নিজস্ব প্রতিবেদকঃ করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রোধ করতে সারা দেশে ছুটি আর বিধিনিষেধ প্রয়োগ করায় সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছে সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষ। কাজের জন্য বাইরে যেতে না পারায় পরিবার নিয়ে অনেক শ্রমজীবী মানুষই কষ্টের মধ্যে দিনাতিপাত করছে।
এলাকার এসব দরিদ্র ও মেহনতি মানুষের পাশে আশার আলো হয়ে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে অনলাইনভিত্তিক কমিউনিটি সংগঠন বৃহত্তর খিলগাঁওবাসী নামের একটি গ্রুপ। এলাকার বাসিন্দাদের কাছেও এই অনলাইনভিত্তিক কমিউনিটি গ্রুপ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এ গ্রুপের সদস্যদের মধ্যে স্থানীয় তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়ার বড় একটি মাধ্যম হয়ে উঠেছে অনলাইনভিত্তিক এ কমিউনিটি।
তৈরি হয়েছে ‘ভার্চ্যুয়াল প্রতিবেশী’। কোন নির্দিষ্ট কাজের মধ্যেই এই গ্রুপ সীমাবদ্ধ নয়’ এলাকার বাসিন্দা ও গ্রুপ সদস্যদের যে কোন প্রয়োজনে পাশে থাকার অঙ্গিকার নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে অনলাইনভিত্তিক বৃহত্তর খিলগাঁওবাসী নামের এই গ্রুপটি। কেউ নির্দিষ্ট পণ্য কোথায় পাওয়া যাবে জানতে চাইছেন। এভাবে এক সদস্য অন্যজনের প্রয়োজন মেটাচ্ছেন।
গ্রুপের অ্যাডমিনরা জানান, করোনাভাইরাসের এই সময়ে গ্রুপগুলোয় সদস্যদের অংশগ্রহণ অনেক বেড়ে গেছে। লকডাউনের কারণে অনেকে ঘর থেকে বের হতে না পেরে তথ্যের জন্য নির্ভর করছেন গ্রুপগুলোর ওপর। কোনো কোনো গ্রুপ গঠনই হয়েছে এই পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে। তাঁরা অনলাইনে একত্র হয়ে এলাকাভিত্তিক সামাজিক কাজেও জড়িয়ে পড়ছেন।
বৃহত্তর খিলগাঁওবাসী গ্রুপের অ্যাডমিন মো. মশিউর রহমান জানান, লকডাউনের কারণে বাসায় এখন গৃহের কাজের সহকারীকে ছুটি দিয়েছেন। ঘরের মেঝে নিজেদেরই মুছতে হয়। তাই আমাদের এক সদস্য মপ কিনতে চেয়ে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন। পোস্টটি দেখে একজন ব্যবসায়ী জানান, তাঁর দোকানে মপটি আছে। ওই ব্যবসায়ী নির্দিষ্ট সময় উল্লেখ করে জানান, তিনি দোকান খুলে মপটি বের করে রাখবেন। পোস্টদাতা যেন ওই সময়টায় এসে নিয়ে যান।
মশিউর রহমান জানান, বেশ অনেক দিন থেকেই এলাকাবাসীদের পক্ষ থেকে এমন একটি অনলাইনভিত্তিক গ্রুপ করার আলোচনা হচ্ছিল। তবে করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে গ্রুপটি দ্রুত গঠনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। ২ এপ্রিল তিনি গ্রুপটি খোলেন। বর্তমান পরিস্থিতির কারণে গ্রুপটির সদস্যরা বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রম শুরু করেছেন।
তিনি জানান, খিলগাঁও কুমিল্লা হোটেলের পেছনের বস্তিতে চার শ পরিবারের মধ্যে ত্রাণ দেওয়া হয়েছে। এতে গ্রুপের ৫০ জন সদস্য অর্থ দিয়েছেন। ২০০ খাবারের প্যাকেট বিতরণ করা হয়েছে। ১২টি ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) পিপলস হাসপাতালে দান করা হয়েছে। এ ছাড়া জাগরণী ক্রিকেট একাডেমিতে স্থাপিত অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্পের মাধ্যমে এলাকাবাসীকে চিকিৎসা–সংক্রান্ত ফ্রি পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এই স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমে রয়েছেন চারজন চিকিৎসক ও কয়েকজন স্বাস্থ্যকর্মী। নিবন্ধনের মাধ্যমে রোগীদের জন্য এমন সেবা তাঁরা প্রতি সপ্তাহে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন। এ ছাড়া এলাকার একজন ব্যবসায়ী নির্ধারিত মূল্যে জরুরি অ্যাম্বুলেন্স সেবা দিতে রাজি হয়েছেন।
বৃহত্তর খিলগাঁওবাসী গ্রুপের সদস্য চিকিৎসক মুজাহিদুল হক মেডিকেল ক্যাম্পটি পরিচালনা করছেন। আট মাস আগে তিনি লন্ডন থেকে দেশে ফেরেন। আবার চলে যাওয়ার প্রস্ততি নিচ্ছেন। তবে এর ফাঁকেই বর্তমান পরিস্থিতিতে ফ্রি চিকিৎসা পরার্মশ সেবায় যোগ দিয়েছেন।
মুজাহিদুল হক বলেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে ঢাকাজুড়ে তাঁদের একটি টিম স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করছেন। কিছু দিন আগে বৃহত্তর খিলগাঁওবাসী চিকিৎসাসেবা কার্যক্রমে যোগ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ, কিডনিসহ কিছু অসুস্থতা রয়েছে, যেগুলোতে নিয়মিত বিরতিতে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হয়। এখন অনেক রোগীরা বাসা থেকে বের হতে পারছেন। তাঁরা নিয়মিত যেসব চিকিৎসকের কাছে যান, তাঁদের অনেকেই প্রাইভেট প্র্যাকটিস করছেন না, সেসব রোগী খুব বিপাকে পড়েছেন। কয়েকদিন আগে এমন ১৮ জন রোগীকে ক্যাম্পে ফ্রি পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, তাঁর ফোন নম্বরটি হটলাইন নম্বর হিসেবে রাখা হয়েছে। রোগীদের বলা হয়েছে তাঁরা ফোনে বা অনলাইনেও তাঁর কাছ থেকে পরামর্শ নিতে পারবেন।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, দুর্যোগকালীন অনলাইনভিত্তিক কমিউনিটি ক্লাব বা গ্রুপগুলোর মাধ্যমে মানুষের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছানো সম্ভব। একটি পোস্টেই একজন পেতে পারেন এই সেবা।
স্বেচ্ছাসেবী অনলাইনভিত্তিক কমিউনিটি এ গ্রুপ আরো এক এডমিন তানিফ উর রহমান (তানু) প্রত্যাশা করেন, বৈশ্বিক ও জাতীয় পরিপ্রেক্ষিতে এই ক্রান্তিলগ্নে সমাজের প্রতিটি সামর্থ্যবান ও বিত্তবান মানুষ নিজ নিজ অবস্থান থেকে সাধ্যনুযায়ী এই সহায়হীন মানুষের পাশে দাঁড়াবে এবং মানবিকতাকে জয়ী করবে।
‘ভোলায় অস্ত্রসহ ৩ দস্যু আটক, ২ অপহৃত উদ্ধার’
ভোলায় জলদস্যুতার অভিযোগে ৩ দস্যুকে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।......বিস্তারিত