TadantaChitra.Com | logo

১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

গুলশানে ভুয়া কাগজপত্রে আদালতের নির্দেশ অমান্য জমি দখল!

প্রকাশিত : অক্টোবর ২৮, ২০১৯, ১৬:২০

গুলশানে ভুয়া কাগজপত্রে আদালতের নির্দেশ অমান্য জমি দখল!

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ খোদ রাজধানীর গুলশানে ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে এবং আদালতের সঙ্গে প্রতারণা করে আড়াইশ কোটি টাকার জমি দখল করে রেখেছেন বিএনপি নেত্রী ও সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ফাহিমা নাসরিন মুন্নী এবং তার স্বামী ডা. আলী আসকার কোরেশী।

পাওয়ার অব অ্যাটর্নি (আমমোক্তারনামা) ভুয়া প্রমাণিত হলেও ওই জমি দখল নিতে পারছেন না ভুক্তভোগী ডা. এএইচ মো. আলী হায়দার কোরেশী। মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র ‘মুক্তি ক্লিনিক’-এর ব্যানারে ওই জমি দখল করে রাখা হয়েছে। ওই ক্লিনিকে সেবার নামে চলে নানা অসামাজিক কার্যকলাপ। জমিটি আগামী ৭ নভেম্বরের মধ্যে ভুক্তভোগীকে বুঝিয়ে দেওয়ার রায় দিয়েছেন ঢাকা প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালতের বিচারক উৎপল ভট্টাচার্য।

অভিযোগ রয়েছে, গত ৭ অক্টোবর ঘোষিত এ রায়কে পাত্তা দিচ্ছেন না ডা. আলী আসকার কোরেশী। আর তার পেছনে নেপথ্যে থেকে কাজ করছে অনেক প্রভাবশালী। তিনি বলছেন, টাকার বিনিময়ে রায় কিনেছেন বাদীপক্ষ। একই সঙ্গে মুক্তি ক্লিনিকের নামে অভিযোগও অস্বীকার করেন তিনি।

মামলার নথি সূত্রে ও সরেজমিনে দেখা গেছে, ১৯ বছর ধরে গুলশান-২-এর ৪৯ নম্বর সড়কের ২২ কাঠা (২ নম্বর বাড়ি) জমির ওপর ‘মুক্তি ক্লিনিক’ পরিচালনা করছেন ডা. আলী আসকার কোরেশী। জমিটি দখল করার জন্য একপর্যায়ে ১৯৯৮ সালের একটি পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দেখিয়ে জমির মালিকানা দাবি করে বসেন তার স্ত্রী বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফাহিমা নাসরিন মুন্নী। তবে গত ৭ অক্টোবর ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালতের দেওয়া রায়ে এই পাওয়ার অব অ্যাটর্নি ভুয়া প্রমাণিত হয়েছে। রায়ে বলা হয়, নথিদৃষ্টে আরও দেখা যায় যে, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি নম্বর ৮১৩/৯৮ যেখানে শাহিন কোরেশী মিসেস ফাহিমা নাসরিন অর্থাৎ ২ নম্বর বিবাদীর স্ত্রীকে আমমোক্তারনামা (পাওয়ার অব অ্যাটর্নি) দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছিল তা যাচাই করার জন্য বাদীপক্ষ চিঠি দিলে বাদী বরাবর চিঠির মাধ্যমে লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন প্রথমে গত ৬ আগস্ট ২০১৩ তারিখের চিঠিতে, পরে ১৬ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখের চিঠিতে ওই আমমোক্তারনামা সঠিক ছিল না বলে উল্লেখ করেন।

রায়ে আরও বলা হয়, হাইকমিশনের এই চিঠি দুটির বিষয়ে ২ নম্বর বিবাদী মৌখিক আপত্তি দেন। যেহেতু লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের পত্র দুটি স্বাক্ষর ও সিলযুক্ত, সেহেতু ওই পত্র দুটি অবিশ^াসের আইনগত কোনো সুযোগ নেই। যা থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ হয়, বিবাদীপক্ষ তাদের দাবির সমর্থনে কাগজপত্র দাখিল না করে ১৯৯৯ সাল থেকে বিভিন্নভাবে মোকদ্দমাটিকে দীর্ঘায়িত করেন।

রায়ের আদেশের অংশে বলা হয়, ‘মোকদ্দমাটি বিবাদীপক্ষের বিরুদ্ধে দোতরফা সূত্রে বিনা খরচায় ভাড়াটিয়া উচ্ছেদ ও বকেয়া ভাড়া আদায়ের ডিক্রি হইল। আগামী ৩০ দিনের মধ্যে বিবাদীপক্ষকে নালিশি তফসিল বর্ণিত সম্পত্তির দখল বাদীপক্ষ বরাবর অর্পণ করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হইল। একই সঙ্গে বকেয়া ভাড়া ৭৫ লাখ ৬০ হাজার টাকাও বিবাদীপক্ষকে বাদী বরাবর পরিশোধ করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হইল।

এ সংক্রান্ত আরও কয়েকটি মামলার নথিতে দেখা যায়, ১৯৬৯ সালে ডা. এএইচ মো. আলী হায়দার কোরেশী স্ত্রী শাহিন কোরেশীর নামে গুলশানের ওই ২২.২ কাঠা জমি কেনেন। পরে ১৯৭৫ সালে ডা. শাহিন কোরেশীর সঙ্গে তার বিবাহবিচ্ছেদ হয়। এরপর জমির মালিকানা ফিরে পেতে ’৭৯ সালে ঢাকার যুগ্ম জেলা জজ আদালতে বেনামি সম্পত্তির মামলা করেন আলী হায়দার কোরেশী।

দীর্ঘ শুনানির পর ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ঢাকার অষ্টম যুগ্ম জেলা জজ আদালতের রায়ে জমিতে ষোলো আনা মালিকানা প্রতিষ্ঠা হয় আলী হায়দার কোরেশীর। পরে ওই বছরই এ রায়ের বিরুদ্ধে ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আপিল করে পক্ষে রায় পান তার সাবেক স্ত্রী শাহিন কোরেশী। ২০১৪ সালে জজকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন (৩৮৫৩/২০১৪) আলী হায়দার। শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ২৩ আগস্ট বিচারপতি মো. মইনুল ইসলাম চৌধুরীর একক হাইকোর্ট বেঞ্চ শাহিন কোরেশীর পক্ষে জজকোর্টের দেওয়া রায় বাতিল করে যুগ্ম জেলা জজ আদালতের রায় বহাল রাখেন। এর মধ্যে ২০১৬ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর লন্ডনে মারা যান শাহিন কোরেশী। তবে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালে সুপ্রিমকোর্টের একটি সিভিল আপিল (২০৫/২০১৮) দায়ের করা হয়। যেখানে আবেদনকারী হিসেবে রয়েছে মৃত শাহিন কোরেশীর নাম। শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ ওই আপিল আবেদনটিও খারিজ করে দিয়ে হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন।

মুক্তি ক্লিনিকে গিয়ে এ বিষয়ে জানতে চাইলে দখলকারী আলী আসকার কোরেশী বাড়িটির মালিক নন তা স্বীকার করলেও আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘পয়সা দিয়ে এ রায় কেনা হয়েছে।’ সম্পদটির আমমোক্তারনামা দেখাতে পারবেন কি না- এ প্রসঙ্গে আলী আসকার কোরেশী বলেন, ‘আমি তো কাগজ নিয়ে বসে নেই। যেখানে দেখানোর সেখানে দেখানো হবে।’ ভুক্তভোগী আলী হায়দার কোরেশী এখন লন্ডনপ্রবাসী। তার ছোটভাই আলী আসলাম কোরেশী বলেন, ‘১৯৬৯ সালের দিকে গুলশানের এ জমিটা আলী হায়দার কোরেশী তার স্ত্রী শাহিন কোরেশীর (কনভার্টেড মুসলিম, আগের নাম ছিল কমলা রানী রায়) নামে জমিটি কেনেন। ’৭০ সালে তিনি স্কলারশিপ নিয়ে লন্ডন চলে যান।

তারপর তারা একটি ওষুধ কোম্পানিকে বাড়িটি ভাড়া দেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় শাহিন কোরেশীও লন্ডন গিয়ে স্বামীর সঙ্গে যোগ দেন। এরপর মামলা হলে ’৭৯ সালে আলী হায়দার জমিটির আমমোক্তারনামা আমাকে দেন।’ আলী আসলাম কোরেশী আরও বলেন, ‘১৯৭৯ সালে বাড়িটি যাতে কেউ বিক্রি করে দিতে না পারে সেজন্য আদালতে একটি মামলা করা হয়। আদালত ইনজাংশন জারি করে। ৪০ বছর ধরে সেই মামলা চলে। সুপ্রিমকোর্ট রায় দেন বাড়ির মালিক আলী হায়দার কোরেশী। ১৯৯৩ সালে বাড়িটি ভাড়া দেওয়া হয় মুক্তি ক্লিনিকের কাছে। তারা ছয় মাস ভাড়া দেয়।

একসময় ভাড়া বন্ধ করে দিয়ে ফলস কাগজ তৈরি করে মালিকানা দাবি করে। আমরা তখন বাড়ি থেকে ভাড়াটিয়া উচ্ছেদের মামলা করি। আদালত আমাদের পক্ষে রায় দিয়েছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘তারা এখনও জমিটিতে আমাদের যেতে দিচ্ছেন না। ভয়ভীতি ও হুমকি দিচ্ছেন। কোর্টের আদেশ আছে। ৩০ বছর ধরে যন্ত্রণা দিয়ে যাচ্ছেন। দখল করে আছেন। আলী আসকারের স্ত্রী এর সঙ্গে জড়িত। আমাদের সবসময় হুমকির মুখে রেখেছেন। এখন তিনি ভদ্রভাবে চলে গেলেই হয়। কিন্তু তিনি যেতে চান না।’ এক প্রশ্নের জবাবে আলী আসলাম কোরেশী বলেন, ‘হুমকির বিষয়ে অনেক জিডি করা হয়েছে। বহুবার হুমকি দিয়েছেন। কিন্তু পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।’

অনুসন্ধানে জানা গেছে, জমিটির মালিকানা দাবিকারী অ্যাডভোকেট ফাহিমা নাসরিন মুন্নী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন টেলিভিশনের টক শোয় বিএনপি-জামায়াতের এজেন্ডাভিত্তিক বক্তব্য দিয়ে আসছেন। সরকারের বিরুদ্ধে সবসময় সমালোচনায় ব্যস্ত থাকেন। এ ছাড়া গুলশানের ওই জমিতে স্থাপিত মুক্তি ক্লিনিকের বিরুদ্ধেও রয়েছে অভিযোগের পাহাড়। মাদকাসক্তি নিরাময়ের জায়গায় চলছে মাদক ব্যবসা। চিকিৎসার নামে রোগীদের জিম্মি করে স্বজনদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা।


যোগাযোগ

বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যলয়

কাব্যকস সুপার মার্কেট, ৩ ডি কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫।

মোবাইলঃ ০১৬২২৬৪৯৬১২, ০১৬০০০১৪০৪০

মেইলঃ tadantachitra93@gmail.com, tchitranews@gmail.com

সামাজিক যোগাযোগ

Web Design & Developed By
A

তদন্ত চিত্র কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েব সাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি।