TadantaChitra.Com | logo

২৫শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

দখলবাজি মাদক, অবৈধ অস্ত্র ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িত আনিস!

প্রকাশিত : অক্টোবর ২৮, ২০১৯, ১৬:০২

দখলবাজি মাদক, অবৈধ অস্ত্র ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িত আনিস!

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আনিসুর রহমান ‘ভেজালের জমি’ দখলবাজিতে সেরা বললেও কম হবে। নিরীহ মানুষের জমি তার জন্য আর্শিবাদে রূপ নিয়েছে। জানা গেছে, ত্রুটিযুক্ত নথিপত্র ও বিবাদপূর্ণ ওইসব জমি নানা কৌশলে দখলে নিতে তার রয়েছে নিজস্ব সিন্ডিকেট। ওই সিন্ডিকেট দিয়ে রাজধানীর উত্তর গোড়ান, দক্ষিণ গোড়ান, পূর্ব গোড়ান, দক্ষিণ বনশ্রীসহ আশপাশ এলাকায় বেশ কয়েকটি জমি ও বাড়ি দখলে নিয়ে বিক্রিও করেছেন তিনি। এছাড়া এলাকায় মাদক কারবার ও অবৈধ অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগও পাওয়া গেছে আনিস ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে। স্থানীয়রা বলছেন, এলাকার রাস্তাঘাট উন্নয়ন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখাসহ কাউন্সিলরের যে রুটিন কাজ সেগুলো বাদ দিয়ে এসব নিয়ে ব্যস্ত কাউন্সিলর আনিস ।

এদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া রিমান্ডে আনিস সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, খিলগাঁও-গোড়ান এলাকায় মাদকের কারবার, অবৈধ অস্ত্র ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে আনিস জড়িত। মতিঝিলের ক্লাবপাড়ায় ক্যাসিনো পরিচালনায়ও আনিস জড়িত। এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে আনিস বলেন , ‘আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে অনেকে অনেক কথা ছড়াচ্ছে। এ জামানায় কোনো বাড়ি বা জমি দখলের কোনো সুযোগ নেই।’

স্থানীয়রা জানান, পূর্ব গোড়ানের শেষ মাথার এলাকাটি ‘মাদানী ঝিল’ নামে পরিচিত। বর্তমানে সেখানে ঝিলের কোনো চিহ্ন নেই। পুরোটাই ভরাট করে প্লট বানানো হয়েছে। এ কাজ করেন সাবেক কাউন্সিলর বাচ্চু সিকদার ও বর্তমান কাউন্সিলর আনিসসহ ভূমিদস্যুদের একটি চক্র। ওই ঝিলের কিছু অংশ জনৈক তাহেদ আলী ওরফে মাদানীর, কিছু অংশ খাস ও অন্য কয়েকজনের। তাহেদ আলীর ডাকনামে এলাকাটি ‘মাদানী ঝিল’ নামে পরিচিতি।

১২/৩/এ, পূর্ব গোড়ানে তাহেদ আলী ১৯৭৪ সালে ঝিলের ৬০ শতাংশ জমি ক্রয় করেন। তবে সিটি জরিপে তার জমি ওঠে মাত্র ৬ শতাংশ। বাকি ৫৪ শতাংশ ওঠে অন্য একজনের নামে। এই নিয়ে রেকর্ড কারেকশন মামলা-পাল্টা মামলার জের ধরে বিষয়টি স্থানীয় কাউন্সিলর আনিসের কাছে যায়। এরপর কৌশলে তার সিন্ডিকেট ৬-৭ বিঘা আয়তনের পুরো ঝিলটি দখল করেছে। সেটাকে প্লট বানিয়ে বিক্রির কাজ চলছে। তাহেদ আলীর মৃত্যুর পর তার দুই ছেলেকে সেখানে ৯ কাঠা আয়তনের দুটি প্লট দেওয়ার মৌখিক প্রতিশ্রুতি দেন আনিস। তারা ৯ কাঠা একসঙ্গে চান। কিন্তু সেটা না দিয়ে তাদের দুই কর্নারে আড়াই কাঠা করে পাঁচ কাঠার দুটি প্লট দিয়ে পুরো ঝিলটি দখল করে নেন আনিস ও তার লোকজন। এসব দখলের ভাগবাটোয়ারা নিয়ে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রুবেলের সঙ্গে তার বিরোধ তৈরি হয়।

আনিস বর্তমানে যে বাড়িতে থাকেন সেটি দক্ষিণ গোড়ানের ৪১১/এ নম্বর হোল্ডিংয়ে। বাড়িটি ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ের ঠিক বিপরীতে। স্থানীয়দের অভিযোগ, এই বাড়ির জমিও দখল করা। এই জমিতে আটতলা বাড়ি করে বেশিরভাগ ফ্ল্যাট বিক্রিও করা হয়েছে। পূর্ব গোড়ান ৮ নম্বর গলির মাথায় শাহী মসজিদের সামনে আরেকটি জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে আনিসের বিরুদ্ধে। স্থানীয়রা জানায়, আনিস জমিটি দখল করে সার্জেন্ট পাটোয়ারী নামে এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করেন। সেখানে তিনি ফ্ল্যাট বাড়ি করেছেন। ওই বাড়িতে সবসময় আনিসের ক্যাডাররা পাহারা দেয়।

দক্ষিণ বনশ্রীর এল ব্লকের ১০০ নম্বর সড়কের ৩৫ নম্বর বাড়িটির জমি দখলের অভিযোগও রয়েছে আনিসের বিরুদ্ধে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, আনিস তার নিজস্ব ক্যাডার মতিন, কাঠ ফারুক ও শফিকের মাধ্যমে জমিটি দখল করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাড়িটির এক নিরাপত্তাকর্মী জানান, আবুল খায়ের মোল্লা নামে এক ব্যক্তিকে মালিক সাজিয়ে প্রবাসী এক ব্যক্তির কেনা জমিটি দখল করে নেওয়া হয়। জমিতে সাততলা একটি বাড়ি করা হচ্ছে। খায়ের মোল্লার ছেলে হাসিনুল হাসান একটি ফ্ল্যাটে থাকেন। গোড়ান হাওয়াই গলির নির্মাণাধীন ভবনের কয়েকটি ফ্ল্যাট দখলের অভিযোগও রয়েছে আনিসের বিরুদ্ধে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ডেভেলপার জানান, আনিস কাউন্সিলর হওয়ার পরই গোড়ানে নির্মাণাধীন ভবনের ডেভেলপারদের ডেকে নেন। তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা করে আদায় করেন। গোড়ান এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি রাস্তায় ভাঙাচোরা ও খানাখন্দে ভরা। একই অবস্থা দক্ষিণ বনশ্রী, তিতাস রোডসহ আশপাশের সব সড়কেই। এসব রাস্তায় প্রতিদিনই দুর্ঘটনার শিকার হয় স্থানীয়রা। তারা জানায়, এসব নিয়ে বহু অভিযোগ করেও প্রতিকার মেলেনি। স্থানীয়রা আরও জানায়, গোড়ান আদর্শবাগ, নবাবীমোড়, দক্ষিণ গোড়ান ও পূর্ব গোড়ান, নূরবাগসহ বিভিন্ন এলাকায় পানির সমস্যা দীর্ঘদিনের। সমাধানের কথা বলে আনিসের সহযোগী তাহসীন মোস্তাফিজুর রহমান, হাবীব মোস্তফা রাজন, রাব্বী ও সোহেলসহ কয়েকজন দফায় দফায় বিভিন্ন বাড়ি থেকে টাকা তোলেন। কিন্তু পানি সমস্যার সমাধান হয়নি।

খিলগাঁও থানা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, গোড়ান ও নন্দীপাড়াসহ আশপাশ এলাকায় যারা ইয়াবাসহ মাদক কারবারে জড়িত তাদের অধিকাংশই আনিসের ঘনিষ্ঠ। পানির জারের মুখে কৌশলে ইয়াবা পাচারের তথ্যও পেয়েছে পুলিশ। এসব বিষয়ে তদন্ত চলছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের জনকর্মকর্তা জানান, গ্রেপ্তার যুবলীগ নেতা সম্রাট ও খালেদের অবৈধ অস্ত্রের ভান্ডারও আনিস ও তার লোকজনের নিয়ন্ত্রণে। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, আনিসের সহযোগী হিসেবে তাহসীন, সোহেল, রাজন, রাব্বী অবৈধ অস্ত্র রাখে। তারা প্রায়ই এলাকায় অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয়।

স্থানীয়রা জানায়, আনিসের বিরুদ্ধে অস্ত্রবাজির অভিযোগ বহু পুরনো। ২০১৫ সালের ২৫ এপ্রিল নির্বাচনের প্রচার চলাকালে গোড়ান টেম্পোস্ট্যান্ড এলাকায় ২ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি-সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী হাবিবা চৌধুরীর মিছিলে গুলির করে আনিসের ক্যাডার বাহিনী। ওই ঘটনায় ওয়ার্ড বিএনপির ওই সময়ের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নাজমুল হুদা ওরফে আরজু গুলিবিদ্ধ হন। এছাড়া ২০১৫ সালে মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে বিরোধের জেরে সেগুনবাগিচায় অন্য ছাত্রলীগ নেতা লিয়াতক সিকদারকে লক্ষ্য করে আনিসের নেতৃত্বে গুলি ছোড়া হয়। তার গাড়িও ভাঙচুর করা হয়।

আনিসের ঘনিষ্ঠরা জানায়, তিনি ১৯৯৯ সালে ২ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ২০০২ সালে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ২০১০ সালে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সভাপতি হন। চার বছর এ পদে ছিলেন। ২০১৫ সালে তিনি কাউন্সিলর হন। এখন তিনি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি হওয়ার জন্য জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, কাউন্সিলর হওয়ার পর আনিস স্থানীয় সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরীকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ঢাকা-৯ আসনে মনোনয়ন চান।

এসব বিষয়ে আনিসের তিনি বলেন, ‘আমি যে বাড়িতে থাকি সেখানে তিনটি ফ্ল্যাটে আমরা পাঁচ ভাই থাকি। ফ্যালকন গ্রুপ নামে একটি ডেভেলপার কোম্পানি ভূমি মালিকের সঙ্গে চুক্তি করে ওই বাড়ি তৈরি করেছে। এ জামানায় আমার পক্ষে এই বাড়ি কেন; কোনো বাড়ি বা জমি দখল করা সম্ভব নয়। মাদানী ঝিল বা অন্য কোনো জমি দখলেও আমার সম্পৃক্ততা নাই। তিনি আরও বলেন, ২০১৭ সালে ‘জনতার মুখোমুখি জনপ্রতিনিধি’ অনুষ্ঠানে আমার ওয়ার্ডকে মাদকমুক্ত হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এছাড়া খালেদ মাহমুদের স্বীকারোক্তিতে তার অপরাধজগৎ নিয়ন্ত্রণে আমার সহযোগিতার যে কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেটা ঠিক নয়। বাস্তব অবস্থা হচ্ছে, আমি মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সভাপতি থাকার সময় থেকেই তার সঙ্গে বিরোধ চলছে। খালেদ আমার ওয়ার্ডে বিভিন্ন সময়ে অপরাধ করার চেষ্টা চালালে আমি বাধা দিই। এ কারণে তিনি আমাকে ফাঁসাতে আমার নাম বলে থাকতে পারেন।

এলাকার রাস্তাঘাটের বেহাল দশা সম্পর্কে বলেন, আমার ওয়ার্ডে এর আগে প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন উন্নয়নকাজ করেছি। এখন দক্ষিণ বনশ্রী, তিতাস রোডসহ বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৭০ কোটি টাকার উন্নয়নকাজ চলছে। সব কাজ একযোগে চলার কারণে কিছু রাস্তা কাটা হয়েছে। কথা দিচ্ছি, ডিসেম্বরের মধ্যে সব রাস্তা পাকা হয়ে যাবে।

স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি পদ সম্পর্কে আনিস বলেন, ‘এটা নির্ধারণ করবেন আপা (শেখ হাসিনা)। আমি ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছি। ভালো কাজ করলে তিনি আমার মূল্যায়ন করবেন। এটাই আমার প্রত্যাশা।’ আসন্ন কাউন্সিল ও ডিএসসিসি নির্বাচনে তাকে হেয়প্রতিপন্ন করতে একটি মহল অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে পাল্টা অভিযোগ করেন তিনি।

এছাড়া মহনগর নগর দক্ষিন ছাত্রলীগের সভাপতি থাকা অবস্থায় ব্যাপক জমিন দখল করেছেন আনিস এমনটাই জানিয়েছেন সাবেক ঢাকা ডিসি অফিসের অর্পিত সম্পাদের দায়িত্ব থাকা নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মমতাজ বেগম। তিনি বলেন, আমি যে সময় দায়িত্ব ছিলাম সাবেক মহানগর দক্ষিন ছাত্রলীগ সভাপতি আনিস দখল ছাড়া কিছুই বুঝতেন না।


যোগাযোগ

বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যলয়

কাব্যকস সুপার মার্কেট, ৩ ডি কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫।

মোবাইলঃ ০১৬২২৬৪৯৬১২, ০১৬০০০১৪০৪০

মেইলঃ tadantachitra93@gmail.com, tchitranews@gmail.com

সামাজিক যোগাযোগ

Web Design & Developed By
A

তদন্ত চিত্র কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েব সাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি।