গত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে রহমান খুঁজে নিয়েছেন জীবনসঙ্গী। হ্যান্ডবল স্টেডিয়ামে তার বিবাহ অনুষ্ঠানে ক্রীড়াঙ্গনের অনেক মানুষই এসেছিলেন। সেটা ছিল আলোচিত অনুষ্ঠান। শারীরিক কিছু প্রতিবন্ধকতা জয় করে এগিয়ে চলা রহমানের এবারের ঈদ তো অন্যরকম। কারণ তিনি আর একা নন, আছেন স্ত্রী।
ঈদের দিন কোথায় আছেন রহমান? ফোন করতেই অপর প্রান্ত থেকে বললেন, ‘স্যার, আমি হ্যান্ডবল স্টেডিয়ামে।’ ঈদের দিন হ্যান্ডবল স্টেডিয়ামে কেন? রহমানের উত্তর, ‘ডিউটিতে আর কেউ নেই। তাই রাতে এখানে থাকতে হয়।’
ঘরে নতুন বউ। রাগ করবে না? ‘না স্যার! রাগ করবে না। আমি বৃহস্পতিবার সকালে বাসায় গিয়েছিলাম। রাতে চলে এসেছি। তাছাড়া ওকে তো ঈদের সবকিছু কিনে দিয়েছি। তাই রাগ করবে না’- আত্মবিশ্বাস নিয়েই বলছিলেন রহমান।
তো নতুন বউকে কী কিনে দিলে? ‘ওর জন্য ৭-৮ হাজার টাকা খরচ করেছি। দুটি থ্রি-পিস কিনে দিয়েছি, জুতা কিনে দিয়েছি। আরও কিছু টুকটাক জিনিস কিনেছি। এখন তো সবকিছুরই দাম বেশি’- হ্যান্ডবল স্টেডিয়াম থেকে বলছিলেন রহমান।
হ্যান্ডবলের আরেক কর্মচারী জহিরের সঙ্গে ফ্ল্যাট ভাগাভাগি করে রহমান থাকেন কাজলাতে। দুই রুমের বাসা। রহমানের রুম একটু ছোট, তাই ভাড়া দেন সাড়ে ৪ হাজার টাকা, অন্যরুমে থাকা জহির ৫ হাজার।
আগে দিনরাত স্টেডিয়ামেই থাকতেন। বিয়ে করে বাসা নেয়ার পর এখন দিনে বাড়িতে, রাতে স্টেডিয়ামে। কারণ তার প্রধান ডিউটি হলো, রাতে হ্যান্ডবল স্টেডিয়াম দেখভাল করা।
লকডাউনের কারণে যানবাহন সংকট। বাসায় যেতে ভাড়া লাগে অনেক। তাই পকেটে টাকা না থাকলে মাঝেমধ্যে যানই না। কখনও হেটেই চলে যান স্টেডিয়াম থেকে কাজলা, ঘন্টাখানেক লাগে।
ঈদের দিন তাহলে বউকে রেখেই কাটাবে? ‘না না স্যার। আমি বিকেলের দিকে গিয়ে ওকে নিয়ে আসব। স্টেডিয়াম এবং আশপাশে ঘোরাফেরা শেষে আবার বাসায় দিয়ে আসব। সেভাবেই কালকে বলে এসেছি’- জানালেন রহমান।
ঈদে তো বেশ খরচ হলো তাই না? রহমান জানালেন, ‘হ্যান্ডবল স্টেডিয়াম বোনাস দিয়েছে। ফেডারেশনের কয়েকজন বকসিস দিয়েছেন, সেখানে হয়েছে ৭ হাজার টাকার মতো। ফুটবলের প্রেসবক্সে কাজ করি। বাফুফে থেকে তিনটি বিল পেয়েছি। সোহাগ স্যার (বাফুফে সাধারণ সম্পাদক মো. আবু নাইম সোহাগ) নিজে আমাকে বকসিস দিয়েছেন। সবকিছু দিয়ে আমি ২৪ হাজার টাকা দেনা পরিশোধ করেছি। বাকি টাকা ঈদের খরচ।’
রহমানের বড় গুণ নিষ্ঠা ও সততা। হ্যান্ডবলে চাকরি করলেও, কাজ করেন ফুটবল নিয়েও। নিজের নামে একটা ফুটবল একাডেমিও আছে। পল্টন ময়দানে অনেকেই ফুটবল প্রশিক্ষণ নেন রহমানের একাডেমিতে। নিজের ফেসবুক আইডিতে নিজের পরিচয় হিসেবে লিখেছেন, প্রতিষ্ঠাতা- আ. রহমান ফুটবল একাডেমি।
রহমানের মতো আরও অনেকে আছেন বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম পাড়ায়। যাদের দিনরাত ওখানেই কাটে। বিয়ে করায় রহমান এখন সংসারী।
‘এখন সংসার আছে। অনেক কষ্ট হয়। কিন্তু কাউকে বলি না। লকডাউন শুরুর পর সমস্যায় পড়ে কয়েকজনের কাছ থেকে টাকা ধার করেছিলাম। বিভিন্ন বিল বেতন পেয়ে তা পরিশোধ করেছি। ঈদের পরই শুরু হবে হাতখালি পথ চলা। স্যার দোয়া কইরেন’- বলছিলেন রহমান।
‘অবশেষে রাজধানীতে স্বস্তির বৃষ্টি’
অবশেষে ঢাকায় হয়েছে বহু প্রতীক্ষিত স্বস্তির বৃষ্টি। টানা একমাস দাবদাহের......বিস্তারিত