ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে খিলগাঁও থানায় চাঁদাবাজির মামলা রজু হয়েছে। এ মামলায় অপর দুই আসামি গ্রেফতার হলেও, প্রধান আসামী শাহাদাত হোসেন সাদুকে এখনো গ্রেফতার করতে পারেননি পুলিশ।

এদিকে মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের শীর্ষ দুই নেতা সম্রাট ও খালেদ গ্রেফতার হলে সাদু একটু গা ঢাকা দিয়ে, সময় বুঝে আবার এলাকায় ফিরে। এলাকায় ফিরেই যুবলীগের তকমা মুছে, আওয়ামী লীগের নেতা হওয়ার দৌড়-ঝাপ শুরু করেন। নিজেকে মহানগর আওয়ামী লীগের এক নেতার কাছের লোক হিসেবে পরিচয় দিয়ে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। আওয়ামী লীগের তকমা ব্যবহার করলেও বঙ্গবন্ধুর আর্দশকে ধারণ করতে পারেননি তিনি। যেকোনো ভাবেই হোক অর্থকামানোর নেশায় বিভোর সাদু। তার রাজ্যে সন্ত্রাসী, মানুষকে ভয় দেখানো, টর্চার করা, চাঁদাবাজিই যেন অন্যতম পথ। এই মামলায় সাদু প্রধান আসামি হলেও তদন্ত কর্মকর্তা তাকে খুঁজে পাচ্ছেন না। তবে দুইজন আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ভুক্তভোগী পরিবারটি সঠিক বিচারের দাবি জানিয়ে নিজেদের নিরাপত্তার দাবি করেন।

জানা গেছে, ঢাকা মহানগর দক্ষিণে বহিস্কৃত সাবেক যুবলীগ নেতা ‘মাদক সম্রাট’ খালেদ মাহমুদ ভুঁইয়া। দক্ষিণের প্রতিটি থানা এলাকায় তার নিয়োগ দেওয়া আছে একজন করে সেক্টর প্রধান। তারা ঐসব থানা এলাকায় মাদকের সার্বিক বিষয় দেখভাল করেন। আর খালেদের মাদক ব্যবসার ক্যাশিয়ার হলেন শাহাদাত হোসেন সাদু। তৎকালে প্রতি রাতে সাধু মাদকের ১০-১৫ কোটি টাকা নিয়ে যেতেন খালেদের বাসায়। এই টাকা সেখানে ভাগ হত। পরদিন সকালের মধ্যে সংশ্লি­ষ্টদের কাছে টাকার ভাগ পৌঁছে যেত। সে সময় মাদকের এই টাকা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটসহ যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা পেতেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ থেকে বহিষ্কৃত খালেদ মাহমুদ ভুঁইয়া ওরফে ল্যাংড়া খালেদ জিজ্ঞাসাবাদে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে মাদক ও টাকার ভাগের এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছেন। ক্যাসিনো বাণিজ্যের পাশাপাশি মাদকের ব্যবসায় খালেদের সর্বাধিক আয়।

খালেদের মাদকের ক্যাশিয়ারের নাম শাহাদাত হোসেন সাধু ওরফে সাধন। শাহজাহানপুর, খিলগাঁও ও মালিবাগ কাঁচাবাজার এলাকায় চাঁদা আদায় এবং মাদকের একক আধিপত্য সাধুর। খিলগাঁওয়ে রবি সংঘ ও জাগরণী সংসদে মদ, জুয়া, ইয়াবাসহ মাদকের হাট বসে। সাধুকে যুবলীগের নেতা বানান খালেদ। তবে ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটেরও আশীর্বাদ ছিল সাধুর ওপর। দক্ষিণে মাদকের সব টাকা যেত সাধুর কাছে। নেতাদের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এক শ্রেণির কর্মকর্তাও মাদকের টাকার ভাগ নিয়মিত পেতেন। এ কারণে কঠোর অভিযানের মধ্যেও রাজধানীতে ইয়াবা আসা বন্ধ হয়নি। সাধু এক সময় ঐ শাহজাহানপুর এলাকার টোকাই ছিল। এলাকাবাসীর সবাই তাকে চেনে টোকাই সাধু হিসেবে। যুবলীগ নেতা খালেদের সংস্পর্শে এসে জিরো থেকে হিরো বনে গেছেন। তিনি এখন কয়েকশ কোটি টাকার মালিক।

সে সময় র্যাব, পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ইয়াবাসহ মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নিয়ে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। র্যাবের হাতে গ্রেফতার ও নিহত হচ্ছে প্রায় দিনই। উদ্ধার হচ্ছে বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ মাদক। ওই সময় খালেদের মতো ইয়াবা সম্রাটের কারণে রাজধানীতে ব্যাপক হারে ইয়াবার চালান আসতো। এর বেশির ভাগ চালান আসতো খালেদের কাছে। খালেদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ও দলীয় এক শ্রেণির ক্ষমতাধর নেতার নিয়মিত আর্থিক সম্পর্ক থাকার কারণে ইয়াবার চালান বিনা বাধায় তার কাছে চলে এসেছে। খালেদ জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য প্রকাশ করেছেন। উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় রয়েছেন আরেক যুবলীগ নেতা, যার নামের আদ্যাক্ষর ‘নি’। তাকে খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বলছে, শুধু ঢাকাতেই ৩০০টি বড়ো এবং ৭০০টি ছোটো মাদকের স্পট রয়েছে। এসব বন্ধে যাদের কাজ করার কথা, সেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু অসাধু সদস্যকে মাদক কিনতে ও খেতে দেখা গেছে। তারা নিয়মিত পাচ্ছেন মাসোহারা। কিছু ক্ষেত্রে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীর পৃষ্ঠপোষকতাও পায় মাদক ব্যবসায়ীরা।

যেসব পথ দিয়ে ঢাকায় মাদক আনতেন খালেদ!

কক্সবাজার, টেকনাফ ও পার্বত্য অঞ্চলের সীমান্তপথ দিয়ে মাদক প্রবেশ করে। সেখান থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ে দিয়ে বাস, কাভার্ড ভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহনের মাধ্যমে সরাসরি যাত্রাবাড়ী এলাকা দিয়ে প্রবেশ করে। নৌপথে আসছে কক্সবাজার থেকে নারায়ণগঞ্জ, ফতুল্লা ও সদরঘাট এলাকা দিয়ে। উত্তরাঞ্চলের সীমান্তপথ দিয়ে মাদকের চালান কাভার্ড ভ্যান, নাইটকোচ, পণ্যবাহী ট্রাকসহ অন্য যানবাহনের মাধ্যমে গাবতলী ও টঙ্গী দিয়ে ঢুকছে। রাজধানী সংলগ্ন টঙ্গী হলো মাদকের বৃহত্ মার্কেট। উত্তরা ও গুলশানের মতো অভিজাত এলাকায় দামি গাড়িতে করে বিক্রি হয় মাদকদ্রব্য। মাঝে মাঝে এসব বন্ধে অভিযান চলে, তবে চুনোপুঁটিরা ধরা পড়লেও রাঘববোয়ালরা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১১ সালে বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে মাদক আইনে মামলা হয় প্রায় ৩৮ হাজার। সেখানে গত বছর মামলা সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ৭০ হাজারে। অর্থাত্ দিনদিনই বাড়ছে মরণনেশার ব্যবহার এবং এর সঙ্গে জড়িতদের সংখ্যা।

আরো পড়ুন-

বরিশাল-৪ আসনে নৌকাকে ডুবাচ্ছে এমপি পংকজ!

 


যোগাযোগ

বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যলয়

কাব্যকস সুপার মার্কেট, ৩ ডি কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫।

মোবাইলঃ ০১৬২২৬৪৯৬১২, ০১৬০০০১৪০৪০

মেইলঃ tadantachitra93@gmail.com, tchitranews@gmail.com

সামাজিক যোগাযোগ

Web Design & Developed By
A

তদন্ত চিত্র কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েব সাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি।